ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করার কথা জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৭ সালের অর্থনীতি ২০১৬ সালের অর্থনীতির চেয়েও শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে। আগের বছরের অর্জনকে ছাড়িয়ে যাবে ২০১৭ সাল। আশা করছি, চলতি বছর ২৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তার মন্ত্রণালয়ের চলতি বছরের পরিকল্পনা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি), রেমিটেন্স, প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন মন্ত্রী। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের সদস্য ও উর্ধতন কর্মকর্তরাও উপস্থিত ছিলেন। চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের দেয়া এমন পূর্বাভাসের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক সব সময় রক্ষণশীল পদ্ধতিতে প্রবৃদ্ধির হিসাব করে থাকে। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলনের সঙ্গে বিবিএসের হিসেবের পার্থক্য থাকে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও বছরভিত্তিক প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, তাও রক্ষণশীল পদ্ধতিতে করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক যখন ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে, তখন আমরা প্রায় ৭ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। বিশ্বব্যাংকের হিসাবেই এবার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সাতেরো কাছাকাছি। এটাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। মন্ত্রী বলেন, তবে প্রবৃদ্ধির হিসাবে লুকোচুরির কিছু নেই। আইএমইডি যেমন সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তদারক করে থাকে, বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হিসাব তৈরির কাজটি তদারক করে। উল্লেখ্য, সরকার অর্থবছরের শুরুতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছিল। চলতি বছর মন্ত্রণালয়ের অধীন চারটি প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যর কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিবছরই সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) পরিধি ও আকার বাড়ছে। এজন্য বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এবং জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমিকে (এনএপিডি) শক্তিশালী করা হবে। তিনি বলেন, প্রশিক্ষিত জনবলের মাধ্যমে প্রকল্প কাজ তদারকিতে গতি আনতে আইএমইডিকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য এ বিভাগের জনবল বাড়ানো হবে। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য সঠিক সময়ে যথাযথ পরিসংখ্যান দরকার। কিন্তু বিদ্যমান কাঠামোতে বিবিএস এই কাজটি এখনও যথাযথভাবে করতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রেই পুরনো ফিগার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ কারণে বিবিএসকেও শক্তিশালী করা হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, বিআইডিএস বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নানা কারণে এটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায়নি। বিআইডিএসকে ‘সেন্টার অব একসিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের উদ্যোগ ইতোমধ্যে নিয়েছে। এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে পুনর্গঠন করা হবে। দেশের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ইস্যুতে গবেষণার পাশাপাশি এখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাও দেয়া হবে। একই উদ্দেশ্যে এনএপিডিকেও শক্তিশালী করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি জানান, এডিপির গুণগত মান ও অর্থের অপচয় রোধেও সরকার কাজ করছে। রেমিটেন্স বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, হুন্ডিসহ অন্যান্য অপ্রচলিত মাধ্যমে রেমিটেন্সের অর্থ দেশে ঢুকছে। এজন্য রেমিটেন্সের প্রবাহ কম মনে হচ্ছে। সরকার অপ্রচলিত পদ্ধতিগুলো বন্ধের উপায় খুঁজছে। প্রচলিত মাধ্যমে রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়াতে পরিকল্পনামন্ত্রী এ খাতে প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। জিডিপির হিসাবে রেমিটেন্স ধরা হয় না, তাই এ খাতে প্রবাহ কমলেও সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিতে তা কোন প্রভাব ফেলবে না বলেও মন্ত্রী মনে করেন। তিনি আরও বলেন, চলতি বছরে ২৭ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হবে। দেশে এখনও প্রায় ২৯ লাখ ‘ছদ্ম বেকার’ (অনানুষ্ঠানিক কাজের সঙ্গে যুক্ত) আছে। এদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ কর্মক্ষম মানুষ কর্মবাজারে প্রবেশ করে। চলতি বছরে ৭ লাখ মানুষ দেশের বাইরে যাবে এবং বাকি ২০ লাখ কর্মসংস্থান দেশের অভ্যন্তরে সৃষ্টি করা হবে।
×