ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীপ্রতি আদায় দু’তিন শ’ টাকা

উপবৃত্তির টাকায় শিক্ষকের লালসা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

উপবৃত্তির টাকায় শিক্ষকের লালসা

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ১৪ জানুয়ারি ॥ আমতলী উপজেলায় উপবৃত্তির টাকা প্রদানে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছে থেকে ২-৩শ’ টাকা ঘুষ আদায় করছেন। শনিবার গোছখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তির টাকা প্রদানকালে গুলিশাখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসেন সেলিম শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দু-তিন শ’ টাকা আদায় করেন। এ টাকা গোছাতে ও গুনতে গিয়ে জনতা তাকে আটকের চেষ্টা করে। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি পালিয়ে যায়। জানা গেছে, উপজেলা ৬৫ মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় ৪ হাজার শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তিন মাসে অষ্টম শ্রেণী ৯৬০, নবম শ্রেণী ১০৮০ ও দশম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী ১৯৫০ টাকা করে উপবৃত্তি পাচ্ছেন। শনিবার গুলিশাখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১১০, গোছখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৮৪, গুলিশাখালী দাখিল মাদ্রাসা ২৬, উত্তর কালামপুর নুরানী বালিকা মাদ্রাসা ২২, হরিদ্রাবাড়িয়া ডিএস দাখিল মাদ্রাসা ৩৩, ন, ম আমজাদিয়া দাখিল মাদ্রাসা ৫০ ও উত্তর কালামপুর হাতেমিয়া দাখিল মাদ্রাসায় তিন শিক্ষার্থীসহ মোট ৫শ’ শিক্ষার্থীকে গোছখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় অফিস কক্ষে উপবৃত্তির টাকা প্রদান করছিল। এ সময় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম মোস্তফা, অফিস সহকারী জাকির হোসেন, অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সুলতান উপস্থিত ছিলেন। উপবৃত্তির টাকা প্রদানকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোছখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে সাত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ৫০০ শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা প্রদান করছিল। শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সামনে থেকে টাকা এনে অন্য একটি কক্ষে গিয়ে স্ব-স্ব বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। প্রধান শিক্ষকরা প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা রেখে দিচ্ছেন। গুলিশাখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহদাত হোসেন সেলিম ও সহকারী মৌলভী নুরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে অগোছালো অবস্থায় পকেটে রাখে। ওই টাকা বিদ্যালয়ের বাইরে হানিফ দফাদারের দোকানের বসার চৌকিতে রেখে গোপনে গোচাচ্ছেন এবং গুনছেন। এ দৃশ্য দেখে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয় এবং তাকে আটকের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি পালিয়ে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলিশাখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের কাছ থেকে অফিসারদের টাকা দেয়ার কথা বলে দু-তিন শ’ টাকা করে প্রধান শিক্ষক রেখে দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী হানিফ দফাদার বলেন, প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসেন ও তার সহযোগী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা তুলে আমার দোকানের চৌকিতে রেখে গুনছিলেন। একজন প্রধান শিক্ষক এভাবে প্রকাশ্যে অন্যায় করতে পারে না। আমরা এ শিক্ষকের বিচার চাই। গোছখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী তামান্না, ফারজানা, রিনা, শারমিন, লাকি, রিনা আকতার ও জেসমিন জানান, তাদের কাছ থেকে শিক্ষকরা ৭০ টাকা করে রেখে দিয়েছেন। গুলিশখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, অফিস সহকারী ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছি। গোছখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গির কবির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের দেয়া অভিযোগ মিথ্যা। আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি কোন প্রধান শিক্ষককে আমাকে দেয়ার জন্য টাকা আদায় করার নির্দেশ দেইনি। তবে কেন তারা টাকা আদায় করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই।
×