ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি করতে চাপ!

আইডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি বাতিল হচ্ছে ॥ দরপত্রের শর্ত ভেঙ্গে অনৈতিক চাপ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

আইডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি বাতিল হচ্ছে  ॥ দরপত্রের শর্ত ভেঙ্গে অনৈতিক চাপ

রশিদ মামুন ॥ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি করতে চাপ দেয়ায় ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে একটি ঋণ চুক্তি বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার। দরপত্রের শর্ত ভেঙ্গে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব নয় বলে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে আইডিবিকে জানানো হয়। কিন্তু আইডিবি গত বছর জুন থেকে কয়েক দফায় সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন বিদ্যুত কেন্দ্রকে রূপান্তর করে ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে পরিণত করার প্রকল্পে ৫৩৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার কথা ছিল আইডিবির। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বারবার সকল বিষয় স্পষ্ট করার পরও আইডিবি প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতাকে রেখে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি করতে চাপ দেয়। সূত্র জানায়, সিলেট এলাকায় পিডিবির ১৫০ মেগাওয়াটের একটি গ্যাস টারবাইন বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রটিতে রূপান্তর করে কম্বাইন্ড সাইকেল কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে করে একই গ্যাস দিয়ে ১৫০ মেগাওয়াটের স্থলে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া সম্ভব। কেন্দ্রটি রূপান্তরের জন্য ৭০৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এই প্রকল্পে ৫৩৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার জন্য চুক্তি করে আইডিবি। প্রকল্পের বাকি অর্থ সরকারের দেয়ার কথা ছিল। আইডিবির পক্ষ থেকে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলে আইডিবি এই প্রকল্পে আর ঋণ দেবে না বলে পিডিবিকে এক ধরনের হুমকিও দেয়। তারা জানায়, প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি করতে ইচ্ছুক হলে এই প্রকল্পের ঋণ জ্বালানি খাতের অন্য কোথাও সরিয়ে নেবে তারা। গত বুধবার বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে আইডিবির সঙ্গে ঋণ চুক্তিটি বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ এবং পিডিবি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশন ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এই সময়ে আইডিবি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি ঠিক রাখে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৬ নবেম্বর ৮৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি সই করে আইডিবি। প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের জন্য প্রাকযোগ্যদের তালিকা আইডিবিতে পাঠানোর এক বছর তিন মাস পর মতামত দেয় তারা। এরপর প্রকল্পের আর্থিক প্রস্তাব চাওয়া হয়। আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের পর গত বছর ১৮ এপ্রিল আইডিবির কাছে মতামতের জন্য প্রেরণ করা হয়। এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর আইডিবির স্পষ্টিকরণের জবাবও পিডিবি থেকে গত বছর ২৯ জুন দেয়া হয়। সব কিছু পাওয়ার পর আইডিবি থেকে দরপত্রের শর্তভঙ্গ করে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি করতে বলে। পিডিবি সূত্র জানায়, গত বছর ২৯ জুন আইডিবি চিঠি দিয়ে পিডিবির কাছে সকল বিষয় জানতে চায়। এর প্রেক্ষিতে গত বছর জুলাই মাসের ১২, ১৩, ১৪, ১৮, ২১ ও ২৪ তারিখে এবং ১ আগস্ট সকল বিষয় আইডিবিকে ব্যাখ্যা করা হয়। যেখানে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি সই করার অনুমতি দেয়ার অনুরোধ করে পিডিবি। আইডিবির তরফ থেকে গত ১১ নবেম্বর পিডিবিকে জানানো হয়, প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে চুক্তি করতে বাংলাদেশ ইচ্ছুক হলে ঋণের অর্থ জ্বালানি খাতের অন্য প্রকল্পে তারা ব্যবহার করতে পারে। আইডিবি একই বিষয়ে আবার ১৩ নবেম্বর পিডিবিকে মেইলের মাধ্যমে জানায়। তারা আগের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। পিডিবি চুক্তি করতে চাইলে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গেই চুক্তি করতে হবে। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিদেশী দাতা সংস্থা এবং ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে অনৈতিক জেনেও চাপ দেয়। কিন্তু বিদ্যুত খাতে ঋণ দিতে এখন অনেকেই আগ্রহী। কাজেই এককভাবে কারো ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই।
×