ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান

পাঠ্যবই নিজেরা ছাপানোর চিন্তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

পাঠ্যবই নিজেরা ছাপানোর চিন্তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভুলে ভরা ও মৌলবাদী পাঠ্যবই নিয়ে তীব্র সমালোচনায় পড়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এনসিটিবির মাধ্যমে না ছাপিয়ে নিজেরাই প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপানোর চিন্তা করছে। কেবল তাই নয়, প্রাথমিক স্তরের বই প্রণয়নে এনসিটিবির মতো আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান করা যায় কিনা, তাও চিন্তাভাবনা করছে মন্ত্রণালয়। সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান তাদের চিন্তার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা এনসিটিবিকে বই ছাপানোর দায়িত্ব দেই, কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা দেখাশোনা করে, এটা তাদেরই প্রতিষ্ঠান। এনসিটিবির মাধ্যমে না ছাপিয়ে নিজেরাই প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপাতে পারি কিনা তা চিন্তাভাবনায় আছে। প্রাইমারীর বই আলাদা করে ছাপালে জবাবদিহিতা আমাদের থাকবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশে ১০ বোর্ড থাকার প্রসঙ্গ তুলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের সারাদেশে একটা বোর্ড থাকতে পারত, আমরা ৩২ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেই। এনসিটিবি থেকে বেরিয়ে এসে কবে নাগাদ নিজেরাই বই ছাপাতে চান এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে ভাবনা আছে, চিন্তাভাবনাও চলছে, বাস্তবায়ন হলে তো দেখাই যাবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছরের মাঝামাঝি শেষ হবে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর পিইডিপি-৩ প্রকল্প। এই প্রকল্প শেষ হলে চলতি বছরেই পিইডিপি-৪ প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। পিইডিপি-৩ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অর্থায়ন করে। প্রাথমিকের বই ছাপাতে এই প্রকল্প থেকে অর্থ নেয়ায় বিশ্বব্যাংক কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। মন্ত্রী বলছেন, আমরা চেষ্টা করছি পিইডিপি-৪ এ গিয়ে বই আলাদা করে ছাপাতে পারি কিনা। বিশ্বব্যাংকের আওতার বাইরে এসে পারা যায় কিনা- এ রকম ভাবনাও হচ্ছে। এনসিটিবির বিশেষজ্ঞরাই প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম ঠিক করেন জানিয়ে গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, রিরাইট করা, সংশোধনী আনা সব কিছুই তারা করেন। প্রাথমিকের বইয়ে ভুল-ত্রুটি নিয়ে ফিজার বলেন, ভুল তো আছে। পত্রিকায় অন্য বিষয়েও কথা আসছে। সংশোধনী নিয়ে কেউ বলেছেন প্রতিক্রিয়াশীলদের কাজ। আমাদের দেশে মিশ্র কালচার, এখানে ধর্মেরও খুব প্রভাব আছে আবার প্রগতির ঝাঁঝও সব দিক মিলিয়ে আছে। পাঠ্যপুস্তক কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে বাধা ॥ পাঠ্যপুস্তক কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে শিক্ষা ভবনের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অপরাজেয় বাংলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ছাত্ররা শিক্ষা ভবনের সামনে এগোতে থাকলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। পরে ছাত্ররা সেখানেই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের আয়োজনে ওই কর্মসূচী পালিত হয়। সমাবেশে ফেডারেশনের সভাপতি সৈকত মল্লিক বলেন, বর্তমান শিক্ষা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকতে এখন তারা ‘আঁঠাতত্ত্ব’ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। শিক্ষা ব্যবস্থা ধংসের কারিগর হিসেবে মন্ত্রীর ‘শিক্ষাধ্বংসের গোল্ডেন এ গ্লাস’ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। দেশের শিক্ষাকে বাঁচাতে হলে এই ব্যর্থ শিক্ষামন্ত্রীদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সহসভাপতি আল জাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, রাজনৈতিক শিক্ষাষিয়ক সম্পাদক জাহিদ সুজন, ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি কাঁকন বিশ্বাস, নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মশিউর রহমান খান, বাগাছাস ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি অলীক। এর বাইরে ঢাকার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন। শিক্ষার উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ॥ শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে লন্ডনের ক্যামডেন মেয়রের সঙ্গে বৈঠকের সময় এ সহায়তা চান শিক্ষামন্ত্রী। যুক্তরাজ্যের লন্ডন বোরো অব ক্যামডেনের মেয়র নাদিয়া শাহর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে লিডার অব দ্য কাউন্সিল সারাহ হ্যাওয়ার্ডসহ পাঁচ কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী প্রতিনিধিদলকে বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সহযোগিতা করে আসছে। ভবিষ্যতে এ সহযোগিতা আরও জোরদার হবে বলে আমরা ব্শ্বিাস করি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ড্রপ-আউট অনেক কমে এসেছে। স্কুলে যাওয়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে জেন্ডার সমতা অর্জিত হয়েছে। স্কুলগুলোতে মেয়েদের সংখ্যা এখন ছেলেদের চেয়ে বেশি। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি সেলাঙ্গরের ডেপুটি ভাইস-চ্যান্সেলরের সাক্ষাত ॥ মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি সেলাঙ্গর ডেপুটি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ নর বিন নাওয়াই সোমবার ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নানের সঙ্গে তার দফতরে এক সৌজন্য সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে তার সঙ্গে ছিলেন ইউনিভার্সিটি সেলাঙ্গর ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. মোখতার বিন আবদুল্লাহ। অধ্যাপক আবদুল মান্নান প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক চিত্রসহ ইউজিসির ভূমিকা এবং কার্যাবলী সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন। সাক্ষাতকালে প্রতিনিধি দলটি জানায়, ইউনিভার্সিটি সেলাঙ্গর এদেশে উচ্চ শিক্ষায় অবদান রাখার জন্য তাদের শাখা ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রতিনিধিদল এদেশে তাদের শাখা ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য ইউজিসি এবং বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চায়। চেয়ারম্যান বলেন, বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উচ্চ শিক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণে বিশ্বাসী। তবে উচ্চ শিক্ষাস্তরে শিক্ষার গুণগতমান অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। ইউজিসির পক্ষ থেকে তিনি প্রতিনিধিদলকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ^াস দেন।
×