ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

পাখিনৃত্য পরিবেশনায় উদ্্যাপিত বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্ব

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

পাখিনৃত্য পরিবেশনায় উদ্্যাপিত বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্ব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নৃত্যের ছন্দ তুলে মঞ্চে আসে মা পাখি। অভিব্যক্তির সঙ্গে মুদ্রার প্রকাশে নাচের আশ্রয়ে সযতেœ ফুটিয়ে তুলল শাবকগুলোকে। এরপর দেখা মিলল মা ও শিশু পাখিদের সুখময় দৃশ্যকল্প। সেই সুখের মাঝে অকস্মাৎ নেমে এলো বিপদের ঘনঘটা। পাখির ছানাদের ওপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ল বিশাল এক বাজপাখি। মা ও শিশু পাখিরা একত্রিত হয়ে গড়ে তুলল প্রতিরোধ। অবশেষে পরাজিত হলো হামলাকারী পাখিটি। রবিবার সন্ধ্যায় এই পাখি নৃত্যটি পরিবেশিত হলো শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল। উপলক্ষ ছিল বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বের উদ্্যাপন আর এ উদ্যাপনে দেশের শিল্পীদের সঙ্গে দর্শককে বিমোহিত করেছে চীনের হেনান আর্ট ট্রুপ। ৩৫ সদস্যের এই চীনা দলটি উপস্থাপন করে বহুমাত্রিক পরিবেশনা। অনবদ্য এ্যাক্রোবেটিকের সঙ্গে ছিল নাচ ও গানের মনমাতানো উপস্থাপনা। আজ সোমবারও একই স্থানে ও একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে এ পরিবেশনা। চীনা নববর্ষ উপলক্ষে এ সাংস্কৃতিক পরিবেশনাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ও চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং চীনের হেনান প্রদেশের প্রাদেশিক সরকার। গত বছরের অক্টোবরে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পাদিত যৌথ ইশতেহারে ২০১৭ সালকে বাংলাদেশ ও চীনের ‘২০১৭ : বন্ধুত্ব ও বিনিময়ের বছর’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারই অংশ হিসেবে রবিবার অনুষ্ঠিত হলো প্রথম আয়োজনটি। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিসচিব আক্্তারী মমতাজ, ঢাকায় চীনা দূতাবাসের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স ইয়াং শিচাও এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। আমরা সেই বন্ধুত্ব ও চীনা নববর্ষকে একযোগে উদ্্যাপন করছি। দুই দেশের সরকার প্রধানের স্বাক্ষরিত ইশতেহার অনুযায়ী আমরা বছরব্যাপী নানা কর্মসূচী নেব। শীঘ্রই বাংলাদেশের একটি সাংস্কৃতিক দল চীন সফর করবে। এছাড়াও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় প্রশিক্ষণ, বিশেষজ্ঞ বিনিময়, অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন এবং কারিগরি সহায়তা ইত্যাদি প্রাধান্য পাবে। আক্্তারী মমতাজ বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের এই বন্ধুত্বের বিনিময় হিসেবে শীঘ্রই দেশের একটি সাংস্কৃতিক দল তাদের পরিবেশনা নিয়ে হাজির হবে চীনে আর এই সাংস্কৃতিক বিনিময় দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করবে। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুরুতেই মঞ্চে আসে মুনমুন আহমেদ ও তার দল রেওয়াজ। ‘অভিযাত্রা’ শিরোনামের এ পরিবেশনায় তুলে আনা হয় পাখির জীবনসংগ্রাম। এর পর ঢাকা সাংস্কৃতিক দল সম্মিলিত কণ্ঠে চাইনিজ ভাষায় গান গেয়ে শোনান। তাদের পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসে হেনান আর্ট ট্রুপের শিল্পীরা। শুরুতেই তারা নৃত্যের ছন্দে তুলে আনেন চীনের বিভিন্ন ঐতিহ্য। এ সময় মঞ্চে থাকা বিশালাকৃতির এলইডি মনিটরে তুলে আনা হয় চীনের ঐতিহ্যবাহী নানা স্থাপনার আলোকচিত্র। এর পর মঞ্চে পরিবেশন করা হয় শাওলিন, যা কুংফু নামেই অধিক পরিচিত। হেনান প্রদেশ থেকেই শাওলিনের উৎপত্তি বিধায় এ পরিবেশনাটি ছিল মুগ্ধকর। এর পর ভায়োলিনসাদৃশ্য চীনা লোক বাদ্যযন্ত্রের পরিবেশনার শুরুতেই ছিল চীনের লোকজ গানের সুর। ঘোড়ার দৌড়ের শব্দের সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়। পরিবেশনার শেষ পর্যায়ে যন্ত্রে উঠে আসে ঘোড়ার হ্রেষা ধ্বনি। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির পথ’ গানটিও উঠে আসে চীনা যন্ত্রটি থেকে। এরপর ছিল দলটির নারী সদস্যদের পরিবেশনায় এ্যাক্রোবেটিক শো। শারীরিক কসরতের মধ্য দিয়ে তারা মুগ্ধ করেন দর্শকদের। সব মিলিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার এ আয়োজন পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দারুণ এ আয়োজন। ‘নায়করাজ রাজ্জাক : জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক সেমিনার ॥ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের অধীনে ‘নায়করাজ রাজ্জাক; জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক গবেষণা করছেন সাংবাদিক ও সঙ্গীতশিল্পী ইসমত জেরিন স্মিতা। এর গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ড. রশীদ হারুন। এ গবেষণা কর্মটির ওপর রবিবার সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় শাহবাগের বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ বেতার ট্রান্সমিশন সার্ভিস ভবনের প্রজেকশন হলে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজ্জাকের উপস্থিতির কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্র পরিচালক রহিম নওয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পার্ফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক রহমত আলী ও চলচ্চিত্র গবেষক চিন্ময় মুৎসুদ্দি। শুরুতে ‘নায়করাজ রাজ্জাক; জীবন ও কর্ম‘ শীর্ষক গবেষণাপত্র পাঠ করেন এর লেখক ইসমত জেরিন। এরপর পর্দায় রাজ্জাকের জীবনীর ওপর একটি ডকুমেন্টারি দেখান হয়। আলোচনানুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অভিনয়শিল্পী রাজ্জাক তিন প্রজন্মের কাছেই নায়ক। এক রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি কিভাবে সংস্কৃতিমনা হয়ে উঠলেন। একজন ফুটবলার হয়েও অভিনয়কে বেছে নিলেন। থিয়েটার থেকে রুপালি পর্দায়, এরপর নায়ক থেকে নায়করাজ সবই তুলে ধরার চেষ্টা রয়েছে এ গবেষণায়। তার জীবনের পরতে পরতে যে উত্থান ঘটেছে তারই সন্নিবেশ ঘটান হয়েছে এতে। অধ্যাপক রহিম নওয়াজ রাজ্জাকের ওপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে এগুলো এতে সংযুক্তির জন্য বলেন। বাংলা সিনেমার বিশ্ব যাত্রা শীর্ষক মুক্ত আলোচনা ॥ রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে রবিবার আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে ‘বাংলা সিনেমার বিশ্ব যাত্রা’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইমারজিং ফিল্ম ট্যালেন্ট এ্যাসোসিয়েশন (আইইএফটিএ) এবং ইন্টরন্যাশনাল ফিল্ম ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশের যৌথ অংশগ্রহণে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
×