ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ চীন সাগর অবরোধ করতে চান ট্রাম্প মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী

টিলারসনের প্রস্তাবে যুদ্ধের শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

টিলারসনের প্রস্তাবে যুদ্ধের শঙ্কা

দক্ষিণ চীন সাগরে চীনাদের নির্মিত দ্বীপগুলোকে যযুরাষ্ট্র অবরোধ করলে এক বিপজ্জনক সামরিক সংঘর্ষ বেধে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং সেই অবরোধ দীর্ঘদিন বজায় রাখা খুবই ব্যয়বহুল হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে আগামী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি রেক্স টিলারসন বৃহস্পতিবার এরূপ কোন উদ্যোগের প্রস্তাব দেয়ার পর বিশেষজ্ঞরা সামরিক সংঘর্ষের সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। সিনেটর পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটিতে মনোনয়ন অনুমোদন সংক্রান্ত শুনানিতে টিলারসনের দেয়া ঐ প্রস্তাব চীনা নেতাদের শঙ্কিত করে তুলতে পারে। কারণ, এটি ট্রাম্পের নিজস্ব মন্তব্য ও মার্কিন সেনাবাহিনীর আরও কড়া মনোভাবাপন্ন নেতাদের পরামর্শের চেয়েও অনেক কঠোর পদক্ষেপ। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা একথা বলেন। প্রস্তাবটির প্রতি চীন প্রাথমিকভাবে সংযত প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এক্সন মবিল কর্পোরেশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী টিলারসনের প্রস্তাব নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। একই সঙ্গে তিনি চীনের দাবি করা সার্বভৌম ভূখ-ের ভেতর বেজিংয়ের তৎপরতা সমর্থন করেন। মুখপাত্র লুকাং নিয়মিত নিউজ ব্রিফিংয়ে বলেন, দু’দেশের মতানৈক্যের কারণে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো বাদ দেয়া উচিত হবে না বলে টিলারসন মন্তব্য করেছেন এবং ঐ বিষয়ে আমি তার সঙ্গে একমত। কয়েক চীনা ও পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ টিলারসনের অভিমতকে কোন বাস্তব প্রস্তাবের চেয়ে বরং সিনেটর উগ্রমনা সদ্য ও বেজিংয়ের প্রতি এক বার্তা হিসাবেই দেখেছেন। তাদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে এর পূর্বসূরির চেয়ে কঠোরত অবস্থান নেবে, টিলারসন এ বার্তাই দিতে চান। এমনকি তা সত্ত্বেও তার প্রস্তাব সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মার্কিন-চীনা সম্পর্কে সৃষ্ট অনিশ্চয়তাকে আরও ঘনীভূত করেছে। ট্রাম্প চীনের নির্মিত দ্বীপগুলোতে গড়ে তোলা ফাঁড়িগুলোসহ বাণিজ্য ও ভূখ- ইস্যুতে বেজিংয়ের সঙ্গে মোকাবেলার নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার পর ঐ অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তিনি ঐসব ফাঁড়িকে এক ‘বিশাল দুর্র্গ’ বলে বর্ণনা করেন। বানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দক্ষিণ চীন সাগর বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বুফেং বলেন, টিলারসনের মন্তব্য খুবই শঙ্কাজনক মনে হয়। আমার ধারণা, তিনি সম্ভাব্য সবচেয়ে শোচনীয় পরিস্থিতিই তুলে ধরতে চান। সমস্যা হলো, এটি উভয় শক্তিকে এক দুষ্ট আবর্তে টেনে নিয়ে যেতে পারে। গত তিন বছর ঐ সাগরে চীনের দ্বীপ নির্মাণের ফলে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর এশীয় মিত্র ও অংশীদারদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ধারণা, বেজিং প্রায় সমগ্র দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর এর দাবি বলবৎ করতে ঐসব স্থাপনাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে। এ সাগর বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত জাহাজ চলাচল পথ। ওবামা প্রশাসন চীনের তৎপরতার বার বার নিন্দা করে এবং দ্বীপগুলোর কাছে যুদ্ধজাহাজ ও বিমান পাঠায়, কিন্তু ঐ ভূখ-গত বিরোধে কোন পক্ষ অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকে। টিলারসন সিনেটের শুনানিতে বলেন যে, চীনের ঐসব দ্বীপ নির্মাণ ও সেখানে অস্ত্র মজুদ ২০১৪ সালে রাশিয়ার ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেয়ারই অনুরূপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল পাল্টা পদক্ষেপ বেজিংকে যথাসাধ্য এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের আরও কড়া পদক্ষেপ তিনি সমর্থন করেন কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চীনের উদ্দেশে এক স্পষ্ট সংকেত পাঠাতে যাচ্ছিÑপ্রথমত দ্বীপ নির্মাণ বন্ধ করতে হবে, দ্বিতীয়ত ঐসব দ্বীপে আপনাদের প্রবেশ করতেও দেয়া হবে না। কয়েক বিশ্লেষক বলেন, কোন অবরোধ কার্যকর করতে হলে চীনা জাহাজ ও বিমানকে ঐসব দ্বীপে পৌঁছা থেকে বিরত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। এটি হবে আন্তর্জাতিক জলপথ ও আকাশপথে চলাচলের স্বাধীনতার প্রতি ওয়াশিংটনের নিজস্ব প্রতিশ্রুতিরই লঙ্ঘন। সিঙ্গাপুরের বানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রিচার্ড বিটজিনগার বলেন, সেটি যুদ্ধেরই শামিল হবে। চীনারা কিভাবে জবাব দেবে। তাদের হাতে থাকা প্রতিটি অস্ত্র দিয়ে। ওয়াশিংটনের হাতে বিভিন্ন উপায় রয়েছে। কিন্তু কিউবান ধাঁচের ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কটের মতো অবরোধের সূচনা করা; এরূপ কোন উপায় নয়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, বেজিং নিশ্চিতভাবেই যে কোন অবরোধ প্রতিহত করবে। এতে এক সামরিক সংঘাত দেখা দেবে যা দ্রুত তীব্র রূপ নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রশক্তি সামগ্রিকভাবে বেশি হলেও চীনের কাছাকাছি এরূপ কোন অভিযান টিকিয়ে রাখতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের চড়া মাসুল দিতে হতে পারে।
×