ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধানমণ্ডির দলীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়

নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তিন বছর পূর্ণ করে সরকার চার বছরে পা রেখেছে। আগের নির্বাচনে আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তার অধিকাংশই পূরণ করেছি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির চেয়েও বেশি কাজ করেছি। সামনের নির্বাচনের আর বেশি বাকি নেই। এখনকার ‘কঠিন পথ’ পাড়ি দিতে অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে। এখন থেকেই নির্বাচনের কাজ করতে হবে। আমাদের আগামী নির্বাচনী ইশতেহার ঠিক করব। সেগুলো আমাদের এখনই চিন্তাভাবনা করতে হবে। শনিবার বিকেলে ধানম-িতে তাঁর কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় এবং সহযোগী-ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আগামী নির্বাচনের জন্য দলীয় ইশতেহার তৈরির লক্ষ্যে বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা সেল গঠন করতে তিনি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নির্দেশও দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো রাজনৈতিক কার্যালয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৭ নবেম্বর বিকেলে ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি নিজের কার্যালয়ের সবকিছুর বিষয়ে খোঁজ-খবরও নেন প্রধানমন্ত্রী। কার্যালয় ঘুরে দেখেন এবং স্টাফদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের তিন বছর পার হয়েছে, আমরা চার বছরে পা রেখেছি। সামনে আরও কঠিন সময় মোকাবেলা করতে হবে। তবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চলতে হবে, সততা নিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, একটা জিনিস মানুষকে জানাতে হবে যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে লুটপাট হয়, হাওয়া ভবন খোলে। মানুষ খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, লুটপাট ছাড়া বিএনপি আর কিছুই দিতে পারে না। মানুষকে এটাও বলতে হবে, সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের উন্নতি হবে না। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের অধিকাংশই বাস্তবায়ন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে যা বলেছি তার চেয়েও বেশিই করেছি। এখন সামনে আগামী নির্বাচন। তার জন্য ইশতেহার ঠিক করব। সেটা এখনই ঠিক করতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের সবাইকে মানুষের জন্য রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের জন্য, জনগণের ভাগ্য গড়ার জন্য আমি রাজনীতি করি। সবাইকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলতে হবে, মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতে হবে। আমি চাই সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের সেবা করা। তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করছি, কাজ করব- এই চিন্তাটা যদি মাথায় থাকে, নীতিটা যদি ঠিক থাকে তাহলে যে কোন চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আমি মনে করি যে কোন কাজ ও অর্জন করা যেতে পারে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয়বারের মতো নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে দলীয় কার্যালয়ে এসেছি। যানজটে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে জনস্বার্থেই এখানে কম আসা হয়। তবে দলের কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু অনেকদিন এখানে আসি না। মনটা চাচ্ছিল এখানে আসি। তাই চলে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দায়িত্ববোধ থেকেই কাজ করে। আওয়ামী লীগ নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য কাজ করে। এটাই হলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে পার্থক্য। বিএনপি ক্ষমতায় এলেই দেশে খুন খারাবি বেড়ে যায়। আর আওয়ামী লীগ এলেই উন্নয়ন হয়। তিন বছরে যে কাজ করার কথা ছিল, তার চেয়ে বেশি কাজ আমরা করেছি। আওয়ামী লীগ যা বলে, তা-ই করে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনাদের আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশের জন্য আত্মত্যাগ করতে হবে। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নিজ উদ্যোগে পদ্মা সেতু করছি। আমরা পারি এটি তার দৃষ্টান্ত। বিশ্বের অন্যান্য দেশ আমাদের এ উদ্যোগ দেখে নিজ থেকে তাদের দেশে সেতু নির্মাণে উদ্যোগী হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত ইতোমধ্যে আমরা কর্মসূচী ঘোষণা করেছি। অনেক কিন্তু হয়ে গেছে। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে কী কী করণীয় এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বের যেখানেই যাই অন্য দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরা বাংলাদেশের ‘দ্রুত উন্নয়ন’ কিভাবে হলো তা জানতে চান। দলের নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজের জন্য চিন্তা করি না। আমার দেশের মানুষ কেমন আছে, তাদের কি অবস্থা, তারা ভাল আছে কি না, তারা শিক্ষা পাচ্ছে কি না, চিকিৎসা পাচ্ছে কি না- এই চিন্তাই আমি সবসময় করি। এই চিন্তা আমরা করি বলেই তো আমরা কাজ করে সফলতা পাচ্ছি। ওয়ান ইলেভেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে সময় সরকারী দলে যারা দু’দিন আগেও ছিল (বিএনপি-জামায়াত), ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, তাদেরকে বাদ দিয়ে আমাকেই আগে গ্রেফতার করা হলো। আমরা স্বাধীনতা এনেছি। অথচ দেখা যায় আঘাতটা সবসময় আমাদের ওপরই আগে আসে। যাক সেই দুর্দিন কেটে গেছে। আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। তবে আমাদের পুরনো দিনের কথাও মনে রাখতে হবে এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমি আমার বাবাকে দেখেছি, বাবার কাছ থেকে শিখেছি। মাকে দেখেও শিখেছি। আমার মাকেও দেখেছি তিনি অনেক আত্মত্যাগ করেছেন। কিন্তু কখনই তিনি কোন জিনিসের জন্য আফসোস করেননি। বরং এই দলের জন্য তিনি নিজের গহনাটি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। সব সময়ই আমার বাবার পাশে পাশে থেকেছেন। প্রতিটি কাজেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করেছেন। কাজেই আমিও তো সেই পরিবার থেকে এসেছি। আমাদের কাজই হচ্ছে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা। কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক ॥ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী দলের কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টাদের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, সেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার সঙ্গে আলোচনা করব? যারা একুশে আগস্ট আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করেছিল তাদের সঙ্গে? যারা আমার দলের অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে? সূত্র জানায়, এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নেত্রীর (খালেদা জিয়া) ছেলে মারা যাওয়ার পর আমি তাঁকে সান্ত¡না দিতে গেলাম। কিন্তু মুখের ওপর বাসার গেট বন্ধ করে দিয়ে আমাকে ঢুকতে দেয়া হলো না। আমাকে অপমান করা হলো। যারা সামান্যতম সৌজন্যবোধ জানে না তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? আর কোন খুনীর সঙ্গে তো আমরা সংলাপে বসতে পারি না। তারা তো আসলেই খুনী, তাদের হাতে তো মানুষের রক্ত। তারা কোন মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে?
×