ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাড়তি দিন চালু রাখতে ঠাকুরগাঁও চিনিকল শ্রমিকদের কৌশল

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

বাড়তি দিন চালু রাখতে ঠাকুরগাঁও চিনিকল শ্রমিকদের কৌশল

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৫ জানুয়ারি ॥ ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে ঠাকুরগাঁও চিনিকলকে মাড়াই মৌসুমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিন চালু রাখার কৌশল বেছে নিয়েছে কিছু শ্রমিক। তারা সেখানে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আর এতে সহযোগিতা করছে শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু নেতাকর্মী। চিনিকলের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী অভিযোগ করেন, এই চিনিকলের আওতায় মাঠে যে আখ রয়েছে তা দিয়ে ৪০ দিনের বেশি চিনিকল চালু রাখা সম্ভব নয়। মৌসুমী শ্রমিকেরা শর্ত অনুযায়ী চিনিকল চালু থাকা পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা পান। চিনিকলটি যাতে ৪০/৪৫ দিনের স্থলে ৭০/৮০ দিন চালু রাখা যায় এজন্য তারা কৃত্রিম শ্রমিক সংকট সৃষ্টি করে আখ পরিবহন বাধাগ্রস্ত করছেন। এতে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় আখ না পেয়ে চিনিকলটি মাঝে মাঝেই আখ মাড়াই না করেই (নো-কেইন) চালু রয়েছে। তাছাড়া ডোঙ্গায় কম আখ ফেলে চিনিকল বেশিদিন চালু রাখার কৌশলও বেছে নিয়েছে তারা। ফলে একদিকে চিনি উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে চিনিকলকে বেশিদিন চালু রাখতে হবে বলে কর্তৃপক্ষ মৌসুমী শ্রমিকদের বেশি টাকা পরিশোধ করতে হবে। শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু প্রতিনিধি পরোক্ষভাবে এই কাজে সহযোগিতা করছেন বলেও অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন। এ ব্যাপারে চিনিকল আখচাষী শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সেন্টারগুলোতে ট্রাক্টরের ট্রলিতে আখ লোড ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলে মিল প্রতিদিন পর্যাপ্ত আখ পাচ্ছে না। মাঠে আখ না থাকায় ৭ জানুয়ারি রুহিয়া আখ ক্রয় কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ৪/৫ দিনের মধ্যে আরো কয়েকটি সেন্টার বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। চিনিকলের এমডি প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন অতিরিক্ত দিন মিল চালু রাখার কৌশল সম্পর্কে বলেন, কিছু কিছু শ্রমিকের এ ধরনের মনোভাব থাকতে পারে, কিন্তু তার কোনো আলামত তিনি দেখতে পাননি। তিনি বলেন, এখন মিল খুব ভালভাবে চলছে। তিনি বলেন, শনিবার সকাল পর্যন্ত মিল ৩১ হাজার ৫শ’ ৪৫ মে.টন আখমাড়াই করে ২ হাজার ২শ’ ৫ মে.টন চিনি উৎপন্ন করেছে। চিনি আহরণ হার ছিল গড়ে ৫.৪৭ শতাংশ। এদিকে চলতি মৌসুমে ৩০/৩২ জন মৌসুমী শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। চিনিকলের গোবিন্দনগর, পটুয়াডাঙ্গী, মিল এরিয়া, জামালপুর, সালন্দর, কহরপাড়া, হাবিবপুর ও বোচাগঞ্জ খামারে মোট ৮৪২ জন স্থায়ী কৃষি শ্রমিক রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁও চিনিকলে যে ১ লাখ ১০ হাজার মে.টন আখমাড়াই করে ৭ লাখ ৯ শ’ ৭৫ মে.টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা। গত কয়েক বছরের আখমাড়াই ও চিনি উৎপাদনের পরিমাণ পর্যালোচনা করলে ও মাঠের আখের পরিমাণ নিরূপণ করলে দেখা যাবে ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এবার সর্বোচ্চ ৬ হাজার মে.টনের বেশি চিনি উৎপাদন হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর চিনিকলটি মাত্র ৫৮ হাজার ৪শ’ ৪৫ মে.টন আখ মাড়াই করে মাত্র ৩ হাজার ৩ মে.টন চিনি উৎপন্ন করে। চিনি আহরণ হার ছিল মাত্র ৫.১৪ শতাংশ। সেই তুলনায় এবারের লক্ষ্যমাত্রা কোন কারণ ছাড়াই দ্বিগুণ দেখানো হয়েছে। নড়বড়ে জরাজীর্ণ এই মিলে এবারে চিনি আহরণ হার ধরা হয়েছে অবিশ^াস্য- ৭.২৫ শতাংশ। এ ব্যাপারে চিনিকলের এমডি প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন লক্ষ্যমাত্রা বেশি হয়েছে স্বীকার করে বলেন, আসলে লক্ষ্যমাত্রা বেশি না থাকলে চেষ্টা থাকবে না। সবাই যাতে চেষ্টা করে সেজন্যই হেডঅফিস থেকে বেশি টার্গেট দেয়। গত ১৫ ডিসেম্বর চিনিকলে চলতি মৌসুমের আখমাড়াই শুরু হয়েছে। জরাজীর্ণ এই মিল যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝেমাঝেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে মাঠ পর্যায় থেকে আখ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় এবার চিনি উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
×