ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্মরণসভায় বক্তারা

সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার ন্যায়বিচার অপরিহার্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার ন্যায়বিচার অপরিহার্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রদায়িকতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হলে স্বাধীন মতপ্রকাশ ও মুক্ত সাংবাদিকতা অপরিহার্য। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক মানিক সাহা সেই কাজই করেছেন। তিনি ধর্মান্ধতাসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লেখনীর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, তাদের রুখে দাঁড়াতে সাহস জুগিয়েছেন। এ কারণে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাই স্বাধীন মতপ্রকাশ ও মুক্তি সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে মানিক সাহা হত্যার ন্যায় বিচার অপরিহার্য। রবিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে কমরেড মণি সিংহ সড়কের মুক্তি ভবনে আয়োজিত এক স্মরণসভায় সাংবাদিক, রাজনীতিক ও মানবাধিকারকর্মীরা এসব কথা বলেন। বর্বরোচিত হত্যাকা-ের ত্রয়োদশ বার্ষিকীতে ‘মানিক সাহা হত্যার বিচারপ্রত্যাশী সংক্ষুব্ধ সমাজ’ এ কর্মসূচীর আয়োজন করে। পিটিবিনিউজবিডি.কমের প্রধান সম্পাদক আশীষ কুমার দে’র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা খুশী কবির, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুঁইয়া, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, চ্যানেল ২৪-এর সম্পাদক (কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স) রাহুল রাহা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সভাপতি শরিফুজ্জামান শরিফ, কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নিখিল ভদ্র প্রমুখ। সভার শুরুতে মানিক সাহার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মানিক সাহা ছিলেন একজন নীতিনিষ্ঠ সাংবাদিক ও খাঁটি দেশপ্রেমিক। সাম্প্রদায়িকতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বুর্জোয়া শাসক শ্রেণীর শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করে গেছেন তিনি। মৃত্যুর হুমকি পেয়েও চলার পথ থেকে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। তাঁর এ বিরোচিত আত্মদান সাহসী সাংবাদিকতার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে এবং ন্যায়বিচার ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের মনে সাহস যোগাবে। আব্দুল জলিল ভুঁইয়া বলেন, মানিক সাহা মৌলবাদসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লেখনীর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, তাদের রুখে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছেন। এ কারণে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাই স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং মুক্তি সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে মানিক সাহা হত্যার ন্যায়বিচার অপরিহার্য। সেজন্য চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের পুনর্তদন্ত ও বিচার হওয়া প্রয়োজন। ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দেয়া বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান এই সাংবাদিক নেতা। ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের অদূরে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নৃশংসভাবে নিহত হন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অকুতোভয় সাংবাদিক, মানবাধিকার ও পরিবেশকর্মী, সামরিক-স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বারবার কারানির্যাতিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক সাহা। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ ও নিউ এজ পত্রিকার খুলনাস্থ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও বিবিসি বাংলার খ-কালীন সংবাদদাতা ছিলেন তিনি। মানিক সাহা ছাত্রজীবন থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত মানিক সাহা কর্মজীবনেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলের লড়াই-সংগ্রামে। বুর্জোয়া শাসক-শোষক শ্রেণী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার ছিল তাঁর কণ্ঠ ও ক্ষুরধার লেখনী।
×