ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করলেন ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগ আমলে যে ন্যায়বিচার হয় ৭ খুনের রায়ে তা প্রমাণিত হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

আওয়ামী লীগ আমলে যে ন্যায়বিচার হয় ৭ খুনের রায়ে তা প্রমাণিত হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে সোমবার আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে এসে দুর্বিষহ কঠিন সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদলেন আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষ। পুড়ে যাওয়ার পরবর্তী তাদের যন্ত্রণাদগ্ধ জীবন সংগ্রামের কথা আবেগতাড়িত করেছেন শ্রোতাদেরও। ২০১৪ সালের আলোচিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল ও বীভৎস্য সহিংসতার দুঃসহ স্মৃতির কথা উল্লেখ করে পুড়ে যাওয়া মানুষরা নিজেরা কাঁদলেন এবং শ্রোতাদেরও কাঁদালেন। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপপরিষদের আয়োজনে বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল তা-ব ও অগ্নিসন্ত্রাসের খ-চিত্র প্রদর্শণ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে খালেদা জিয়াই সংলাপের পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছেন। যারা গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না করেন তাদের আগুন সন্ত্রাসে পঙ্গু হওয়া মানুষের আহাজারি, আর্তনাদের জবাব দেবে কে? তারা গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য মায়াকান্না করছেন, নাকি গণতন্ত্র হত্যার জন্য মায়াকান্না করছেন? দেশবাসীকে এদের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে ঘাতক পেট্রোলবোমায় সর্বাঙ্গ পুড়ে যাওয়ার দুর্বিষহ যন্ত্রণার কথা তুলে ধরে পুলিশের এসআই পিয়ারুল ইসলাম কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, কী অপরাধ ছিল আমার? সরকারী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পেট্রোলের আগুনে পুড়তে হলো আমাকে। বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ে শরীরের ৪৬ ভাগ পুড়ে যায় আমার। বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছি। পরে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়ে দুই মাস পর ফিরেছি। কিন্তু এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারি না। আমি তাদের বিচার চাই। বগুড়ার ট্রাক চালক পটল মিয়া তার পুড়ে যাওয়ার স্মৃতি বর্ণনা করে বলেন, আমার আপন ভাইও যদি এ অপরাধ করে থাকে, তবে তারও যেন কঠিন শাস্তি হয়। রিক্সাচালক অমূল্য চন্দ্র বর্মণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, পঞ্চগড় থেকে পেটের দায়ে নারায়ণগঞ্জ এসে রিক্সা চালানো শুরু করি। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার সময় তেজগাঁওয়ে আমাকে পেট্রোলবোমা মেরে পুড়িয়ে দেয়া হয়। ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানান, চট্টগ্রামে আলু নিয়ে যাওয়ার সময় বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। আগুন লাগানোর পর ট্রাক থেকে যেন বের হতে না পারি সে ব্যবস্থাও করে সন্ত্রাসীরা। আমার হাত, মাথা, শরীর পুড়ে যায়। আমি এই তা-বের বিচার চাই। এ ঘটনার পর তার ছেলের পড়াশোনা বন্ধ যায় বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া কক্সবাজার থেকে যশোরে ঘরে ফেরার সময় শিশু মায়শা ও তার বাবা পেট্রোলবোমায় পুড়ে মারা যান। অনুষ্ঠানে মায়শার মা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, চোখের সামনে শিশুসন্তান ও স্বামীকে পুড়ে যেতে দেখেছি। আমাদের কী অপরাধ ছিল? আমার সন্তান বাঁচার জন্য কাঁদছিল, কিন্তু আমি বাঁচাতে পারিনি। তিনি বলেন, আমার মায়শার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবে। আমি ডাক্তার মায়শার মা হয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম, মৃত মায়শার মা হয়ে বাঁচতে চাইনি। আমি ১৬ কোটি মানুষের পক্ষ থেকে এর বিচার চাই। আল্লাহ যেন আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে আর রাজনীতির শিকার না বানান। এ সময় মিলনায়তনে থাকা শ্রোতার অনেকেই আবেগে নিজেদের চোখের পানি আটকাতে পারেননি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বিএনপির সঙ্গে কোন ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, সব সমস্যার সমাধান হবে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানে যদি সংলাপের কোন সুযোগ থাকে, তাহলে গণতন্ত্রের জন্য সংলাপ হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যারা দুই নেত্রীকে সংলাপে বসাতে চান, তাদের বলব ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট কিংবা পুত্র শোকে শোকাহত মা খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে শেখ হাসিনার ফিরে আসা, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার কথা স্মরণ করুন। এখন যে বিষয়ে সংলাপ তা নিয়ে তো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। তাহলে আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কিসের সংলাপ? সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী নির্বাচন হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের প্রস্তাব খালেদা জিয়া কি অশ্রাব্য, নোংরা ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছিল, এটা আমরা ভুলে যাইনি। এখন সংলাপের কথা বলছেন, সেদিন কেন সংলাপ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন? আর এই প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে খালেদা জিয়াই সংলাপের পরিবেশ নষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, পুত্র শোকে শোকাহত মা খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর খালেদা জিয়া গেটের দরজায় তালা ও ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছিলেন। এভাবে ঘরের দরজা বন্ধ করে সংলাপের দরজাও উনি বন্ধ করেছিলেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না করেন তাদের আগুন সন্ত্রাসে পঙ্গু হওয়া মানুষের আহাজারি, আর্তনাদের জবাব দেবে কে? নির্বিচারে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার জবাবইবা কে দেবে? অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় নি¤œ আদালতের দেয়া রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আদালত ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। এ সরকারের আমলে দেশে যে ন্যায় বিচার হয় সাত খুনের মামলার রায়ের মাধ্যমে সেটা প্রমাণিত। একই সঙ্গে প্রমাণ হয়েছে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। যত শক্তিশালী কিংবা প্রভাবশালী হোক না কেন, অপরাধ করে কেউই বিচারের হাত থেকে রেহাই পাবে না। এদেশে আর বিচারহীনতা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার শিকার নায়েক দুলু মিয়া, নিহত মাইশার মা মারুফা খাতুন, পিয়ারুল ইসলাম, ট্রাক চালক পটল মিয়া, আলু ব্যবসায়ী রেজাউল করিম, কাভার্ডভ্যান চালক মিষ্টি মিয়া ও রিক্সাচালক অমূল্য চন্দ্র বর্মণকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।
×