ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজাল সার কারবারিরা অপ্রতিরোধ্য

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

ভেজাল সার কারবারিরা অপ্রতিরোধ্য

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ভেজাল টিএসপি পটাশ আর দস্তায় সয়লাব হয়ে গেছে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া বাজার। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল সার শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। বিশেষ করে চিহ্নিত ছয় ব্যবসায়ী মুখোশধারী স্টাইলে ভেজাল সারের রমরমা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। বলা চলে নওয়াপাড়ায় চিহ্নিতরাই রয়েছে দাপটের সঙ্গে। দৃষ্টি নন্দন বিভিন্ন প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে নানা আইটেমের ওই সব ভেজাল সার অথচ উপজেলা কৃষি অফিস অজ্ঞাত কারণে দিনের পর দিন নীরবতা পালন করে যাচ্ছে। কয়েকটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অসাধু সদস্যদের মাসোহারায় খুশি রেখে ওই ভেজাল কারবারিরা অতি নিম্নমানের সার সংগ্রহ করছে। সূত্র জানায়, ছাই, পচা শেওলা, পাথরের কুচি, ডিনামাইট পাউডার, পোড়ামাটি, জিপসাম, হাওড় অঞ্চলের শামুকের কুচি, পাথর কুচির সঙ্গে রং দিয়ে সারের সদৃশ বানানো বস্তু সার বলে চালিয়ে দিচ্ছে আর এই ভেজাল সার বিকিকিনি চক্রের মধ্যে জোরেশোরে সমালোচনায় রয়েছে নারায়ণ চন্দ্রের রূপালী এন্টারপ্রাইজ, ফরহাদ হোসেনের একতা এন্টার প্রাইজ, ফারুক হোসেনের এশিয়া এন্টার প্রাইজ, আব্দুল গনি মিয়ার নাজ ট্রেডিং, বহুলালোচিত মাহিন ট্রেডিং ও নওয়াপাড়া নদীর ওপারের একটি গুদাম। সূত্র জানিয়েছে, যশোরের বড় সারের মোকাম খ্যাত নওয়াপাড়ার কয়েকটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান বৈধতার মুখোশ পরে কয়েক বছর ধরে ভেজাল সারে এলাকা সয়লাব করে আসছে আর এই ভেজাল সার বিকিকিনিতে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে নওয়াপাড়ার নারায়ণ চন্দ্রের রূপালী এন্টারপ্রাইজ, ফরহাদ হোসেনের একতা এন্টার প্রাইজ, ফারুক হোসেনের এশিয়া এন্টার প্রাইজ, আব্দুল গনি মিয়ার নাজ ট্রেডিং ও বহু সমালোচিত মাহিন ট্রেডিং। তারা ভেজাল টিএসপি, পটাশ দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ও দানা বিক্রি করছে। অবস্থা এতটাই বেগতিক, এদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের গুদামে লবণের সঙ্গে রং মিশিয়ে এমওপি সার তৈরি করেও প্যাকেট করছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে ৩৬ শতাংশ জিংকের স্থলে ৩/৪, এমনকি শূন্য শতাংশও পাওয়া যায় তাদের প্রতিষ্ঠানে রাখা দস্তা সারে। কৃষি অফিস, থানা পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকটি চক্রকে মাসোহারা দিয়ে থাকে ওই সিন্ডিকেট। সরকার বা কৃষি বিভাগের খাতায় নাম নেই এমন সব ভূইফোঁড় কোম্পানির, সার ও ওই সব দোকান ও তাদের গুদামে পাওয়া মালামালের। আর ওই সার কৃষকরা ক্ষেতে ব্যবহার করে ভাল ফসল না পেয়ে সর্বস্ব খুইয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেও কৃষি অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে। তারা যে ভেজাল সার বিক্রি করছে তাতে ছাই, পচা শেওলা, পাথরের কুচি, ডিনামাইট পাউডার, পোড়ামাটি জিপসাম, হাওড় অঞ্চলের শামুকের কুচি, পাথর কুচির সঙ্গে রং দিয়ে রাতের আঁধারে তৈরি করে ভেজাল জিংক। ডজনখানেক আইটেমের ভেজাল দস্তা বিভিন্ন নামীদামী সব প্যাকেটে ভরে চলছে কারবার। কৃষি বিধি মোতাবেক জিংক মনো ৩৬% জিংকহেপ্টা ২১% থাকার কথা থাকলেও তাদের ভেজাল সারে এর পরিমাণ থাকে কয়েকগুণ কম। অনেক ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৪ থেকে ৭ শতাংশ থাকে। উপজেলা অফিসের কয়েক অসাধু ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চিহ্নিত সদস্যরা ভেজাল সার বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা অনৈতিক সুবিধা আদায় করছেন। আর ওই টাকা তুলে দিচ্ছে ভেজাল সার বিকিকিনি সিন্ডিকেটের এক হোতা। স্থানীয় বৈধ ও সরকারী বিধি মোতাবেক সার বিক্রি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ওই ভেজাল কারবারীদের আটক দাবি করেছেন। একই সঙ্গে পরোক্ষভাবে ভেজাল সার বিক্রিতে সহায়তা করা কৃষি অফিসের জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সূত্র আরও জানিয়েছে, নওয়াপাড়া ভৈরব নদের ওপারে ভেজাল সারের একটি গুদাম রয়েছে। যেখানে প্যাকেট করা হয়। বড় বড় বস্তায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা ভেজাল সার সেখানে প্যাকেট হয়। মাগুরার এক বড় ভেজাল কারবারির ভেজাল সারও যাচ্ছে নওয়াপাড়ার ওই সব ডেরায়। আর যশোর হাইকোর্ট মোড়ের একটি সিন্ডিকেট মধ্যস্থতা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে কথা হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যশোরের উপপরিচালক কাজী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, নওয়াপাড়ায় ভেজাল সারের অবাধ বিকিকিনির অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন।
×