ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগে ট্রলার চললেও এখন চলে না ডিঙ্গি নৌকা

প্রভাবশালীর দখলে ১০ খাল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

প্রভাবশালীর দখলে ১০ খাল

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারের উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়া। পেকুয়া সদরের চারপাশে বিস্তৃত বড় দু’টি খাল-নদী। ঐতিহ্যবাহী ভোলার খাল ও মাতামুহুরী নদী জেলার সকলের কাছে পরিচিত। এসব নদীর শাখা প্রশাখা ছাড়াও পেকুয়ায় রয়েছে ছোট-বড় ১০টি খাল। বারবাকিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে টইটং খাল। ভোলা খাল থেকে এর উৎপত্তি হলেও খালটি ছনুয়া খালে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এক সময় ওই খালে মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে যাওয়া-আসা করত জেলেরা। বর্তমানে ঐ খাল ভরাট ও জবর দখল হয়ে যাওয়ায় ট্রলারের বদলে ডিঙ্গি নৌকাও চলাচল দায়। স্থানীয়রা জানায়, পাঁচ বছর আগেও এ খাল দিয়ে চলাচল করত বড় বড় ট্রলার। রাজাখালী এলাকায় উৎপাদিত অধিকাংশ লবণ এই খাল দিয়ে পরিবহন করা ছাড়াও সাগর থেকে মাছ ধরে এই খাল দিয়ে ঘরে ফিরত জেলেরা। পার্শ্ববর্তী তিন ইউনিয়নের বহু মানুষ এ খালে জাল ফেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু সেই দিন আর নেই। ভরাট হয়ে গেছে পুরো খাল। ভরাট হওয়া খালের অধিকাংশই চলে গেছে খাল খেকোদের দখলে। রাজাখালী ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া খালটি পুনঃ খনন জরুরী দাবি করে বলেন, পেকুয়ার উপর দিয়ে প্রবাহমান নদী ও পাহাড়ী ছড়াগুলো প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে নব্য হারিয়ে অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দখলকারীরা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নদী ও ছড়া দখল করে প্রতিদিন বসতঘর নির্মাণসহ অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন করে চলছে। যার কারণে প্রবাহমান নদী ও ছড়া দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে পানি চলাচল করতে না পারায় পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পানি উপকূলের উপর প্রবাহিত হয়ে বন্যার আকার ধারণ করছে। গত বছরে দুই দফা বন্যায় এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। জানা গেছে, পেকুয়া সদরের চারপাশে বিস্তৃত সবচেয়ে বড় ভোলার খাল ও মাতামুহুরী নদী। এসব নদীর শাখা প্রশাখা ছাড়াও ছোট বড় খালের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে- চিলখালী খাল, রোপাই খাল, নুন্ন্যা মুইন্যার খাল, কহলখালী খাল, জাদুখালী ছড়া, সুনাইছড়ি ছড়া, গুদিকাটার ঠেক, মিয়ার খাল, জারুলবনিয়া ছড়া, হাজি বাজার খাল ও ছড়া। এসব নদী, খাল ও ছড়া দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। তারা বিভিন্ন কৌশলে নদ-নদী ও খালে বাঁধ দিয়ে চর তৈরি করে বিক্রি করছে ভাসমান লোকজনের কাছে। সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করছে পুরো ভোলা খাল ও দক্ষিণ মেহেরনামা হতে মিয়া পাড়া হয়ে পেকুয়া বাজারের দক্ষিণ পার্শের খালটি। প্রভাবশালীরা খালে জেগে ওঠা চর দখল করে দোকান ও বড় বড় দালান নির্মাণ করছে। এক শ্রেণীর ডেভেলপার কোম্পানি খাল ও নদী দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে অনায়াসে। এ কারণে পানি চলাচল দূরের কথা, হোটেলে পয়ঃনিষ্কাশনের পানিও সহজে চলাচল করতে পারছে না। দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এদিকে একাধিক ছড়া কতিপয় প্রভাবশালী দখলে নিয়ে বালু উত্তোলন করছে। ওই বালুখেকোরা পাহাড়ী ছড়ায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে বিভিন্ন স্থানে। এতে বিপুল টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তবে খবর পেলে উপজেলা প্রশাসন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের লোকজন ফিরে গেলে প্রভাবশালীরা ফের মেতে উঠে দখল ও বালু বাণিজ্যে। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে টইটং এর একটি খাল খনন করতে ২৮লাখ টাকার বরাদ্দ দেয়া হলেও তা পুরোটায় লোপাট করে ফেলে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ফলে পাহাড়ী ঢল নেমে এসে বন্যার সৃষ্টি হয় প্রতি বছর। পেকুয়ার বাজারের দক্ষিণ পাশেও খালটি দোকানিরা ভরাট করতে করতে পুরোটায় দখলে নিয়ে যাচ্ছে।
×