ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য বাড়াতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

বাণিজ্য বাড়াতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ যৌথ ইশতেহার ও উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য কাঠামোগত চুক্তির আওতায় আঞ্চলিক, উপআঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বহির্র্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কসহ দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা উন্নয়নে জোর দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এরই আওতায় সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে রেল ও সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে আঞ্চলিক পর্যায়ে কৌশল নির্ধারণ করা হবে। শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আঞ্চলিক, উপআঞ্চলিক সহযোগিতা সংক্রান্ত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সভায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত চুক্তির পাশাপাশি ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন সম্মেলনের (আইপিইউ) প্রস্তুতি বিষয়ক আলোচনা করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্র মতে, আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তায় ঢাকায় ১৩৬তম ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় আইপিইউর ১৭০টি সদস্য রাষ্ট্রের স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার এবং পার্লামেন্টারিয়ানগণ অংশগ্রহণ করবেন। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে এই সম্মেলনের জন্য ইতোমধ্যে প্রতীকী বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন সফল করতে ইতোমধ্যে আয়োজনের প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, আইপিইউ হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সংসদীয় সংস্থা, ১৮৮৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এর সদস্য রাষ্ট্র ১৭০ এবং সহযোগী সংস্থা ১১টি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ এই সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে। সংস্থাটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। গত বছর জেনেভায় ১৩৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংসদীয় সংলাপে ও মানুষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা প্রদান করা, পার্লমেন্টগুলো এবং পার্লামেন্ট মেম্বারদের মধ্যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়, যোগাযোগ ও সহযোগিতা প্রদান করা, আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে মতামত প্রকাশ করা, সংসদীয় গণতন্ত্র ও উন্নয়নের স্বার্থে মানবাধিকার রক্ষণ ও উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করা আইপিইউর অন্যতম উদ্দেশ্য। চলতি বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ সব সময় ছিল। বর্তমান সরকার এই সম্পর্ক জোরদারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসবাদ একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ বহির্র্বিশ্বের সঙ্গে কাজ করছে। তিনি বলেন, আঞ্চলিক, উপআঞ্চলিক সহযোগিতা ও বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজন ও অংশগ্রহণের জন্য সরকার বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রেখেছে। জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তা নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে সরকার। ইতোমধ্যে ১২টি ইস্যু নিয়ে এর তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রদানের বিপরীতে মাসুল ধার্যের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম উন্নয়নে। উপআঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় ভারতের সঙ্গে করা মোটরভেহিকল এ্যাগ্রিমেন্টের অগ্রগতি, চট্টগ্রাম ও মংলা পোর্টের সক্ষমতা বাড়ানো, কাস্টমস সুবিধা, গৌহাটি-শিলং-সিলেট-ঢাকা বাস সার্ভিস চালুকরণ, চিটাগাং-আখাউড়া-আগরতলা পর্যন্ত ট্রান্সপোর্ট সুবিধা এবং বিপরীতে মাসুল ধার্য কত হবে, বাংলাদেশ-শিলিগুড়ি-ভুটান বাস সার্ভিস চালুকরণ, রংপুর-দিনাজপুর-বুড়িমারী, দার্জিলিং-ভুটানের মধ্যে সরাসরি বাস সার্ভিস চালুকরণ, রাজশাহী-মালদা বাস সার্ভিস চালু এবং খুলনা-কলকাতা রেলওয়ে সার্ভিস চালুকরণের বিষয়টি রয়েছে। একই সঙ্গে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, বিমসটেক, বিসিআইএমসহ বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে ফের তৎপরতা বাড়ানোর পদক্ষেপের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে। উপআঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, আঞ্চলিক সম্পর্ক বাড়াতে প্রথমেই ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে জোর দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি এক সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার দেশে নতুন নতুন ক্ষেত্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এছাড়া নেপাল ও ভুটানে পানি বিদ্যুতের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এর সুফল পাওয়ারও চেষ্টা চলছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ ॥ ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়া, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছে সরকার। চীন, জাপান ও সৌদি আরবের সঙ্গে করা বিনিয়োগ ও বাণিজ্য চুক্তিগুলোর বর্তমান অবস্থা, বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে শুধু চীনের সঙ্গে প্রায় শতাধিক চুক্তি করা হয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে দু’দেশের মধ্যে বেশ কিছু স্বাক্ষরিত চুক্তি সমঝোতা স্বারক করা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে জাপানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব হবে বাংলাদেশে। বিগ-বি ইনিশিয়েটিভের আওতায় বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে এই শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকাস্থ জাপানীদের শিল্প ও বাণিজ্য এ্যাসোসিয়েশনের (সো কো কাই) উপদেষ্টা আব্দুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। তাই জাপানের প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনা জরুরী হয়ে পড়ছে। মেট্রোরেল, গঙ্গা ব্যারাজ, যমুনা নদীর নিচে টানেল, যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর মতো শুধু রেলের জন্য আরেকটি সেতু, মাতারবাড়ি বিদ্যুত প্রকল্প, বহুমুখী ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস ও ঢাকার চারপাশে থাকা চার নদীর জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার মতো বৃহৎ অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। হলি আর্টিজান ঘটনার পর তারা চলে গেলেও সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে আবার জাপানীরা বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছেন। এখন তাদের সব ধরনের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকার পরও জাপানী বিনিয়োগের বিষয়টি খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও মনিটরিং করার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এসব ঋণের অর্থে এসব প্রকল্পে বাস্তবায়ন হবে।
×