ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরির বিষয় সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব নয় ॥ অর্থমন্ত্রী

বাংলাদেশের আর্থিক খাত উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক রোডম্যাপ করছে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশের আর্থিক খাত উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক রোডম্যাপ করছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন অর্থবছর সামনে রেখে বাংলাদেশের আর্থিক খাত উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের টাকা নিয়ে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন বাহাদুরি করছে। চুরি হওয়া রিজার্ভের অবশিষ্ট টাকার সম্পূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। কিছু টাকা ফেরত পেয়েছি বাকি টাকার বিষয়ে ফিলিপাইনের পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। সোমবার সচিবালয়ে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি এবং ব্রিটিশ মেয়রদের একটি প্রতিনিধিদল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এরপর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রোডম্যাপের আওতায় বিশ্বব্যাংকের আইডিএ তহবিল থেকে গুরুত্বপূর্ণ তিন খাতের জন্য ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। এছাড়া আগামী জুনের মধ্যে আইডিএ তহবিল থেকে ঋণ হিসেবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার আসবে। শীঘ্রই বিশ্বব্যাংকের এ তহবিল অনুমোদন হবে। তিনি বলেন, পেনশন ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, সর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন এবং দুর্নীতি বন্ধে বিশ্বব্যাংকের ঋণ কাজে লাগানো হবে। বর্তমান রেমিটেন্সের প্রবাহ কিছুটা শ্লথ হলেও ব্যালেন্স অব প্যামেন্ট অনুকূলে রয়েছে। এ কারণে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কোন সমস্যা তৈরি হবে না। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার ভাল হচ্ছে। এই বাজার যাতে আরও ভাল চলে সে ব্যাপারে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দেশে বন্ড মার্কেট নেই। শীঘ্রই বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তোলা হবে। তিনি বলেন, বন্ডের টাকা দেশের বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। এদিকে, বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আগামী তিন বছরে ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে প্রদান করবে বিশ্বব্যাংক নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ)। যার মধ্যে বাংলাদেশ একাই পাবে মোট বরাদ্দের ৯ শতাংশ। যার অর্থের পরিমাণ সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একক দেশ হিসেবে এ পরিমাণ অর্থ বিশ্বের আর কোন দেশকে দিচ্ছে না সংস্থাটি। এ অর্থ ব্যয় হবে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দাবি, আগামী তিন বছরে আইডিএ ঋণের প্রতিশ্রুতি ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কেননা বিশ্বব্যাংক এই স্ট্র্যাটেজি প্ল্যানের আওতাই বাংলাদেশের সঙ্গে এরই মধ্যে ১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সম্পাদন করেছে। এদিকে, অনমনীয় ঋণ কর্মসূচী স্কেল-আপ ফ্যাসেলিটির (এসইউএফ) আওতায় তিন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ নেয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ঋণ তহবিলের ৩৯০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। উদ্বৃত্ত এ অর্থে স্কেল-আপ ফ্যাসেলিটি (এসইউএফ) নামে একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এসইউএফ কর্মসূচীর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, যেসব প্রকল্প উন্নয়নে বেশি প্রভাব ফেলে এবং আইডিএ ১৭ এর প্রাধিকারের সঙ্গে বেশি সঙ্গতিপূর্ণ সেগুলোতে অনমনীয় শর্তে অতিরিক্ত অর্থায়ন করা হয়। সংস্থার আইডিএ ১৭ প্যাকেজের পাশাপাশি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবে। শর্তপূরণ সাপেক্ষে এ তহবিল থেকে বাংলাদেশ ৩৫ কোটি ডলারের ঋণ পাবে। বাংলাদেশ আইডিএ- দেশ হওয়ায় শুধু ফিক্সড ইন্টারেস্ট রেটে (স্থির সুদের হার) এসইউএফ থেকে ঋণ নিতে পারবে। তবে এসডিআর ছাড়াও এসডিআরভুক্ত চারটি মুদ্রার (মার্কিন ডলার, ইউরো, পাউন্ড ও জাপানিজ ইয়েন) যে কোন একটি মুদ্রায় সিঙ্গেল কারেন্সি লেন্ডিং (এসসিএল) কর্মসূচীর আওতায় এ ঋণ নেয়া যাবে।
×