ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টা আক্রমণই কোহলির মূলমন্ত্র

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

পাল্টা আক্রমণই কোহলির মূলমন্ত্র

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রমশ নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন বিরাট কোহলি। এমনিতে তিন ভার্সনে ভারতের সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। অবিশ্বাস্য রকমের ধারাবাহিক। মহেন্দ্র সিং ধোনি হঠাৎ করে নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ায় টেস্টের পাশাপাশি এখন রঙিন পোশাকের দায়িত্বটাও কাঁধে এসে পড়েছে। ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আলোচনার বিষয় ছিল এটাই। ‘ক্রেজি বয়’ একসঙ্গে এত চাপ সামলাতে পারবেন তো? কোহলি যে অন্য ধাতুতে গড়া, পাকাপাকিভাবে পাওয়া ওয়ানডে নেতৃত্বের প্রথম ম্যাচেই সেটি বুঝিয়ে দিলেন। সফরকারী ইংল্যান্ডের ছুড়ে দেয়া সাড়ে তিনশ’ রানের চ্যালেঞ্জ ভারত টপকে গেল ৩ উইকেট ও ১১ বল হাতে রেখে। তাও আবার ৬৩ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর; ১২২ রান ‘অধিনায়ক’ কোহলির, ৭৬ বলে ১২০ কেদার যাদব! কি করে সম্ভব? কোহলি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যাই হোক, পাল্টা আক্রমণই তার মূলমন্ত্র। পুনের প্রথম ওয়ানডেতে ৩৫১ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এক পর্যায়ে ৬৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও শিখর ধাওয়ান এবং অভিজ্ঞ যুবরাজ সিং ও মহেন্দ্র সিং ধোনিকে হারায় ভারত। ব্যাট হাতে কোহলির সঙ্গে যোগ দেন কেদার। তখনও নাকি জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবেননি ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের ‘ওয়ান্ডার বয়’, কোহলি বলেন, ‘হ্যাঁ তখনও বিশ্বাস ছিল জিতব। যখন দেখলাম কেদার যাদব দারণ স্ট্রাইক নিচ্ছে, ওকে বললাম, আমরা দ্রুত ১৫০ রান তুলে নিতে পারলে ওরা চাপে পড়ে যাবে। সেটাই হয়েছে। ঠিক করেছিলাম শুরু থেকেই পাল্টা আক্রমণ করব।’ কোহলিকে ‘কিং অব চেজ’ অর্থাৎ ‘রান তাড়া করার সম্রাট’ বলা যায়। ২৮ বছর বয়সেই তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ২৭ নম্বর সেঞ্চুরি। এর মধ্যে রান তাড়া করতে নেমে হাঁকিয়েছেন ১৭টি সেঞ্চুরি, যার মধ্যে ১৫টিতেই জিতেছে ভারত। এক্ষেত্রে গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরকে ছাড়িয়ে গেলেন হালের রান-মেশিন। শচীন তার ৫১ ওয়ানডে সেঞ্চুরির ১৭টি রান তাড়া করতে গিয়ে পেলেও তার মধ্যে ভারতের জয় ১৪ বার। সুপার কোহলির অবশ্য এসব রেকর্ড নিয়ে ভাবার সময় নেই,‘প্রতিপক্ষকে জবাব দেয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হলো পাল্টা আক্রমণ। এ জন্যই আমি তিনে নামি। চেয়েছিলাম পার্টনারশিপ গড়ে ম্যাচটা জিততে।’ ১০৫ বলে ১২২ রানের ক্ল্যাসিক্যাল ইনিংসের পথে ৮ চার ও ৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিন ফরমেটের নতুন অধিনায়ক। ৭৬ বলে ১২ চার ও ৪ ছক্কায় ১২০ রানের ম্যারাথন ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা কেদার যাদব। ১৩তম ম্যাচে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সতীর্থের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ কোহলি বলেন,‘জানতাম কেদারের ক্ষমতা আছে, আমরা আগেও সেটা দেখেছি। বাইশ গজে নেমে শেখার চেয়ে বড় কিছু আর হয় না। চাইছিলাম ওর ভেতরের বিশেষ ক্ষমতাটা বেরিয়ে আসুক। ও এমন কিছু শট খেলেছে, উল্টো দিক থেকে দাঁড়িয়ে দেখে আমার নিজেরও সেটি বিশ্বাস হচ্ছিল না। কেদারকে শুভেচ্ছা। ওর পরিবার আজ মাঠে রয়েছে।’ পঞ্চম উইকেট জুটিতে ২৪ ওভারে ২০০ রান যোগ করে ইংলিশদের ম্যাচ থেকে বের করে দেন কোহলি ও কেদার। দু-জন আউট হওয়ার পর বাকি কাজটুকু করেন হারদিক পান্ডিয়া (৩৭ বলে ৪০*), রবীন্দ্র জাদেজা (১৩) ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন (১০ বলে ১৫*)। তুখোড় কোহলির সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে জেতাতে পেরে দারুণ খুশি ৩১ বছর বয়সী মহারাষ্ট্র ব্যাটসম্যান। ম্যাচসেরার পুরস্কার নেয়ার সময় কেদার বলেন, ‘দেশের জয়ে অবদান রাখতে পারার চেয়ে গর্বের আর কী হতে পারে। এত দিন বিরাটের ইনিংস মাঠের বাইরে থেকে দেখে এসেছি। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে কাছে থেকে দেখাটা আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি। আজকের এই ম্যাচটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ বিনয়ী কেদার আরও যোগ করেন, ‘রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটে বিরাটের যে ক্ষিপ্র গতি, এক্ষেত্রে আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে!’ বৃহস্পতিবার কটকে অনুষ্ঠিত হবে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
×