ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শঙ্কামুক্ত মুশফিক বোলারদের দুষলেন

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

শঙ্কামুক্ত মুশফিক বোলারদের দুষলেন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মরণপণ লড়াই এটাকেই বলে। ওয়েলিংটন টেস্টে সেটাই করেছেন মুশফিকুর রহীম। দলের অধিনায়ক এবং মিডলঅর্ডারের অপরিহার্য ব্যাটসম্যান তিনি। এ কারণে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সুস্থ না হয়েই খেলতে নেমেছিলেন ওয়েলিংটন টেস্টে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করার সময় বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও ডানহাতের তর্জনিতে প্রচ- আঘাত পান। তবু ব্যাটিং অব্যাহত রেখে ১৫৯ রানের ইনিংস উপহার দেন। তৃতীয় ও চতুর্থ দিন নামেননি মাঠে। পঞ্চম দিনে ব্যাট করতে নেমেছেন ফোলা আঙ্গুলের ব্যথা নিয়েই। আর এবার ঘাড়ের পেছনে পেসার টিম সাউদির বলে আঘাত পেয়ে মাঠেই লুটিয়ে পড়েন। সরাসরি পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নেয়া হয়। স্ক্যান রিপোর্টে কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। মাঠেও ফিরেছেন পরে। ম্যাচ শেষের পুরস্কার বিতরণীতে জানিয়েছেন অনেক ভাল বোধ করছেন। কিন্তু দলের পরাজয়ে তিনি বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংকেই দুষেছেন। ব্যাটিংয়ে নামার অন্যথা ছিল না। তাই শেষ পর্যন্ত আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন অধিনায়ক মুশফিক। ইনজুরি আক্রান্ত আঙ্গুলের ফোলা ও ব্যথাটা কমেনি তখনও। চলতি টেস্টেই তিনি মারাত্মক হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি থেকে পুরোপুরি ফিটনেস অর্জন না করেই খেলতে নেমেছিলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করার সময় নিউজিল্যান্ড পেসারদের অনেকগুলো বলে আঘাত পেয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকবার মাঠেই ফিজিওর শরণাপন্ন হয়ে দীর্ঘক্ষণ শুশ্রƒষার পর ব্যাটিং চালিয়ে গেছেন। শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ করেই ১৫৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন তিনি। বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। আঙ্গুলের ব্যথা ও ফোলা বেশি থাকায় মুশফিক আর নামেননি তৃতীয় ও চতুর্থ দিন ফিল্ডিংয়ে। ইমরুল কায়েস করেছেন উইকেটরক্ষণের কাজ। তবে পঞ্চম দিনে দলের ঘোর বিপদে বাধ্য হয়েই নামতে হয়েছে তাকে। আউট হননি, কিন্তু দুর্ভাগ্যটাও পিছু ছাড়েনি। পঞ্চম দিন পেসার সাউদির রাউন্ড দ্য উইকেটে করা শর্ট অব লেন্থের বল বুঝতে দেরি করে ফেলেছিলেন। শেষ মুহূর্তে মুখ ঘুরিয়ে নিলেও তা প্রচ-ভাবে আঘাত করে মাথার পেছনে। লুটিয়ে পড়েন মুশফিক উইকেটে। সব কিউই ফিল্ডার দৌড়ে আসেন। দীর্ঘক্ষণ মাঠেই চিকিৎসা চলে। ভালভাবে সাড়া দিচ্ছিলেন মুশফিক। কিন্তু সতর্কতা হিসেবে পরবর্তীতে এ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ওয়েলিংটন হাসপাতালে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও বারবার দলের অবস্থার কথা জানতে চাইছিলেন। যখন বাজে অবস্থা দেখেছেন তখনই মাঠে ফিরে আবার ব্যাটিংয়ে নামতে চেয়েছিলেন। বিসিবির মিডিয়া কমিটি এমনটাই জানিয়েছেন। তবে ডাক্তারদের স্ক্যান রিপোর্ট না হওয়াতে সেটা আর সম্ভব হয়নি। আশার কথা হচ্ছে স্ক্যানে কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। মাথার পেছনে কিছুটা ব্যথা আছে মুশফিকের। ওই অবস্থায় নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় মাঠে আসেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ব্যথা পেয়েছেন হাতে, মাথায় কিন্তু এরচেয়েও বড় ব্যথা পেলেন বুকে। কারণ বাংলাদেশ হেরেছে। পুরস্কার বিতরণীর সময় তিনি নিজের অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ‘আগের চেয়ে ভাল বোধ করছি। আরও অনেক খারাপ হতে পারত। ব্যথা কিছুটা আছে, তবে আশা করি, কাটিয়ে উঠব।’ দলের পরাজয়ের পেছনে অবশ্য ব্যাটসম্যানদের কোন দোষ দেখছেন না মুশফিক। কারণ, প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা দারুণ এক সংগ্রহ দিয়েছেন। অনেক দলই টেস্ট ক্রিকেটের দ্বিতীয় ইনিংসে এভাবে বিপর্যয়ে পড়ে। এ বিষয়ে মুশফিকের মন্তব্য, ‘ব্যাটসম্যানরা যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন বোলাররা সেভাবে তা পারেননি। প্রথম ইনিংসে এত বড় রেকর্ড রান সংগ্রহর পরও এভাবে হেরে যাওয়াতে আমি বেশ হতাশ।’ অবশ্য, এর সঙ্গে দলে ইনজুরির প্রকোপটাকেও বড় কারণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি, ‘আমাদের কিছু চোট সমস্যা ছিল। কিন্তু বোলিংয়ের কারণে আমরা ম্যাচটা হেরেছি। বোলিংয়ে দুই পাশ থেকে যে চাপ সৃষ্টি করা দরকার ছিল আমরা তা পারিনি। আমাদের বোলিং অনভিজ্ঞ। ওরা এখনও শিখছে। আশা করি ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে এরা আরও ভাল করবে।
×