ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সোনাদিয়ায় নয়, গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে মাতারবাড়িতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

সোনাদিয়ায় নয়, গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে মাতারবাড়িতে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম/আবদুর রাজ্জাক, মহেশখালী ॥ এলাকার নাম মাতারবাড়ি। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এর তীরঘেঁষা বঙ্গোপসাগর। এ পয়েন্টে সাগরের যে গভীরতা তাতে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ার সক্ষমতা রয়েছে। ফলে মহেশখালীর এ অংশেই গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়ে গেছে। যেহেতু মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নকে ঘিরে এলএনজি প্রকল্প ও কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হচ্ছে সেক্ষেত্রে আমদানিকৃত এলএনজি ও কয়লা খালাসে মাতারবাড়ি পয়েন্টটি যথাযথ হিসাবে বিশেষজ্ঞদের মত রয়েছে। এর ফলে সরকার পক্ষে অঘোষিতভাবে মহেশখালীরই সোনাদিয়া পয়েন্টে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এসেছে। অবশ্য সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তটি এখনও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানানো হয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে জাইকার অধীনে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হয়। সিদ্ধান্তও বহুদূর এগোয়। চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়টি শুধু দেখভালের দায়িত্বে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেশে গ্যাস ও বিদ্যুত সঙ্কট নিরসনে মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকাটি দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হয়। এ প্রেক্ষিতে পণ্য আমদানির জন্য ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর এতে করেই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর এ কাজে হাত দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ জেটিতে যেহেতু মাদার ভেসেল ভেড়ার সক্ষমতা থাকবে সেক্ষেত্রে এটিকে গভীর সমুদ্রবন্দরের আদলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এলএনজি ও তাপ বিদ্যুত উৎপাদনে কয়লা আমদানিতে এ জেটি ব্যবহারের পাশাপাশি আমদানি পণ্যবাহী ছোট বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে থেকে। উল্লেখ্য, সোনাদিয়া এলাকাটি মহেশখালীর কুতুবজুম ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড। এটিও বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা। এ পয়েন্টেও পানির গভীরতা ব্যাপক। ফলে শুরুতে এ সোনাদিয়াতেই গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। এটি মহেশখালী সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। পক্ষান্তরে, মাতারবাড়ি পয়েন্টটি মহেশখালী সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। মাঝখানে যে সামুদ্রিক চ্যানেল রয়েছে তার পশ্চিমে রয়েছে কুতুবদিয়া দ্বীপ। আর বিপরীতে রয়েছে চকরিয়ার বদরখালি ইউনিয়ন। আগামী ২০২২ সালের শেষ পর্যায়ে গভীর সমুদ্রবন্দরের আদলে এ জেটির নির্মাণ কাজ সমাপ্তি হবে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এদিকে, মাতারবাড়ির সাইবার ডাইল গ্রামের উত্তরাংশের বিস্তৃত চরজুড়ে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চলাচলে পাঁচটি ড্রেজার ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মাতারবাড়ির দক্ষিণাংশে হবে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র। উন্নয়ন কাজে জড়িত কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূত্রে জানানো হয়েছে, তাদের জেটি নির্মিত হওয়ার পর আরও বিশাল যে জমি অবশিষ্ট থাকবে তাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ প্রয়োজনে নতুন টার্মিনালও নির্মাণ করতে হবে। আর তা যদি বাস্তবায়ন হয় তখন এই পয়েন্টটিই বাস্তবিক অর্থেই গভীর সমুদ্রবন্দরে পরিণত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে সমুদ্র পথে বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানি রফতানিতে যে ট্রানজিট পয়েন্ট প্রতিষ্ঠার আলোচনা রয়েছে এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের অন্য কোথাও অনুরূপ গভীর সমুদ্রবন্দরের আর কোন প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। উল্লেখ্য, পরিবেশ ও অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নটি যথাযথভাবে চিহ্নিত হওয়ার পর বাংলাদেশ-জাপান কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ সমঝোতার আওতায় যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে তাতে গভীর সমুদ্রবন্দরের আদলে ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটি নবতর সুবিধা সংযোগ হিসাবে কাজ করবে। কয়লা ও এলএনজি আমদানির পর তা খালাসে জেটি নির্মাণ যেহেতু করতেই হবে সে বিবেচনায় সরকার পক্ষে এটিকে ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্রবন্দরে প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার পর মাঝপথে তা থমকে যায়। বিভিন্নভাবে প্রচার হয় মহেশখালী থেকে এ প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেই অন্যত্রটি শেষ পর্যন্ত মহেশখালীর আরেকটি অংশেই বাস্তবায়িত হতে চলেছে। শুধুমাত্র পানির গভীরতার কারণেই মহেশখালীর এ পয়েন্টটি বিশেষজ্ঞদের সুপারিশে চলে এসেছে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় থাকবে এলএনজি, কয়লা ও অন্যান্য যাবতীয় পণ্য আমদানি, রফতানি এমনকি ট্রানজিট পয়েন্টের সুবিধাও। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে পুরো বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচনা করছে। যাতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- আরেকধাপ যেমন বেড়ে যাবে, তেমনি দেশে গ্যাস ও বিদ্যুত চাহিদার যে ঘাটতি রয়েছে তা অবসানে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।
×