ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব ১৪ দলের নাকচ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব ১৪ দলের নাকচ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ও আগামী নির্বাচনের গতিপথ নির্ধারণে বিএনপির সঙ্গে সরকারের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। জোটের নেতারা বলেন, নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন আর ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। এটা তো সরকারের দায়িত্ব না। বিএনপি মুখে যাই-ই বলুক না কেন, অস্তিত্ব রক্ষায় আগামী নির্বাচনে অবশ্যই আসবে। শুধু জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেই তারা আলোচনার কথা বলছে। শনিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দাবি নাকচ করে দিয়ে নেতারা এসব কথা বলেন। উল্লেখ্য, শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আগামী নির্বাচন ও রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করবেন। বৈঠকে নতুন পাঠ্য বইয়ে ভুল এবং সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জোটের নেতারা। তারা পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক ধারায় জাতি গঠনে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে সে ধরনের বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানান। এজন্য পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু পরিবর্তন করার পক্ষেও জোরালো মতামত তুলে ধরেন তাঁরা। বৈঠক সূত্র জানায়, সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্বের বিষয়টিও উঠে আসে। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সঙ্গে মৃদু বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেন। বিতর্ক থামিয়ে দিয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এ দুই নেতার উদ্দেশে বলেন, বিষয়টি এখানে আলোচনা করে সমাধান হবে না। আপনারা এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের শান্ত রাখুন। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংকালে কেন্দ্রীয় চৌদ্দ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জোটের পক্ষ থেকে বলেন, ইসি পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের আলোচনার কোন সুযোগ নেই। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, একথাটি তারা কোথায় বলেছে? আমরা বিশ্বাস করি তারা নির্বাচনে অবশ্যই আসবে। আলোচনার কথাটা তো তারা সবসময় বলছে। কিন্তু ১৪ দল মনে করে এ বিষয়ে আলোচনার কোন সুযোগ নেই। কেননা ইসি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এবং তিনিই নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। আর নির্বাচন কমিশনই নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। এটা তো সরকারের দায়িত্ব না। বিএনপিকে উদ্দেশে করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আপনারা তিন বছর ধৈর্য দেখিয়েছেন। নির্বাচন পর্যন্ত আরও ধৈর্য দেখাতে থাকুন এবং নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুন এটাই আমরা চাই। আমরা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে চাই। ধৈর্য দেখালে বাংলার জনগণও খুশি হবে। আর ইসি গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির যে কোন সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত মেনে নেবে ১৪ দল। তিনি বলেন, নির্বাচন করে নির্বাচন কমিশন। সারা দুনিয়ার সকল সরকারই এটা করে। বাংলাদেশেও তাই হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেও আমরা আশাবাদী। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করব সবদলই ধৈর্যের পরিচয় দেবেন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় এই মুখপাত্র বলেন, ১৪ দল একটি জোট, এটি এখন ব্রান্ড হয়ে গেছে। এটা পরিধি বৃদ্ধিই কি, আর হ্রাসই কী? কমার তো প্রশ্নই আসে না। প্রয়োজন হলে বাড়তে পারে। আর আমরা অসাম্প্রদায়িক শোষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল চিরদিন ঐক্যবদ্ধ ছিল, চিরদিন থাকবে। সরকারকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি ১৪ দলের সামাজিক দায়িত্ব পালনের দায়বদ্ধতা তুলে ধরে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী ২০ এবং ২১ জানুয়ারি বগুড়া এবং রংপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গরিব মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করব। এছাড়া সরকারের তিন বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানায় ১৪ দল। বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক ও জাসদ (আম্বিয়া) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান পাঠ্যবইয়ের কিছু কিছু বিষয়বস্তু সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী চিন্তা-ধারার দিকে নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করেছে বলে অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, পাঠ্যপুস্তকে শুধু ভুল নয়, ছাত্রছাত্রীদের সাম্প্রদায়িক মনস্ক করার মতো বিষয়বস্তু রাখা হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈঠকে জাসদের শিরীন আখতার অভিযোগ করেন, মিরপুরে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা বিএনপি থেকে সরকারি দলে এসেছেন। অথচ এ ঘটনার পর জাসদ কার্যালয় ও দলের একজন নেতার ওপর হামলা চালিয়ে ১৪ দলের ঐক্যে ভাঙন ধরানোর প্রচেষ্টা চলছে। জবাবে মাহবুব-উল আলম হানিফ পাল্টা অভিযোগ করেন, যার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটেছে, তিনিও বিএনপি থেকে জাসদে এসেছেন। এর আগে তিনি অস্ত্রসহ ধরা পড়েছিলেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ নেতা হত্যার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় বিক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় লোকজন তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।
×