ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মদিবসে ফুটপাথ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

কর্মদিবসে ফুটপাথ

রাজধানীর ফুটপাথ পথচারী বান্ধব করতে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় অবৈধ দোকানপাট এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ডিএসসিসি। অভিযান চলাকালে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে এসব স্থানে বিক্ষোভ মিছিলসহ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে হকাররা। সাপ্তাহিক কর্মদিবসে রাজধানীর পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে অফিস ছুটির দেড় ঘণ্টা পর অবস্থান ভেদে হকাররা ফুটপাথে ব্যবসা করতে পারবেন- এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকন। রবিবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন করছিল হকাররা। মেয়র অবশ্য বলেছেন, সিদ্ধান্ত না মানলে ফুটপাথে কাউকে বসতে দেয়া হবে না। জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্তটি সঠিক এবং সময়োপযোগী তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই পেশার সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য হকারের জন্য দিনের উল্লেখযোগ্য সময়ে বিকল্প কাজের ব্যবস্থার বিষয়টিও ভাবতে হবে। তবে বিলম্বে হলেও এই ধরনের সিদ্ধান্ত রাজধানীর যানজট লাঘবে আপাত স্বস্তি আসবে বলে ধারণা করা যায়। কারণ, কর্মব্যস্ত ঢাকা শহরে কর্মদিবসগুলো মানুষকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। মানুষের চলাচল নির্বিঘœ ও নগরবাসীকে যানজটমুক্ত রাখতে হলে ফুটপাথ দখলমুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। একথা সত্য যে, রাজধানীর সড়কগুলোর যানজট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ যত্রতত্র হকারদের দোকানপাট। এসব অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ফুটপাথগুলো দখলে থাকায় যারপরনাই ভোগান্তির শিকার হয় পথচারীরা। যানজটের নিগড়ে পিষ্ট মানুষের কাছে এ যেন গোদের ওপর বিষফোড়া। এ জন্য ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখার দাবি দীর্ঘদিনের। ফুটপাথ দখলমুক্ত করলে মেয়র যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সাধুবাদ যোগ্য। তবে ফুটপাথ দখলমুক্ত করা নিয়ে অতীতে হকারদের উচ্ছেদের ইঁদুর-বেড়াল খেলা কম হয়নি। সকালে উচ্ছেদ তো বিকেলে আবার বহালÑ এবার এই ধরনের পরিস্থিতি যেন না হয়। এর স্থায়ী সমাধান হওয়া জরুরী। রাজধানীর মোট দুই হাজার ২৮৯.৬৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে অনেকাংশই নানা শ্রেণী পেশার মানুষের দখলে। এই শহরে যে পরিমাণ জমি রয়েছে তার জন্য ২৫ শতাংশ সড়ক দরকার। সেখানে অলিগলিসহ আছে মাত্র ৭ শতাংশ। মূল সড়ক আছে ৩ শতাংশ। এই ৩ শতাংশের ৩০ শতাংশ দখল করে অবৈধ দখলদাররা। যার মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে হকার। রাজধানীর ৭০ শতাংশ ফুটপাথ প্রাইভেট গাড়ি দখল করে রেখেছে। অবাক করা বিষয়, রাজধানীর অধিকাংশ সড়কের পাশে যেসব দোকান ও আবাসিক, অনাবাসিক ভবন রয়েছে তাদের কোন পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে সড়কের অর্ধেকটা তারা দখল করে গাড়ি পার্কিং করে। হকারদের পুনর্বাসন এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের সুবিধার্থে কয়েক বছর আগে চালু করা হয়েছিল হলিডে মার্কেট। চালুর পর পরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এ মার্কেটগুলো। ফুটপাথও অনেকটা দখলমুক্ত হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণ ও অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় এসব মার্কেট। ফুটপাথ আবারও হকারদের দখলে চলে যায়। কিন্তু দিনের পর দিন এভাবে চলতে পারে না। এ জন্য দরকার সুস্পষ্ট নীতিমালা। সবার আগে দরকার হকার পুনর্বাসনের মানবিক দিকটি। কারা প্রকৃত হকার তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। এরপর তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অভিযোগ আছে, হকারদের ফুটপাথের ব্যবসা যতটা না তাদের জন্য, তার চেয়ে বেশি যারা হকারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে থাকে তাদের জন্য। আর সব সময়ই হকার উচ্ছেদে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সুবিধাভোগী এই চক্রটি। এ কারণেই সমস্যাটি জিইয়ে রাখা হয়। খোদ মেয়রের বক্তব্যেও এই তথ্যটি এসেছে। পথচারীদের জন্য দখলমুক্ত ফুটপাথ সময়ের দাবি। ফুটপাথ দখলমুক্ত করা পরিকল্পিত ঢাকা নগরী গড়ে তোলারই একটি অংশ। ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের এই উদ্যোগটি সফল হলে, শহরের অন্যত্রও একই সিদ্ধান্ত বহাল রাখা যেতে পারে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন এটা সবার প্রত্যাশা।
×