ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর...

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর...

স্কুল-কলেজের পর বিশ্ববিদ্যালয়। সময়টা এমন নিজেকে ভবিষ্যতের কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুত করার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যে কোন শিক্ষার্থীর জন্য জীবনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সময়। সময়টা এমন যখন শিক্ষার্থী আইনগতভাবে নিজেকে সক্ষমতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। স্কুল ও কলেজ জীবনের পর এখান থেকেই শুরু হয় শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার গঠনের স্বপ্নযাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশকারী শিক্ষার্থীদের অনেকেরই জানা নেই বেশকিছু বিষয়। প্রবেশের পর অনেকেরই চিন্তা থাকে প্রথম সেমিস্টারে ভাল রেজাল্ট কিভাবে করা যাবে? প্রথমেই শিক্ষার্থীকে বুঝতে হবে : বিগত সময়ে পড়ে আসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় শিক্ষা ক্ষেত্র। বিষয়ের আঙ্গিকতার পাশে ব্যবহারগত দিকটাও সম্পূর্ণ আলাদা। এমনকি শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকদের প্রত্যাশার রকমটাও অন্যরকম। শিক্ষাদান ও গ্রহণের প্রক্রিয়াটাও ভিন্ন। তাই পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় প্রয়োজন শিক্ষার্থীর অতিরিক্ত আগ্রহ ও মনোযোগের। নিয়মতান্ত্রিকতা ও কাজের সময়কে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারা কলেজ পর্যায়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভাল রেজাল্টের মূলমন্ত্রটা জানা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সফল হওয়া যাবে খুব সহজেই। এটা ভাবলে ভুল হবে কিন্তু। স্কুল ও কলেজের তুলনায় এ পর্যায়ে ভাল ফলাফল করাটা বেশ সহজও। তবে এজন্য প্রয়োজন ক্লাসে মনোযোগী হওয়া, সঠিক বিষয়টিতে আগ্রহ থাকা। বিষয়টি বোঝায় সামর্থ্য অর্জন, ক্লাসে পড়ার আগে লেকচারটা দেখে নেয়া কিংবা পড়ানোর পর শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া। যার ফলে বিষয়টির অস্পষ্টতা কেটে যাবে। আজকের ক্লাসে পড়াটা কালকের জন্য ফেলে না রাখা। নিয়মিত ক্লাস করা, ক্লাসে মনোযোগী থাকা আর গঠিত বিষয়টি সম্পূর্ণ বুঝতে পাবার সদিচ্ছা থাকা। বাসায় এসে মূল বইটা পড়ে মিলিয়ে নিতে হবে ক্লাসে পড়ানোর বিষয়টির সঙ্গে। এ সুচর্চাটা কিন্তু শিক্ষার্থীকে এগিয়ে রাখবে আর দশজন শিক্ষার্থী থেকে। ভাল গ্রেড কিংবা ফল নির্ভর করে সার্বিক লেখাপড়ার পারফর্মেন্সের ওপর। তাই শুরু থেকে ভাল ফলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। ব্যাপকতা বিজ্ঞানে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভাল যুক্তিবাদী সামর্থ্য থাকা চাই। ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা বায়োলজিক্যাল সায়েন্স অনেক ক্ষেত্রে তত্ত্বীয় বিষয়ের পাশাপাশি পঠিত বিষয়ের ব্যবহারিক হিসেবে প্রজেক্ট বা এ্যাসাইনমেন্ট থাকে। যেখানে তত্ত্বীয় জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটাতে হয়। প্রজেক্ট বা এ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে প্রথমেই ভাবতে হবে শুরুটা কিভাবে হবে। কতটা সময়ের প্রয়োজন হবে কিংবা যতœ নিয়ে কতটা তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয়ভাবে তা উপস্থাপনা করা যাবে। প্রজেক্ট বা এ্যাসাইনমেন্ট তৈরির পরে তা উপস্থাপন করতে হবে। উপস্থাপন কৌশল নিজেকেই ঠিক করতে হবে। কৌশলপত্রে তথ্যসূত্র উল্লেখ করতে কিন্তু ভুলবেন না যেন। এতে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বৈ কমবে না। কাজটি সত্যিই শিক্ষার্থী কতটা মনোযোগসহ করেছে তা প্রমাণিত হয় এতে। কর্মকৌশল গুরুত্ব বোঝাতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কি কাজ হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে। দলগত প্রজেক্ট কিংবা এ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষকদের সামনে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে দলের সবচেয়ে কুশলী ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে সুযোগ দিতে হবে সর্বাগ্রে। মনোযোগিতা মানবিকে মানবিকের বিষয়সমূহের বৈচিত্র্য ব্যাপক এবং পরিধিও অনেক। তাই এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের স্মৃতিশক্তি ভাল থাকা দরকার। মানবিকের শিক্ষার্থীদের সাফল্যের নেপথ্যে বোঝার ক্ষমতার বড় ভূমিকা রয়েছে। নির্বাচিত বিষয়টিতে কি কি আছে এ ব্যাপারে ভালভাবে জানতে হবে শিক্ষার্থীকে। এক্ষেত্রে বিষয়টিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে পূর্ণ মাত্রায়। