ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারিসে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা শুরু

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

প্যারিসে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা শুরু

অনলাইন ডেস্ক ॥ ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়াকে হিমঘর থেকে বের করে আনার নতুন এক চেষ্টা শুরু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসে এ নিয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে গতকাল রবিবার। এতে বিশ্বের ৭০ টির মত দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। তবে ইসরাইল সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ব নেতারা এই সম্মেলন থেকে নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিতে পারেন। এ ধরণের সস্মেলন করে আদৌ কোনো লাভ হবে কি না তা নিয়ে অধিকাংশ পর্যবেক্ষক সন্দিহান। কারণ ইসরাইল প্যারিসের এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না, বরঞ্চ এটিকে নিয়ে তামাশা করেছে তারা। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্মেলনকে ‘অর্থহীন’ উল্লেখ করে বলেছেন, আগামীর পৃথিবী বদলে যাবে। অন্যদিকে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ট্রাম্পের নীতি এখনও অস্পষ্ট। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানায়, প্যারিসে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করতে গিয়ে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ মার্ক অ্যারো বলেছেন, এর তিনটি লক্ষ্য। প্রথমত, দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারকে পুনরায় ব্যক্ত করা। দ্বিতীয় হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট সমাধানের জন্য সরাসরি আলোচনা করতে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিন- এই দুটো পক্ষকেই উত্সাহিত করা। এবং তৃতীয়ত, ভবিষ্যতের জন্যে একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করা। ফ্রান্স বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে গুরুতর এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে এমন এক অবিশ্বাস ও অনাস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যে সেখানে নতুন করে আলোচনায় না বসলে বড় রকমের সহিংসতা অবশ্যম্ভাবী। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, আমাদের সবার দায়িত্ব হলো ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা। আমরা জানি এই কাজটা কঠিন। কিন্তু এর কোন বিকল্প নেই। কারণ একমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সঙ্কটের দুই রাষ্ট্র-ভিত্তিক সমাধান ঘটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ফ্রান্সের এই বক্তব্যের সাথে কিছুটা একমত ফিলিস্তিন। তারা সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু ইসরাইল এসব মানতে রাজি নয়। ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এধরনের সম্মেলনকে মেনে নিতে পারেননি। দেশটি বলছে, তাদের বিরুদ্ধেই এই সম্মেলন ডাকা হয়েছে। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন জানায়, নেতানিয়াহু বলেন, প্যারিসে যে সম্মেলন হচ্ছে তার কোন তাত্পর্য নেই। ফরাসি ও ফিলিস্তিনিরা মিলে এটা করেছে। তিনি বলেন, নতুন পৃথিবী আসছে। তখন সব বদলে যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করে আছেন। এরপরই তাদের নীতি বাস্তবায়িত হবে বলে তার আশা। নেতানিয়াহুর কথায়, সম্মেলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইসরাইলের ওপর কিছু কিছু জিনিস চাপিয়ে দেয়া যা ইসরাইলের প্রয়োজন নেই। এর ফলে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে ব্যবধান আরো বাড়বে। এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা পরিবর্তনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে বড় রকমের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দীর্ঘদিনের মার্কিন নীতি ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নিতে পারেন। ফ্রান্সে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক এই সম্মেলনে যোগ দেয়া অনেকেই একে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন। এই সম্মেলন থেকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিতে পারেন। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের দিকেই বেশি জোর দিচ্ছেন। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেমের অধিগ্রহণকে বহু দেশই মেনে নিতে পারেনি। সেকারণে তেল আবিবেই তাদের দূতাবাস কাজ করছে। জাতিসংঘও জেরুজালেমকে ইসরাইলের অধিকৃত এলাকা বলে মনে করে। সেখানে ইহুদি বসতি নির্মাণ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি একটি প্রস্তাবও পাস হয়েছে জতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে।
×