স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী নজর কেড়েছে বাংলাদেশের ছবি মেলা। আলোকচিত্রের এই আন্তর্জাতিক উৎসবটি পরিণত হয়েছে আলোকচিত্র বিষয়ক এশিয়ার সবচেয়ে বড় আয়োজনে। ট্র্যানজিশন বা অবস্থান্তর প্রতিপাদে এবার অনুষ্ঠিত হবে দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রীদের ছবি প্রদর্শনীর নবম আসর। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দুই সপ্তাহব্যাপী এবারের উৎসবে অংশ নেবে বাংলাদেশসহ ১৯টি দেশ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ২২ আলোকচিত্রীর সঙ্গে উৎসব রাঙাবে দেশের পাঁচ আলোকচিত্রী। তাঁদের ছবির সম্ভারে সাজানো ৩১টি প্রদর্শনী দেখার সুযোগ পাবেন রাজধানীর শিল্পরসিকরা। এবারের উৎসবের মূল প্রদর্শনীস্থল হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন। এছাড়াও পুরান ঢাকার বিউটি বোর্ডিং, ওয়াইজঘাটের বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ও নর্থব্রুক হল রোডের লাল কুঠিতে অনুষ্ঠিত হবে এ ছবি মেলায়। ৪ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ সøাইড শো। সেই সঙ্গে থাকবে উৎসবের বাছাইকৃত ছবি নিয়ে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী। ২০০০ সাল থেকে দুই বছর পরপর যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করছে দৃক পিকচার লাইব্রেরি লিমিটেড ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট।
সোমবার ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বক্তব্য রাখেন উৎসব পরিচালক শহিদুল আলম, ছবি মেলা নবম আসরের কিউরেটোরিয়াল টিমের সদস্য এ এস এম রেজাউর রহমান, মাহবুবুর রহমান, মুনেম ওয়াসিফ ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেলার প্রেস এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের প্রধান মুনিরা মোরশেদ মুন্নী।
উৎসব পরিচালক শহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের আগে ছবি মেলা নামের এমন আন্তর্জাতিক উৎসবের কথা এশিয়ার কোন দেশই ভাবেনি। এখন এশিয়ার অনেক দেশই এ ধরনের আয়োজনের জন্য আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করে। তিনি আরও বলেন, সারাবিশ্বই এখন বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের ছবি দেখতে চায়। কারণ, সেই মানটি আমরা অর্জন করতে পেরেছি। এছাড়া আমাদের দেশ যে বিদেশীদের জন্য নিরাপদ এ উৎসবের মাধ্যমে সেটাও আমরা প্রমাণ করতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের ছবি মেলায় বাংলাদেশসহ ১৯ দেশের আলোকচিত্রীরা অংশ নেবেন। অংশগ্রহণকারী অন্য দেশগুলো হলো আলজেরিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, ইরান, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, স্পেন, সুইডেন, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এসব দেশের ২৭ জন শিল্পীর ৩১টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনীর মধ্যে থাকবে ভারতের কানু গান্ধী’র ‘কানু’স গান্ধী’, বাংলাদেশের নাসির আলী মামুনের ‘দ্য পোয়েট উইথ দ্য ক্যামেরা, ফটোগ্রাফস অফ নাসির আলী মামুন/ফটোজিয়াম (১৯৭২-১৯৮২)’, ভারতের পুষ্পমালা এনের ‘নেটিভ উইমেন অফ সাউথ ইন্ডিয়া : ম্যানারস এ্যান্ড কাস্টমস (২০০০-২০০৪)’, দেশের নাঈম মোহাইমেনের ‘ইউনাইটেড রেড আর্মি’, যুক্তরাজ্যের স্ট্যানলি গ্রিনের ‘ওপেন