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে নিজেকেই; শিক্ষক শুধু জানতে চাইবেন কি বুঝলে বা জানলে। মানবিক সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে সাফল্য পেতে শিক্ষার্থীদের বেশি পরিশ্রম করতে হবে। এজন্য বেশি করে লেখার চর্চাটা নিজেকেই করতে হবে। এক্ষেত্রে ধৈর্যটাও কিন্তু খুব প্রয়োজন। বাণিজ্যে ব্যবসায় শিক্ষা বর্তমানে ব্যবসায় শিক্ষা অনেকের কাছে চাহিদাসম্পন্ন বিষয়। কেননা লেখাপড়া এ বিষয়ে সম্পন্ন করে খুব দ্রুতই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করা যায়। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেকে মূল্যায়ন করা যায় সহজেই। ফাইন্যান্স, হিউম্যান রিসোর্স, মার্কেটিং অপারেশন কিংবা ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রভৃতি বিষয় ব্যবসায় শিক্ষায় ব্যাপকভাবে পড়ানো হয়। এগুলো ভাল করে বুঝতে হবে এবং তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজী। বিশেষ করে ব্যবসায় শিক্ষায় এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থীকে ইংরেজী বলা ও লেখায় দক্ষ হতে হবে। রিপোর্ট লেখা ও তার উপস্থাপনা করা ব্যবসায় শিক্ষার অন্যতম অনুষঙ্গ। এজন্য লেখার পাশাপাশি উপস্থাপনা কৌশলপত্র ঠিক করতে হবে। টার্ম পেপারের ব্যাপারেও এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকতে হবে। যা অনেকটা গবেষণাধর্মী হয়ে থাকে। এতে তথ্যের যথাযথ উপস্থাপনার পাশাপাশি এর তথ্যসমূহের সর্বশেষ উল্লেখ থাকতে হবে। পড়ালেখার পাশাপাশি অন্য ভুবন প্রতিযোগিতার এ যুগে শুধু পড়ালেখা একজন শিক্ষার্থীর জন্য যথেষ্ট নয়; পাশাপাশি প্রয়োজন সহশিক্ষার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একজন শিক্ষার্থীর সরব পদচারণা সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে পূর্ণ মাত্রায়। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ক্লাব, যেমন বিতর্ক, নাটক, সায়েন্স, ন্যাচার, কুইজ প্রভৃতি ক্লাব। এগুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে গড়ে ওঠে নেতৃত্বদানের যোগ্যতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা। অধুনা প্রতিযোগিতামূলক কর্মবাজারে নিয়োগদাতা পাঠ্য বিষয়ের ভাল ফলের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম সক্রিয় ও দক্ষ শিক্ষার্থী চায়। এ কার্যক্রমগুলো শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ও ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ভর্তির পর লক্ষণীয় সবসময় ক্লাস করতে হবে। ফাঁকি দেয়া চলবে না একদম। সর্বদা বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা ফাইলে নোটগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে হবে। বিষয় নির্বাচনের আগে জেনে নিতে হবে বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কাছ থেকে। হাতে সময় নিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট, টার্ম পেপার ও প্রজেক্ট তৈরি করতে হবে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। ক্লাস নোটের লেকচার শিটের সমৃদ্ধকরণে মূল বইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা জরুরী। বিষয় সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে বুঝতে না পারলে কোর্স শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। নিজের আত্ম উন্নয়নের জন্য নিজেকে যুক্ত করতে হবে সহশিক্ষার কার্যক্রমের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য প্রবেশকারী মেধাবীদের প্রতি রইল ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে শুভকামনা। হাবিবুর রহমান
×