ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এমপি রানাসহ তিনভাইকে আ’লীগ থেকে বহিষ্কার

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

এমপি রানাসহ তিনভাইকে আ’লীগ থেকে বহিষ্কার

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তাঁর তিন ভাইকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। সোমবার সকালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের সভাপতিত্বে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এবং তা চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে কেন্দ্রিয় কমিটির কাছে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ মিলনায়তনে কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরী সভা শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আড্যাভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের জানান, আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যায় এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তাঁর ভাইদের নামে পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে। এছাড়া কারাগারে আটক অবস্থায় এমপি রানা ঘাটাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও জিবিজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভিপি আবু সাঈদ রুবেলকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই খুনি চক্রের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল বলেন, সভার কার্যবিবরণী কেন্দ্রে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। বহিস্কৃতরা হলেন- টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমানুর রহমান খান রানা, টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তি, কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা এবং টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্টির সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য জাহিদুর রহমান খান কাকন। তাদেরকে বহিস্কার ঘোষনার পরপরই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরে আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক বলেন, যারা হত্যাকারী বলে আসামী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে তাদেরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ তিনভাইকে বহিষ্কারের পর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিহত মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ। এ সময় তিনি স্বামীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে বলেন, চুড়ান্তভাবে এই সন্ত্রাসী পরিবারকে দল থেকে বহিষ্কার করবে নেত্রী, এমনটি আমি আশা করি। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় এমপি আমানুর রহমান খান রানা, তাঁর তিনভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে গত ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এই চার ভাইসহ ১০ অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে হুলিয়া ও ক্রোক পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পুলিশ এমপি রানা ও তাঁর ভাইদের বাড়ি থেকে গত ২০ মে মালামাল ক্রোক করে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় এমপি রানা ও তাঁর ভাইদের জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে বের হয়ে আসে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তার পরপরই জাহিদুর রহমান খান কাকণ ও সানিয়াত খান বাপ্পা দেশ ত্যাগ করেন। গত বছরের নবেম্বরে এমপি রানা ও তাঁর অপর ভাই সহিদুর রহমান খান মুক্তি আত্মগোপনে চলে যান। তাঁরা আত্মগোপনে যাওয়ার পর টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সহিদুর রহমান খান মুক্তি সাধারণ সম্পাদক পদ হারান। গত অক্টোবরে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের জেলা কমিটি বিলুপ্ত হলে এমপি আমানুর রহমান খান রানা ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের পদ চলে যায়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলে এমপি আমানুর রহমান খান রানা বা তাঁর কোনো ভাইকে কোনো পদে রাখা হয়নি। পুলিশি তদন্তে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় এমপি রানা ও তাঁর ভাইদের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসার পরই তাঁদের দল থেকে বহিষ্কারের জোরালো দাবি ওঠে। ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৪ সালের আগস্টে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতে দেয়া তাঁদের জবানবন্দিতে ফারুক আহমেদের হত্যার সঙ্গে এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তাঁর ভাইদের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এছাড়া গত ৯ নবেম্বর রাতে ঘাটাইল এলাকায় অস্ত্রধারীরা ঘাটাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও জিবিজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভিপি আবু সাঈদ রুবেলের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার আসামি আব্দুর জুব্বার গত ২০ ডিসেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি বলেন, জেলে বসে এমপি রানার পরিকল্পনা ও নির্দেশে তাঁরা আবু সাঈদ রুবেলকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, জুব্বারের দেয়া জবানবন্দি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে এ মামলার অভিযোগপত্রে এমপিকে আসামি করা হবে।
×