উন্ড’। দেশ-বিদেশের এসব বিখ্যাত আলোকচিত্রীদের অসাধারণ সব কাজের সম্ভারে সজ্জিত হবে ছবি মেলা ৯। এ বছরই প্রথমবারের মতো ছবি মেলায় ১০ জন বাংলাদেশী শিল্পীকে ‘ফেলো’ হিসেবে নির্বাচিত করে তাঁদের বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে। এ দশজন আলোকচিত্রীর মধ্যে রয়েছেনÑ আবীর সোম, আরফান আহমেদ, চৌধুরী গোলাম মশিউর রহমান, মিনহাজ মারজু, মোল্লা সাগর, নাজমুন নাহার কেয়া, ঋতু সাত্তার, সালমা আবেদিন পৃথি, সরকার প্রতীক ও শুভ্র কান্তি দাশ।
ছবি মেলার এবারের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ৬টি কর্মশালা, ২ দিনের পোর্টফোলিও রিভিউ এবং সে সঙ্গে বেশ কিছু আর্টিস্ট টক, লেকচার ও প্রেজেন্টেশন। এই প্রথম মেলায় থাকবে দেশের ফ্রি-ল্যান্স ফটোসাংবাদিকদের জন্য কর্মশালা। এছাড়া দেশের যেসব ফটোসাংবাদিক নিজেদের কাজ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চায় তাঁদের জন্যও থাকবে পৃথক কর্মশালা। সাদাকালো ডক্যুমেন্টারি স্টাইলের ছবির জন্য বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী এ্যান্ডার্স পিটারসেন পরিচালনা করবেন ‘ইন্সটিঙ্কটস’ শিরোনামে একটি কর্মশালা। মার্কাস শেডেন ও ফ্রেড্রিক লেজমি পরিচালনা করবেন ‘দ্য ফটোবুক মাস্টারক্লাস’ কর্মশালা যা ইতোমধ্যে গত ১২ জানুয়ারি থেকে পাঠশালায় শুরু হয়েছে। আরও থাকছে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, শফিকুল আলম কিরণ এবং আবির আবদুল্লাহ পরিচালিত ‘ওয়ার্কিং ইন্টারন্যাশনালি : স্ট্র্যাটেজিস এ্যান্ড মেথোডোলজিস’ এবং মেরি ও শিয়ার ‘সেফটি ইন ফটোজার্নালিজম’ শীর্ষক আর্টিস্ট টক। এছাড়াও রিকশাভ্যানে করে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী থাকছে।
৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত দুই সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ১৬ ফেব্রুয়ারি।
আলিয়ঁসে কার্টুন প্রদর্শনী ‘জানালা’ ॥ ড. সাজিদ বিন দোজা বনি বিশ্বাস করেন যে কার্টুন এমন একটা মাধ্যম যার মাধ্যমে হাস্যরসের সত্যিকার নির্যাসটা আস্বাদন করা যায়। তিনি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন সমতটে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, ঘুরেছেন এবং আবিষ্কার করেছেন যে রসবোধ সামাজিক ও আর্থিক গ-ি ছাপিয়ে প্রতিটি মানুষের জীবনে মিতালী গড়তে পারে, যেখানে সবাই আসলে আনন্দে, হাসি-ঠাট্টায় দিনাতিপাত করতে চায়। বনির আঁকা কার্টুনগুলো তাই নিছক বিনোদনকে ছাপিয়ে হয়ে ওঠে অবিমিশ্র জীবনবোধের দৃশ্যকাব্য। এমনই ভাবনা নিয়েই এই কার্টুনিষ্ট সাজিয়েছেন জানালা নামের নিজের ষষ্ঠ একক কার্টুন প্রদর্শনী।
সোমবার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস্ বাংলাদেশের (আইএবি) প্রেসিডেন্ট স্থপতি কাজী গোলাম নাসির। বিশেষ অতিথি ছিলেন কার্টুনিষ্ট আহসান হাবীব।
ভাওয়াইয়া গানের সন্ধ্যা ॥ ভাওয়াইয়া গানের সংগঠক ও শিল্পী এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান। সোমবার তাঁর ৫৫তম জন্মদিনে উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো একক ভাওয়াইয়া সন্ধ্যা। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন। ওই অনুষ্ঠানে তাঁর রচিত গবেষণাধর্মী বই ‘বাংলাদেশের চার যুগের ভাওয়াইয়ার ইতিহাস’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: