ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুয়াকাটা মেগাবীচ কার্নিভ্যাল উদ্বোধনকালে মুহিত

আগামী দু’বছর রাজনীতি স্থিতিশীল থাকলে প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

আগামী দু’বছর রাজনীতি স্থিতিশীল থাকলে প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৪ জানুয়ারি ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি বলেছেন, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবিষ্কার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগণের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ভাগ্যবান। এখনও কুয়াকাটায় লগ্নিকারকের তেমন ভিড় হয়নি। এখানে উন্নয়ন করা সহজ হবে। মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে কাজ করার জন্য স্থানীয় সরকারসহ জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। কুয়াকাটার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরী প্রয়োজন উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সড়ক, নৌ কিংবা রেলপথ যাই হোক না কেন যোগাযোগটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বীচ এবং বন্দর এরিয়া কাছাকাছি হওয়ায় আপনারা ভাগ্যবান। সবচেয়ে গভীরতর বন্দর হচ্ছে পায়রা। শনিবার বেলা ২টায় কুয়াকাটা সৈকতে অর্থমন্ত্রী মেগা বীচ কার্নিভ্যাল কুয়াকাটা ২০১৭ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ আরও দুই বছর বাকি রয়েছে। এ সময়কে তিনি গোল্ডেন টাইম উল্লেখ করে এ সময়ে আমাদের দেয়া অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, কুয়াকাটাকে আকর্ষণীয় এবং বিশে^র কাছে তুলে ধরতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পনার সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা সম্পৃক্ত করতে পারলে এটি আরও কার্যকর হয়। তিনি পরোক্ষভাবে বিএনপি-জামায়াত জোটকে ইঙ্গিত করে বলেন, আগুন জ¦ালানো কিংবা যখন-তখন ধর্মঘট ডাকায় মাঝে-মধ্যে বাধা আসে। তখন উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। স্থীতিশীল রাজনীতি থাকলে আগামী দুই বছরে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে পৌঁছবে। দারিদ্র্যসীমা ২২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য থাকবে না বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সাড়ে তিন কোটি দরিদ্র্যসীমার মানুষকে বের করে আনতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দেশের সকল মানুষ বেশি লেখাপড়া না জানলেও বুদ্ধিমান। তাদের কাছে প্রযুক্তি পৌঁছে দিলে তারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারছে। দেশের কৃষি জমি কমলেও খাদ্য উৎপাদন ১১০ লাখ টন থেকে ৩৮০ লাখ টনে উন্নীত করেছে। দেশের মানুষ উদ্ভাবনশীল বুদ্ধিতে দীপ্ত। তিনি বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। সমুদ্র তীরের মানুষের জন্য আজকের দিনটি একটি বিশেষ দিন। বিশেষ অতিথি বেসরকারী বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, আজকে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিশে^র মানচিত্রে জায়গা পেয়েছে। কুয়াকাটায় আগামীতে ওসান ট্যুরিজম চালু করা হবে। সেই লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মৌলবাদ উত্থান বন্ধে সরকার সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। প্রতিবছর কুয়াকাটায় অনুষ্ঠিত হবে বীচ কার্নিভ্যাল। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের চেয়ারম্যান এসএম গোলাম ফারুক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আসম ফিরোজ এমপি, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মাহবুবুর রহমান এমপি, আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন এমপি, শওকত হাসানুর রহমান এমপি, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, এলজিইডি সচিব আব্দুল মালেক, পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মোশাররফ হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ গাউস, বরিশাল পুলিশের ডিআইজি শেখ মোঃ মারুফ হাসান (বিপিএম বার), কুয়াকাটা পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা প্রমুখ। এ সময় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক একেএম শামীমুল হক সিদ্দিকী, কলাপাড়ার ইউএনও এবিএম সাদিকুর রহমানসহ পটুয়াখালী ও বরগুনার বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যানগণ, পৌরসভার মেয়রগণসহ সরকারী বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে পর্যটন কর্পোরেশনে হোটেল ইয়ুথ-ইন মোটেল থেকে একটি র‌্যালি বের সাগর সৈকতের মূল মঞ্চে যায়। মেগা বীচ কার্নিভ্যাল কুয়াকাটা ২০১৭ উপলক্ষে কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম দিকে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। তিনদিনের এ অনুষ্ঠানে রয়েছে প্রতিদিন ওয়াটার বাইক, ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্দা, ভলিবল, ওয়াটার বাইক, এটিভি রাইডস, বোট বোয়িং, বিচ লাইটিং, ক্যাম্প ফায়ার, সমুদ্র পথে কুয়াকাটার সঙ্গে ফাতড়া, সুন্দরবন, সোনার চর, হরিণ খোলা, কটকা ও করমজলের সী-ক্রুজিং। রয়েছে রাখাইনদের পিঠেপুলি ও তাদের বুনন হস্তশিল্পের প্রদর্শনী। থাকবে লাঠিখেলাসহ বর্ণাঢ্য ঘুড়ি উৎসব ও স্থানীয় শিল্পীদের উপস্থাপনাসহ দেশের লোক সংগীতের স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গীত ও ব্যান্ড শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশনা থাকছে তিন দিনের আয়োজনে। কুয়াকাটার প্রবেশদ্বারসহ বীচের ৬ কিলোমিটার এলাকা আলোকসজ্জা করার কথা বলা রয়েছে। কিন্তু মাত্র এক বর্গ কিলোমিটার নামকাওয়াস্তে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সীমাহীন সমন্বয়হীনতা পরিলক্ষিত হয়েছে কার্নিভ্যাল কুয়াকাটা ২০১৭ উদযাপনে। কলাপাড়া কুয়াকাটা মহাসড়কের শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সেতুসহ গোটা এলাকা ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে সাজানোর কথা থাকলেও নামকাওয়াস্তে ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলানো হয়েছে। শেখ রাসেল সেতুর অধিকাংশ ফেস্টুন বাঁশসহ নিচে পড়ে আছে। অনুষ্ঠান উদ্বোধনের আগেই এমন অবস্থা হয়েছে। কুয়াকাটায় প্রবেশদ্বারে একটি তোরণ করা হয়েছে খুবই নি¤œমানের। কোন ব্যানারে মেগা বীচ কার্নিভ্যাল কুয়াকাটা-২০১৭ লেখা রয়েছে। আবার অসংখ্য ব্যানারে মেগা শব্দটি নেই। স্থানীয় সংবাদকর্মীদের এ কার্নিভ্যালের প্রস্তুতি সভা থেকে শুরু করে কোন কিছুই অবগত করানো হয়নি। মোট কথা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের আয়োজনে এ কার্নিভ্যাল নিয়ে কুয়াকাটার স্থানীয় মানুষসহ পর্যটক-দর্শনার্থীরা যেমনি ছিল উৎসবমুখর। তেমনি উৎসবের সমন্বয়হীনতা এবং অগোছোলা অবস্থা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল সর্বত্র। ফলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য কুয়াকাটাকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করার অন্তরায় হয়ে যায় আয়োজকদের সমন্বয়হীনতা। স্থানীয় সকল শ্রেণীর মানুষের প্রশ্ন ছিল কুয়াকাটার প্রকৃতি ও সৌন্দর্যে কোথাও সাম্পানের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু ট্যুরিজম বোর্ডের এ কার্নিভ্যাল কেন্দ্রিক সকল পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে সাম্পানের দৃশ্য বিরাজমান ছিল। এছাড়া র‌্যালিতে ব্যবহারের টি-শার্ট এবং ক্যাপের বর্ণ এবং মান নিয়েও ছিল ব্যাপক সমালোচনা। এখানে রাখাইনদের ঐতিহ্য সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আয়োজক সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা এ বছরের ভুল-ত্রুটি সেরে আগামীতে সবার সমন্বয়ে কার্নিভ্যাল কুয়াকাটা বর্ণিল এবং ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি শেষ হবে এ কার্নিভ্যালের। অর্থমন্ত্রীর পায়রা বন্দর পরিদর্শন নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৪ জানুয়ারি ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি শনিবার বিকেলে পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি একটি স্পিডবোটযোগে পায়রা বন্দরের মূল রামনাবাদ চ্যানেল নৌপথে ঘুরে দেখেন। দেখেন মাদার ভেসেলসহ লাইটার জাহাজ। পরে বন্দর অফিসে পাওয়ার পয়েন্টে বন্দরের উন্নয়ন অগ্রগতি উপস্থাপন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ সময় অর্থমন্ত্রী ছাড়াও এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, আলহাজ মাহবুবুর রহমান এমপি, কমান্ডার রাসিউল হাসান অবঃ (মেম্বার ফিন্যান্স এ্যান্ড এডমিন), চীফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার হাবিবুল আলম, লেফটেন্যান্ট কেএম জাহাঙ্গীর আলম (পরিচালক নিরাপত্তা) উপস্থিত ছিলেন। গত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বন্দর থেকে পণ্য খালাসে সরকার ১২ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে বলে মন্ত্রীকে অবহিত করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। তিনি প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- পরিদর্শন করেন। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত তিনি পায়রা বন্দর এলাকায় অবস্থান করেন। পাঁচটায় তিনি কুয়াকাটার উদ্দেশে বন্দর এলাকা ত্যাগ করেন।
×