ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩৫ পরিবারের মানবেতর জীবন ॥ ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে স্কুল

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

৩৫ পরিবারের মানবেতর জীবন ॥ ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে স্কুল

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ চকরিয়া বরইতলী মধ্যম বানিয়ারছড়ায় বনবিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫টি ভূমিহীন পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুরা বর্তমানে প্রচ- শীতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বসতবাড়ি ভেঙ্গে চুরমার ও সহায় সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ পরিবার বর্তমানে দিশেহারা। শিশু ও বৃদ্ধরা কাঁপছে প্রচ- শীতে। অভিযানে স্থানীয় শিখন স্কুলটিও ভেঙ্গে দেয়ায় লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের। ওই স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে অন্তত ৬২ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। ওসব লোকজন নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। জানা গেছে, শনিবার সকালে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের কর্মকর্তারা অবৈধ বসতি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। চুনতী রেঞ্জের অধীন চকরিয়া বরইতলী বনবিটের মধ্যম বানিয়ারছড়া এলাকার দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের অন্তত ৩৫টি বসতবাড়ি ভেঙ্গে উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে স্কুল ও মসজিদ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (পদুয়া রেঞ্জ) মতলুবুর রহমান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব উল করিম। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়, তারা ভূমিহীন এবং নিঃস্ব। তাদের ভিটেবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় কয়েকযুগ আগে তারা পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। বর্তমানে তাদের সহায়-সম্বল বা অন্যত্র ঘর তৈরি করার সামর্থ্য না থাকায় প্রচ- শীতে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করে, উচ্ছেদ অভিযানের সময় বরইতলী ইউনিয়নের এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা গাড়িতে করে শ্রমিক পাঠিয়ে বনবিভাগকে সহায়তা করেছে। যাতে তার দখলে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে বনবিভাগের কর্মকর্তারা নমনীয় থাকে। আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে আগে থেকে বনকর্মীদের সম্পর্ক রয়েছে। মধ্যম বানিয়ারছড়া গ্রামের মৃত ফরিদুল আলমের স্ত্রী কুলছুমা বেগম জানান, তার কোন ভূমি নেই। গত ৪৫ বছর ধরে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে তিনি কোনমতে একটি ঘর করে বসবাস করে আসছেন। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে তার বাড়ি থেকে স্বর্ণ, নগদ টাকা ও ল্যাপটপ লুট করা হয়েছে। কর্মজীবী নুরুল ইসলাম জানান, তার পরিবার প্রায় ৪০ বছর ধরে বানিয়ারছড়া পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। অভিযানে তার বাড়িটিও ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় নুরুল আলমের স্ত্রী নুর আয়েশা বেগম জানান, তারা অসহায়, ভূমিহীন পরিবার। ভিটে না থাকায় বাধ্য হয়ে ২০ বছর আগে বানিয়ারছড়ার পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে সেখানে বসবাস করে আসছে। কিন্তু অভিযানে তার পরিবারের সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। অভিযানে তার বাড়িটি ভেঙ্গে দেয়ার কারণে বেশিরভাগ মালামাল ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। অভিযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দাবি করে, বনবিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে তাদের ঘরবাড়ি শুধু ভেঙ্গে দেয়া হয়নি। ওই সময় বহিরাগত যেসব লোক অভিযানে অংশ নিয়েছে তারা বাড়িতে ঢুকে লুটপাট চালিয়েছে। মারধর করেছে শিশুদের।
×