ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় ইব্রাহিমের চতুর্থ একক চিত্র প্রদর্শনীর সমাপনী আজ

মানুষ ও প্রকৃতির যুগলবন্দী

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

মানুষ ও প্রকৃতির যুগলবন্দী

সাজু আহমেদ ॥ স্বাধীনতা উত্তরকালে নবীন শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করে যে কয়জন শিল্পী নিজের স্বকীয়তা ধরে রেখে অবিরাম পথ চলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শিল্পী মোহাম্মদ ইব্রাহিম। মৃদুভাষী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই শিল্পী বরাবরই তার চিত্রকলার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রকৃতি ও মানুষকে বেছে নিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশে মানবতার যে বিপর্যয় ঘটেছিল তা শিল্পীকে বিচলিত করেছিল। তাই একটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চেতনার বিষয় তার চিত্রকর্মে উঠে এসেছে। শিল্পী ইব্রাহিম তাঁর আঁকা চিত্রগুলোতে এয়ার ব্রাশ ও স্প্রে পদ্ধতিতে কেবল তার কৌশলে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ৬ নম্বর গ্যালারিতে চলছে শিল্পী ইব্রাহিমের চতুর্থ একক চিত্র প্রদর্শনী। ১০দিনব্যপী প্রদর্শনীর আজ শেষ দিন। ১৯৫০ সালে ঢাকায় জন্ম নেয়া মোহাম্মদ ইব্রাহিম শিল্পী হিসেবে নিজেকে ঋদ্ধ করেছেন নানা মাত্রিকতায়, নানা নিরীক্ষায়। ১৯৭৩ সালে ঢাকার চারুকলা থেকে পাশ করে বেরুনোর পর ইব্রাহিম অসংখ্য প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। তার আঁকা ছবি দেখিয়ে দর্শক ও চিত্রসমঝদারদের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর আগে তিনটি একক এবং অর্ধশতাধিক যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। তার চিত্রগুলোর অন্যতম বিষয় প্রকৃতি, প্রেম, স্বপ্ন, মানবিকতা, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ, সর্বপোরি মানুষ। মানুষের যাপিত জীবনে নানা বিষয় তার চিত্রে উঠে এসেছে সাবলীলভাবে। তার আঁকা ছবিতে কখনও তিনি স্বপ্ন এঁকেছেন, স্বপ্ন বুনেছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন। জীবনে না বোঝা জটিল বিষয়গুলোকেও তিনি তার চিত্রে ধারণ করার চেষ্টা করেছেন। তার চিত্রগুলোর অন্যতম বিষয় মানুষ ও প্রকৃতির যুগলবন্দী। তার ছবিগুলো দেখে মনে হয় তিনি সুন্দরের সন্ধানী। তার ছবিতে সূক্ষ্ম রেখা ও ডিটেইলে তিনি কাজ করেন, বিন্দুতে সিন্ধুকে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। রংকে তিনি ভেতর থেকে দেখেন, রঙের স্বচ্ছতা-অস্বচ্ছতাকে একজন রসায়নবিদের মতো বিচার করে তিনি তাঁর ক্যানভাসে সাজান। রংকে তিনি অবলম্বন করে তার ভাবনা ও বোধ প্রকাশে-রং বিশ্বস্ত থাকে তাঁর কাছে ফলে ইব্রাহিমের কাজ দেখা একটা আনন্দজনক অভিজ্ঞতা। এমনটাই মনে করেন চিত্রসমঝদাররা। চিত্র আঁকার ক্ষেত্রে নানা ধরনের কাজ করেছেন ইব্রাহিম। তেল রং এবং এ্যাক্রিলিকে করেছেন, কালি ও কলমে করেছেন। তাঁর প্রিয় এয়ার ব্রাশ পদ্ধতির একটির এক সময় তেল রং ছিল মাধ্যম, এখন এ্যাক্রিলিক। বাংলাদেশে এয়ারব্রাশ ব্যবহার করে নান্দনিক ছবি আঁকার কথা উঠলে প্রথমেই আসে ইব্রাহিমের নাম। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইব্রাহিমের নিরীক্ষাধর্মী ছবিগুলো নিয়ে তার চতুর্থ প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম নেই-এমনকি ছবিগুলোর শিরোনামের জায়গায় তিনি ‘শিরোনামহীন’ লিখতেও চাননি বোধ হয়। শিরোনামহীন ছবিগুলোতে একের পর এক তাদের পরিচয় তুলে ধরে সেটা ইব্রাহিমের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, জীবনকে উপলব্ধির প্রকাশের চেষ্টা ফুটে ওঠে। এ জন্য তার ছবিগুলোর জগৎটা হয়ে দাঁড়ায় অনেকটা রহস্যময়। সে যাই হোক শিল্পের মাপকাঠিতে তার চিত্রগুলো যে কতটা নান্দনিক ও জীবন ঘনিষ্ঠ তা দর্শকমাত্রই বুঝতে পারেন। প্রসঙ্গত, গত ৬ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ইব্রাহিমের একক চতুর্থ চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান, বরেণ্য চিত্র শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী প্রমুখ। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শিল্পীর আঁকা অ্যাক্রেলিক অন ক্যানভাস, এ্যাক্রেলিক অন পেপারস, অয়েল অন পেপারস, পেন এ্যান্ড ইন্ক পেপারস, মিক্সড মিডিয়া ও এয়ার ব্রাশের ৯৭টি শিল্পকর্ম। প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত।
×