ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন ভাংচুর

গুলিস্তান মতিঝিলে হকার উচ্ছেদ অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

গুলিস্তান মতিঝিলে হকার উচ্ছেদ অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার সড়ক ও ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের মধ্যে কর্পোরেশনের যানবাহন ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ হকাররা। মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিটি কর্পোরেশনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এই অভিযান শুরু হয়। তারা বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় অভিযান চালান। উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে আজ সোমবার নগর ভবন ঘেরাও করে মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে হকাররা। অন্যদিকে রবিবার বিকেলে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, ফুটপাথ দখল মুক্ত করতে হকার উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। রবিবার দুপুরের পর মতিঝিলে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে পল্টনের দিকে যায় ডিএসসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। বেলা ২টার দিকে পল্টন মোড় এলাকায় হকাররা সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে। এই হামলায় সিটি কর্পোরেশনের দুটি গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে গেলেও কেউ আহত হননি। পুলিশ কাউকে আটকও করেনি। অভিযান শেষ করে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা ওই এলাকা থেকে চলে যান। উচ্ছেদ অভিযানের সময় পল্টনে আজাদ প্রোডাক্টসের গলিতে ফুটপাথের দোকানও ভেঙ্গে দেয়া হয়। এ সময় ফুটপাথের ওপর দোকানে রাখা ফলমূল নষ্ট হয়। ওই ফুটপাথের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুসলিম অভিযোগ করেন, দিনের বেলায় তার দোকান খোলা ছিল না। তারপরও তা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো মেইন রোডে বসি নাই। পাশের গলিতে বইছিলাম। তারপরও বুলডোজার দিয়া আমাগো মালামাল নষ্ট কইরা দিসে।’ দোকান সরিয়ে নিতে পাঁচ মিনিট সময় চাইলেও সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট তা দেননি বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক আব্দুল হাসিম কবির। তিনি বলেন, দোকান সরিয়ে নিতে আমরা পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিলাম। তার পরেও সব কিছু ভেঙ্গে দিয়েছে উচ্ছেদকারীরা। তিনি বলেন, আমাদের বলেছিল সন্ধ্যার পরে দোকান খুলতে। আমরা তো মেয়রের কথা অমান্য করি নাই। তার পরেও কেন আমাদের দোকান ভেঙ্গে দেয়া হলো। তিনি আরও বলেন, আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সময় চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের মারধর করেন। এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক জিএম রাব্বি প্রতিবাদ করলে পুলিশ তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। তিনি বলেন, আমাদের ওপর পুলিশের হামলা দেখে বিক্ষুব্ধ হকাররও উচ্ছেদকারীদের ওপর হামলা করে। গত ৮ জানুয়ারি নগর ভবনে এক বৈঠক শেষে মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দেন, রবিবার থেকে সাপ্তাহিক কোন কর্মদিবসে আর গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় দিনের বেলায় ফুটপাথে হকার বসতে দেয়া হবে না। হকাররা দোকান নিয়ে বসতে পারবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে। তবে ছুটির দিনে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। অভিযান শুরুর আগে সকালে গুলিস্তান এলাকার ফুটপাথের দোকান বন্ধ থাকলেও বায়তুল মোকাররম ও জিপিওর সামনের সড়কে ফুটপাথের দোকান খোলা দেখা যায়। নিষেধাজ্ঞার পরও কেন দোকান খোলা জানতে চাইলে মিজানুর রহমান নামের এক দোকানি বলেন, ‘আমরা তিনবেলা খাইতে বসছি। এখন আমাগোরে যদি বলে একবেলা খাইতে, তাহলে ক্যামনে হবে? এইভাবে তো ব্যবসা করা সম্ভব না।’ মোঃ হেলাল উদ্দিন নামের আরেক দোকানি বলেন, সন্ধ্যার পর দোকান খোলা রাখার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে- তা মতিঝিল বা গুলিস্তান এলাকার জন্য বাস্তবসম্মত নয়। এইটা অফিস এলাকা। অফিস চলার সময় লোকজন এইখানে কেনাকাটা করে। অফিস ভাঙ্গার পর এইখানে তো কেউ থাকে না। তখন কেনাকাটা করবে কে? সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা চলে গেলে সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন হকাররা। বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নের নেতারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করেন। পুনর্বাসন না করে হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে সোমবার নগর ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নের উপদেষ্টা মোঃ হযরত আলী। তিনি বলেন, হকাররা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল। সন্ধ্যার পর দোকান করার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের লোকজন কোন কারণ ছাড়াই তাদের দোকানপাট ভাংচুর করে। তারা মালামাল লুট করেছে। দোকানদারদের মারপিট করেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের পা ধরলেও তিনি শোনেননি। এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, উচ্ছেদের সময় কিছু লোক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। যারা এ কাজ করেছে তাদের ঠিক হকার বলা যাবে না। তারা পাশের গলি থেকে সিটি কর্পোরেশনের লোকজনকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ নাগ। তিনি বলেন, আমার গাড়িতে এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। আমরা অভিযান শেষ করেছি ঠিকমতোই। আমাদের বহরে অনেক গাড়ি ছিল। হয়ত পেছনের কোন গাড়িতে ঢিল ছুড়েছে। অভিযান চলবেÑ মেয়র ॥ অভিযান শেষে বিকেলে নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘব করতে এ এলাকায় দিনের বেলায় কাউকে বসতে দেয়া হবে না। রাস্তা ও ফুটপাথ দখলমুক্ত না করা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। তিনি বলেন, সার্বিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। জনগণের পথচলা নির্বিঘœ করতেই আমাদের এ প্রচেষ্টা। এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অবস্থান পরিষ্কার, স্পষ্ট এবং কঠোর। গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার ফুটপাথ দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়ে কাউকে একবিন্দু ছাড় দেয়া হবে না। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কারও সঙ্গে আপস করবে না। হলিডে মার্কেটকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কাজ করবে বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন, তারা হলিডে মার্কেটে ব্যবসা করতে পারেন। হলিডে মার্কেট জমজমাট করার জন্য আমাদের উদ্যোগ রয়েছে। আমরা তাদের সহায়তা করব। আমরা চাই হলিডে মার্কেট সিস্টেমটা দাঁড়াক। বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নের নগর ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণার বিষয়ে মেয়র বলেন, যে যাই করুক, উচ্ছেদ অভিযান থামবে না। নগর ভবন ঘেরাও করে করুক, মেয়রকে ধরে ধরুক। যা খুশি করুক। আমি ফুটপাথ, রাস্তা হকারমুক্ত করবই। রাতের বেলা বিক্রি কম হয়Ñ হকারদের এ অভিযোগের বিষয়ে মেয়রের দাবি, ওই এলাকায় রাতের বেলায়ও বেচাকেনা হয়। তিনি বলেন, গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকা সব সময় জমজমাট থাকে। এখান থেকে সারাদেশের মানুষজন যাতায়াত করে। এখানে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। যারা বলছে এখানে সন্ধ্যার পর বেচাকেনা হয় না, তারা মিথ্যা বলছে।
×