ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭ শতাংশে নেমেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ব্যয়

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

৭ শতাংশে নেমেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ব্যয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল ব্যয় ৭ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। ২০১৬ সালের নবেম্বরে এ খাতের গড় তহবিল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর অর্থ এ মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একশ’ টাকা তহবিল ব্যবস্থাপনায় গড়ে ৭ টাকা ৯৫ পয়সা ব্যয় করেছে। একই বছরের অক্টোবরে প্রথমবার এ খাতের গড় তহবিল ব্যয় ৭ শতাংশে নেমে আসে। ঐ মাসে গড় তহবিল ব্যয় ছিল ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় তহবিল ব্যয়ের পাশাপাশি সমন্বিত তহবিল ব্যয়ও নিম্নমুখী রয়েছে। নবেম্বর শেষে সমন্বিত তহবিল ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। যা অক্টোবর মাসে ছিল ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক সুদহার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের নবেম্বরে ভিত্তি হার পদ্ধতি নামে একটি তদারকি পদ্ধতি চালু করে। যার মূল উপাদান হচ্ছে তহবিল ব্যয় সূচক। সাধারণ ও সমন্বিত দুই পদ্ধতিতে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসাব করা হয়। এ খাতে তহবিল ব্যয় বলতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদভিত্তিক প্রাপ্ত সব তহবিল সংগ্রহের ব্যয়কে বুঝায়। আর সমন্বিত তহবিল ব্যয় হচ্ছে, স্বল্প ব্যয়ে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে গঠিত প্রকল্প তহবিল ব্যতীত অন্যান্য সুদভিত্তিক প্রাপ্ত তহবিল সংগ্রহের ব্যয়। তহবিল ব্যয় সূচক হিসাবের ক্ষেত্রে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সকল নন-ইক্যুইটি তহবিলের দায় বিবেচনায় নেয়া হয়ে থাকে। তহবিল ব্যয় সূচক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পণ্য তথা ঋণের সুদ হার নির্ধারণের একটি সূচক। যার মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদ হারের নির্ধারিত সীমা জানা যায়। তহবিল ব্যয় কমলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার কমবে এবং তহবিল ব্যয় বাড়লেও সুদের হারও বেড়ে যাবে। এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা বজায় রাখা যায়। তবে বিভিন্ন কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল ব্যয় কমতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বাজারে সুদের হারের উঠানামা, তহবিল সংগ্রহের উৎসে সুদের হার পরিবর্তন, সংযুক্তি ও অধিগ্রহণ কার্যক্রম, হিসাব পদ্ধতির পরিবর্তন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা। বর্তমানে ব্যাংকবহির্ভূত ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আগে ব্যবসার মূল ভরসা ছিল ব্যাংক আমানত। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নমনীয় নীতির কারণে তারা এখন জনসাধারণ থেকে ৩ মাস মেয়াদী আমানতও সংগ্রহ করতে পারছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ব্যাংক নির্ভরতা কমিয়ে জনসাধারণ থেকে আমানত সংগ্রহে জোর দেয়ায় এ খাতে সার্বিক তহবিল ব্যয় কমছে। পাশাপাশি বিনিয়োগ গতিশীল না হওয়ায় তারা ব্যাংকগুলো থেকেও তুলনামূলক কম সুদের তহবিল সংগ্রহ করতে পারছে। জানা গেছে, কম সুদে তহবিল মিললেও বিনিয়োগ চাহিদার অভাবে বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বাড়ছে না। আবার বিদ্যমান অফিসব্যয়, বেতন ভাতাদিসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় কমছে না। এতে ভিত্তি হারও সেভাবে কমছে না। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান ঋণের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি সুদারোপ করছে। বর্তমানে তারা গ্রাহক পর্যায়ে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে। জানা গেছে, এ খাতে তহবিল ব্যয় সূচক চালুর পর থেকেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় তহবিল ব্যয় কমে আসতে থাকে। এই তহবিল যখন চালু করা হয় ঐ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় তহবিল ব্যয় ১২ শতাংশের ওপরে ছিল। তবে প্রথমবারের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় তহবিল ব্যয় সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসে ২০১৪ সালের নবেম্বর মাসে। এরপর গেল বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তহবিল ব্যয় সিঙ্গেল ডিজিটের নিচেই ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের গড় তহবিল ব্যয় ফের ডবল ডিজিট অতিক্রম করে। পরের মাস মার্চেই তহবিল ব্যয় আবার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসে। এরপর থেকে গড় তহবিল ব্যয় সিঙ্গেল ডিজিটের নিচেই রয়েছে। এদিকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমবার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোর সমন্বিত তহবিল ব্যয় সিঙ্গেল ডিজিটের নিচে নামে। ঐ মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত তহবিল ব্যয় ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে ২০১৫ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত তহবিল ব্যয় ১০ শতাংশের ওপরে ছিল।
×