ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাচার চলছেই

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

পাচার চলছেই

ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৪শ’ নারী ও শিশু পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে। সেন্টার ফর উইমেন্স এ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজের তথ্যানুসারে প্রতি মাসে বিদেশে পাচার হয় ১০০ শিশু এবং ৫০ জনের বেশি নারী। অন্যদিকে মহিলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৫৮ জন পাচার, ১২৮ জন নিখোঁজ, ১৪১ জন অপহরণ এবং ২২২ জন নারী উদ্ধারের তথ্য প্রদর্শিত হয়েছে গণমাধ্যমে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ৮০৩টি মামলা হয়েছে, যেখানে ৪৭৭ জন নারী ও শিশু হয়েছে পাচারের শিকার। তবে দুঃখজনক হলো, গত ১১ মাসে মাত্র ৪ জন অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়েছে বিচারিক প্রক্রিয়ায়। বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারের বিধান থাকলেও মামলার গতি অত্যন্ত শ্লথ। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ পাস হয়। আইনে মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন কারাদ- অথবা অর্থদ-ের বিধান রয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো, চার বছর পার হলেও আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি। ফলে নারী ও শিশু পাচার বাড়ছেই। সেই আদিকাল থেকেই প্রচলিত মানব পাচার বা দাস ব্যবসা। এমনকি এক দেশ থেকে জোরপূর্বক নর-নারী ও শিশু ধরে নিয়ে অন্য দেশে পাচার ও বেচাকেনার খবরও মেলে। দুঃখজনক হলো, এখনও তা কমেনি। বরং নানা কায়দায়, নানারূপে বিভিন্ন প্রকরণ ও ছদ্মাবরণে মানব পাচার হয়েই চলেছে এবং তা আন্তর্জাতিক পরিম-লে পরিব্যাপ্ত। আরও যা দুঃখজনক তা হলো, মানব পাচারের অন্যতম লক্ষ্য থাকে নারী ও শিশু। বাংলাদেশীরা প্রধানত পাচার করা হয়ে থাকে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, লেবানন, জর্দান ও সংলগ্ন দেশগুলোতে। পাকিস্তান ও ভারতেও পাচার করা হয়। এর মধ্যে পুরুষরা প্রধানত কৃষি শ্রমিক, কলকারখানা ও হোটেল-রেস্তরাঁয় উদয়াস্ত পরিশ্রম করে কায়ক্লেশে জীবন নির্বাহ করতে পারলেও নারী ও শিশুদের অবস্থা খুবই করুণ। অধিকাংশ নারীর ঠাঁই হয় গৃহকর্মে অথবা যৌনপল্লীতে। গৃহকর্মে নিযুক্ত নারীদেরও নানা অপকর্ম করতে বাধ্য করা হয়। শিশুদের অবস্থা হয় আরও শোচনীয়। মধ্যপ্রাচ্যে শিশুদের উটের জকি হিসেবে ব্যবহারের রেওয়াজ আছে। আরও যা করা হয় তা হলো কিডনি-লিভারসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবসা। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর দালাল প্রলোভনের ফাঁদ পাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। অভাব-অনটনে অথবা প্রলোভনে পড়েই মানুষ তাতে পা দেয়। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দালালের হাতে তুলে দেয়াসহ পিতা-মাতা কর্তৃক শিশু বিক্রির খবরও দুর্লভ নয়। সময় সময় দালাল চক্রের কতিপয় সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও অধিকাংশই থেকে যায় অধরা। আর রাঘববোয়ালদের ধরার তো প্রশ্নই ওঠে না। মার্কিন মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে বাংলাদেশকে মানব পাচারে নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক হতে হবে। সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি দেশেই গড়ে তুলতে হবে কর্মসংস্থান। নারী ও শিশুর জন্য সৃষ্টি করতে হবে অধিকতর সুযোগ। জীবন-জীবিকার জন্য কোন অবলম্বন ও আশ্রয় খুঁজে পেলে মানুষ আর সহজে প্রলোভনে পা দেবে না।
×