ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে যাবতীয় কার্যক্রম

প্রস্তুত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম মীরসরাই ইকোনমিক জোন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

প্রস্তুত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম মীরসরাই ইকোনমিক জোন

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে মীরসরাই ইকোনমিক জোন। সাগরপাড়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে মাটি ভরাট, চার লেনের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুত সংযোগ স্থাপনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ। দেশের বৃহত্তম এই অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগে ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেক চীনা ও জাপানী প্রতিষ্ঠান। পিছিয়ে নেই দেশী উদ্যোক্তারাও। শিল্প স্থাপনের জন্য ভূমি বরাদ্দে আগামী এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা)। রবিবার চট্টগ্রামে রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউতে আয়োজিত বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ বিষয়ক সেমিনারে এ তথ্য প্রকাশ করে বেজা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যেই চীনের অনেক প্রতিষ্ঠান মীরসরাই ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। সে দেশে শ্রমের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ এখন অনুকূল স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জাপানও এখন চায়না প্লাস ওয়ান খুঁজছে। সে কারণে জাপানী বিনিয়োগকারীরাও বেশ আগ্রহী। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সামগ্রিক পরিবেশ প্রভাবমুক্ত রাখা গেলে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিনিয়োগ পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তার বক্তব্যে বেজা চেয়ারম্যানকে আশ্বস্ত করে বলেন, মীরসরাই আমার এলাকা। সেখানে কোন মহল প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার। বিনিয়োগের জন্য যা যা করা দরকার সবই করুন। মন্ত্রী বলেন, মীরসরাই বাংলাদেশের ল্যান্ডব্যাংক। একসঙ্গে ৩০ হাজার একর জায়গা এখনই পাওয়া গেছে। পর্যায়ক্রমে এ জোন ৫০ হাজার একর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যাবে। বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি জমি রক্ষা করে অকৃষি জমিতে শিল্পায়নের পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়াতে চান কৃষি জমি নষ্ট না করেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশে ১শ’টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফে হচ্ছে বিশেষ ট্যুরিস্ট জোন। তবে বিনিয়োগ আকর্ষণে ট্যাক্স হলিডে এবং আরও কিছু ইনসেনটিভ থাকা উচিত বলে গণপূর্তমন্ত্রী অভিমত রাখেন। বেজা নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, মীরসরাই ইকোনমিক জোন শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি হবে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক জোন। সেখানে অবকাঠামো সৃষ্টির কাজ এগিয়ে চলেছে। ভূমি বরাদ্দের জন্য এক মাসের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। তিনি জানান, চলতি বছরে মীরসরাই ইকোনমিক জোনে ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার কাজ হবে। এর মধ্যে ইকোনমিক জোনে কানেকটিভিটি স্থাপনের লক্ষ্যে ১২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে হচ্ছে সাড়ে ১৮ কিলোমিটার মেরিনড্রাইভ সড়ক, যা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ সড়কের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কগুলোও চার লেনে উন্নীত হবে। ২৯২ কোটি টাকায় স্থাপন করা হচ্ছে শিল্পের জন্য গ্যাস পাইপ লাইন। পানি নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রেখে ফেনী নদীর দুটি শাখা থেকে ৫টি সরোবর বা লেক সৃষ্টি করা হবে। প্রতিটি সরোবর হবে ১০০ থেকে ১২৬ একরের। ৪শ’ কেভি ক্ষমতার বিদ্যুত লাইনও বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া ইকোনমিক জোনকে কেন্দ্র করে হবে বন্দর জেটি। সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিন ও চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। পিপিপি বিশেষজ্ঞ নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিজনেস সেশনে আলোচনা করেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান, চায়না হারবার প্রতিনিধি বাই ইনঝান, জাইকা প্রতিনিধি মোতোয়ামা ঝুনিচিরো ও বেজার প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ। এ পর্বে শিল্পোদ্যাক্তারা ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথাও তুলে ধরেন।
×