ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

লাটে উঠেছে খেয়াঘাটের ব্যবসাপাতি

যমুনায় নাব্য সঙ্কট ॥ বগুড়ার কালীতলা ঘাটের ১৭ রুট বন্ধ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

যমুনায় নাব্য সঙ্কট ॥ বগুড়ার কালীতলা ঘাটের ১৭ রুট বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ এবারের শুকনো মৌসুম বগুড়ার যমুনাপারের বহু নদী পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। জেগেছে অসংখ্য চর। ডুবোচরও পড়েছে কয়েকটি পয়েন্টে। এই অবস্থায় খেয়া পারাপার প্রায় বন্ধ। যমুনা তীরের সারিয়াকান্দির কালীতলা মূল খেয়াঘাট থেকে স্থানীয় ১৪ রুট ও আঞ্চলিক তিনটি মোট ১৭ রুটে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। খেয়াঘাট কেন্দ্র করে যে ব্যবসা গড়ে ওঠে তার বেশিরভাগই বন্ধ। একের পর এক চর জেগে ওঠায় যমুনাপারের লাখো মানুষকে যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কেন এত চর জেগেছে? অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয় নদীর নাব্য কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। উত্তরের পানি এসে পলি পড়ে নাব্য আরও খানিকটা কমিয়ে দিয়েছে। নদী দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কথা, নদী ড্রেজিং করতে হবে। কেন ড্রেজিং হচ্ছে না- তাদের সোজাসাপটা উত্তর, বরাদ্দ নেই। এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা বলাবলি করেন, চর জেগে ওঠার হার বাড়লে নিকট ভবিষ্যতে হেঁটেই যমুনা পার হওয়া যাবে। তার আলামত এখনই স্পষ্ট। চরের ওপর দিয়ে ঘোড়া ও গাধার গাড়িতে লোকজন এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা যাচ্ছে। পণ্য পারাপার করছে এসব গাড়ি। অথচ কয়েক বছর আগেও এক চরগ্রাম থেকে আরেক চরগ্রামে যেতে হতো নৌকায়। একটি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে যমুনায় চর পড়েছে অন্তত ১৫শ’ বর্গকিলোমিটার। গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে যমুনার চর দৃশ্যমান বেশি। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি যমুনার চর। এসব চরে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। স্থানীয়রা জানান কাজলা, বোহাইল, চন্দনবাইশা, কর্নিবাড়ি, চালুয়াবাড়ি, কামালপুর ও হাটশেরপুরের ৭ ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে অন্তত ৬২ চর পড়েছে। এই চর ইউনিয়নের যমুনার ওপর দিয়ে বগুড়া ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, জামালপুরের লোকজন নৌকায় চলাচল করে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় খেয়া পারাপার কার্যত বন্ধ। মাঝিমাল্লারা অলস সময় কাটাচ্ছেন। যে ঘাটগুলো দিয়ে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ নৌকা চলাচল করত সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি চলাচল করে। এক চর থেকে আরেক চরে পৌঁছতে ট্রানজিট করতে হয়। সারিয়াকান্দির সঙ্গে পাকুল্লা, সোনাতলা, ধুনট, চন্দনবাইশা, কাজলা, বোহাইল, বেনিপুর, মানিকদাইর, চালুয়াবাড়ি, হাসনারপাড়া, দিঘাপাড়া, কামালপুর, কর্নিবাড়ি, নয়াপাড়া, মথুরাপাড়া, আওলাকান্দি, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ি, তারাকান্দি (যমুনা সার কারখানা), গাইবান্ধার ফুলছড়ি, বালাসী, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর রুটে নৌ চলাচল কার্যত বন্ধ। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরের মানুষকে। কালীতলা ঘাটের কাছে বসবাসকারীরা বললেন, বছর কয়েক আগে যমুনার ভাটিতে রোহদহ ও চন্দবাইশা এলাকায় নদীর তীব্র স্রোতে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। নদীর গতিপথ পাল্টে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে নদীর উজানে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে জেগে ওঠে অসংখ্য ডুবোচর। দীঘলকান্দি, হাসনারপাড়া, দেলুয়াবাড়ি অন্তরেরপাড়া, দীঘলকান্দি, কালীতলায় গ্রোয়েনের কাছে পানি এতটাই কমে যায় যে অধিকাংশ এলাকায় দ্রুত চর জেগে ওঠে। বর্তমানে এই এলাকায় কোন নৌকা ভিড়তে পারছে না। চরের লোকজনকে যারপরনাই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও কালীতলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মথুরাপাড়ায় নৌকা ভিড়ত। সেখানেও এখন ডুবোচর। ওই জায়গা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভাটিতে কুতুবপুরের মাদারগঞ্জ ঘাটেও ডুবোচরের কারণে নৌকা ভিড়তে পারছে না। চরের খেয়াঘাট কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ব্যবসাবাণিজ্য। কালীতলা গ্রোয়েনের কাছে এক দোকানি বললেন, ব্যবসা লাটে উঠিছে। মানষই (মানুষ) আসে না। বেচাকেনা হবি কেঙ্কা (কেমন) করে। এখানে প্রায় ৩৭ দোকান ছিল। বর্তমানে মাত্র চারটি। কালীতলা খেয়াঘাটের মাঝি সিদ্দিক মিয়া বললেন, আগে নৌকা ভেড়ার সঙ্গেই লোকজন নাম্যে সওদাপাতি কিনত। এখন লোকই আসে না। হোটেলগুলোও বন্ধ। হোটেল মালিক আজিজার রহমান বললেন, যমুনার মাছ ধরেই বঁটি দিয়ে কুট্যে রান্ধনের সাথে খরিদ্দার লাইন ধরে সমানে আসিচ্ছিল। এখন কেউ আসে না।’
×