ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সাঈদ খোকনের ঘোষণা

রাস্তা ও ফুটপাথ দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলবে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

রাস্তা ও ফুটপাথ দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি হকাররা। সোমবার সকাল থেকেই যথারীতি ফুটপাথ থেকে রাস্তা পর্যন্ত দখল করে দোকান বসায় তারা। অবৈধ বাণিজ্যে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কোন কিছুরই কমতি ছিল না। একদিকে অন্যায়ভাবে ব্যবসা, আবার বাধা দিতে গেলে চোখ রাঙানি। দলবল নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান প্রতিহত করার চেষ্টা। রাজনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি সবই করেছে তারা। যদিও সফলতা আসেনি। পাল্টা জবাব দিয়ে দিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। বলেছেন, যে কোন মূল্যে ফুটপাথ ও রাস্তা দখলমুক্ত করা হবে। এতে কোন আপোস নয়। রাস্তা ও ফুটপাথ দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান আরও জোরদারসহ অব্যাহত রাখার কথাও জানিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে মতিঝিল এলাকায় হকার উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। দিনের বেলায় ফুটপাথে হকার বসা বন্ধ করতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর গুলিস্তান ও বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ এলাকার অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। সোমবার বেলা ১১টা থেকে সিটি কর্পোরেশনের তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ অভিযান শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুব্ধ হকাররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়া যুবলীগের একটি কার্যালয় ভাঙ্গতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। অভিযানের সময় গুলিস্তান ও আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এ সময় গুলিস্তান মার্কেট, ট্রেড সেন্টার, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, বঙ্গবন্ধু পাতাল মার্কেট, বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে ফুটপাথের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অবশ্য উচ্ছেদের খবর পেয়ে ফুটপাথের মাল আগেই সরিয়ে নিয়ে যান কিছু ব্যবসায়ী। অভিযানের সময় ফুটপাথে থাকা হকারদের মাল রাখার চৌকি ভেঙ্গে দেয়া হয়। এছাড়া ফুটপাথে গড়ে তোলা কয়েকটি অবৈধ পাকা স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেয় সিটি কর্পোরেশনের বুলডোজার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযানের সময় উপস্থিত ছিল সাত প্লাটুন পুলিশ। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের বুলডোজার, প্লে-লোডারসহ ১৫টি বাহন উচ্ছেদ কার্যক্রমে অংশ নেয়। অভিযান চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ হকার গুলিস্তান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। অনেকেই অভিযানকারী টিমের সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন। কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম ভাঙাতে শুরু করেন। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গুলিস্তান মার্কেট এবং গুলিস্তান প্লাজা মার্কেটের সামনের ফুটপাথে গড়ে তোলা ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের গুলিস্তান ইউনিটের কার্যালয় ভাঙ্গতে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তখন যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। সিটি কর্পোরেশন ও মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে সেøাগান দিতেও শোনা যায় কয়েকজনকে। পরে ওই কার্যালয়ের একপাশের বেড়া ভেঙ্গে দিয়ে আসে কর্পোরেশনের বুলডোজার। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব সাংবাদিকদের বলেন, আমার কাজ নির্দেশ দেয়া। এ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। আমরা নির্দেশমতো কাজ করে যাব। এরপর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে ফুটপাথের ওপর থাকা বিআরটিসির একটি ভলভো বাসের কাউন্টারও ভেঙ্গে দেয়া হয় অভিযানে। হকার্স ইউনিয়নের অবস্থান ধর্মঘট ॥ এদিকে পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে সকাল ১০টার দিকে নগরভবন ঘেরাও করতে যায় বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়ন। তবে পুলিশী বাধায় তারা নগর ভবনের কাছে ঘেঁষতে পারেনি। বঙ্গবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ দেখান। হকারদের বিক্ষোভের আগেই গোলাপশাহ মাজার থেকে বঙ্গবাজার মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। দুপুর পৌনে ১টার দিকে হকারদের একটি দল মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান। পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ না করা, হকারদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, হকারদের ওপর ‘দমন-পীড়ন’ বন্ধ এবং প্রকৃত হকারদের তালিকা করে পরিচয়পত্র দেয়াসহ ১০ দফা দাবির কথা স্মারকলিপিতে তুলে ধরেন তারা। হকার্স ইউনিয়নের নেতারা পরে মেয়রের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠকও করেন। হকার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার ফুটপাথ ও রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে। এই শহর বিশৃঙ্খলভাবে চলতে পারে না। আমাদের আরও কিছু কর্মসূচী আছে, যা আমরা করব। আপাতত হকার উচ্ছেদ করে রাস্তা পরিষ্কার করব। যারা আজ স্মারকলিপি দিয়েছেন তাদের আহ্বান জানাই, জনগণের স্বার্থে সবাই এ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে জনগণের ফুটপাথ ও রাস্তা দখলমুক্ত করে দেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অনেকে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে।
×