ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সাত খুন সম্পর্র্কে আইনমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

গণপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে, প্রমাণ হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীন

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

গণপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে, প্রমাণ হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার রায়ে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের ‘বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন তা প্রমাণিত হয়েছে। এ সরকারের আমলে ন্যায়বিচার যে হয়, সাত খুনের মামলার এ রায়ই তার প্রমাণ।’ এ রায়ের মধ্য দিয়ে জনগণের ভীতি দূর হবে। এ মামলায় র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ১৬ র‌্যাব সদস্যের মৃত্যুদ- এবং নয় জনের কারাদ-ের সাজা হলেও তাতে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়নি। এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের জন্য মেসেজ। রায় ঘোষণার পর এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সরকারের তিন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল সাঈদ তারেকসহ ২৬ জনের ফাঁসি ও বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ রায় প্রদান করেন। এই চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষণার পর পরই আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমার মনে হয় জনগণ এ রায়ে সন্তুষ্ট হবে এবং ঘৃণ্য অপরাধে যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছিল সেই ভীতি দূর হবে’। ‘এই অপরাধে যে নৃশংসতার পরিচয় দেয়া হয়েছে তার প্রমাণ আদালত পেয়েছে। তাতে আদালত ফাঁসির যে রায় দিয়েছে এটা এ্যাডভোকেট হিসেবে আমি কর্তব্য বলে মনে করি। আমি মনে করি, সঠিক রায় হয়েছে। এই রায়ে জনগণ সন্তুষ্ট হবে। অপরাধী যেই হোক তার শাস্তির বিষয়ে মানুষের মন থেকে ভীতি দূর হবে।’ সচিবালয়ে সাত খুনের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। রায় কার্যকরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রায় কার্যকরের বিষয়টি পরবর্তী কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করছে। এটি প্রথমে হাইকোর্টে যাবে, তারপর আপীল বিভাগে যাবে। সময় কতদিন লাগবে তা আদালতের ওপর নির্ভর করছে।’ ‘যেই অপরাধ করুন তাকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। রাষ্ট্র এ কাজটিই করেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোন মামলার ফাঁসির আদেশ হলে অনুমোদনের জন্য সাত দিনের মধ্যে রায়ের নথি হাইকোর্ট বিভাগে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন হাইকোর্ট ডিভিশন দ- বহাল রাখলে আপীল করার সুযোগ থাকবে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হলে রায় কার্যকর হবে। ওবায়দুল কাদের ॥ নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় নিম্ন আদালতের দেয়া রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার রায়ের পর সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, ‘আদালত যে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন; আমরা আশা করি নিম্ন আদালতের এ রায় উচ্চ আদালতেও একই থাকবে, বজায় থাকবে।’ রায়ের পর দুপুরে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। এ সরকারের আমলে ন্যায়বিচার যে হয়, সাত খুনের মামলার এ রায়ই তার প্রমাণ।’ সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অপরাধ করে কেউ পার পাবে না, সে যত প্রভাবশালীই হোক। এদেশে আর বিচারহীনতা সম্ভব নয়।’ অপরাধ করে কেউই বিচারের হাত থেকে রেহাই পাবে না। শৃঙ্খলাবাহিনীর বিপথগামীদের জন্য মেসেজÑ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের জন্য মেসেজ বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া এ সাত খুনের মামলায় র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ১৬ র‌্যাব সদস্যের মৃত্যুদ- এবং নয় জনের কারাদ-ের সাজা হলেও তাতে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়নি বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, এ রায়ে প্রমাণ হয়, কেউই আইনের উর্ধে নয়। সচিবালয়ে সোমবার রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এ রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের জন্য কোন মেসেজ কিনা- এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অবশ্যই এটা মেসেজ। এটা মেসেজ যে, কেউ বাদ যাবে না। যারা দুষ্কর্ম করবে, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হোক, কিংবা যেই হোক। কেউ আইনের উর্ধে নেই সেটাই মেসেজ, সেটা ক্লিয়ার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর এর নৃশংস ও নির্মমতায় আমরা হতবাক হয়েছিলাম। আমার প্রতিক্রিয়া আপনাদের মতোই। আমাদের তদন্তকারী বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী সঠিকভাবেই চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য চার্জশীট দিতে পেরেছিল। সেজন্য একটি জাতি ও ভিকটিম যারা তারা সঠিক বিচার পেয়েছে। র‌্যাব প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর দায় তাদের ওপর আসে কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে তো কোন প্রশ্নই আসে না। প্রতিষ্ঠান দায়দায়িত্ব নেবে কেন? প্রতিষ্ঠান যদি দায়দায়িত্ব নিত তবে এর (বিচারের) বিরুদ্ধে দাঁড়াত। যারা দ-িত হয়েছেন তাদের সমস্ত সঠিক তথ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে দিয়েছে। এজন্য এগুলো ধরার সুযোগ হয়েছে, চার্জশীট দেয়ার জন্য। তাদের দুষ্ককর্মগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। এ রায়ের পর র‌্যাবের কার্যক্রমে কোন পরিবর্তন আনা প্রয়োজন মনে করেন কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, র‌্যাবের এতগুলো সদস্য ছিল, এরা সবাই বিপথগামী। কোন আইনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উৎসাহিত করে না এসব কর্মকা- করতে বরং নিরুৎসাহিত করে। তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা নিজেরাই বিপথগামী হয়েছে। কাজেই কোন আইন পরিবর্তনের কোন প্রশ্ন আসে না। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যদি তারা বের হয়ে যেত তবে আইন পরিবর্তনের প্রশ্ন আসত। পলাতক আসামিদের খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা রয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ্যাটর্নি জেনারেল ॥ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের মামলার রায়ে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সোমবার সুপ্রীমকোর্টের নিজ কার্যালয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মাহবুবে আলম বলেন, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক, যে বাহিনীর হোক আইনের উর্ধে কেউ নয়। অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে। তিনি বলেন, সাত খুনের ঘটনায় মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসলে তা দ্রুত শুনানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এবং বিচারিক আদালতের সাজা বহাল রাখতে চেষ্টা করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
×