ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হামলা ও সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছে এরা

পলাতক পাঁচ জঙ্গী মূর্তিমান আতঙ্ক, ধরতে নানা ফাঁদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

পলাতক পাঁচ জঙ্গী মূর্তিমান আতঙ্ক, ধরতে নানা ফাঁদ

শংকর কুমার দে ॥ দেশে এখন মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় রয়েছে দুর্ধর্ষ প্রকৃতির ভয়ঙ্কর ধরনের শীর্ষপর্যায়ের অন্তত পাঁচ জঙ্গী নেতা। বিগত তিন বছর ধরে দেশে জঙ্গী হামলা, ব্লগার হত্যাকা-সহ ভিন্নমতাবলম্বীদের খুন হওয়ার ঘটনাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসা পলাতক এ পাঁচ জঙ্গী এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। গোপন জঙ্গী আস্তানায় আত্মগোপনে থেকে তৎপর আছে তারা। জঙ্গী সংগঠনকে সংগঠিত করার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। আত্মগোপনে থাকা এ পাঁচ জঙ্গীকে ধরতে নানা ধরনের ফাঁদ পেতেছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, ভয়ঙ্কর দুর্ধর্ষ প্রকৃতির এ পাঁচ জঙ্গী হচ্ছে- জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক কমান্ডার সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম জিয়া, রাজধানীর আশকোনার সূর্য ভিলা নামের জঙ্গী আস্তানার মূল নায়ক মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গী হামলার অন্যতম অর্থ সংগ্রহকারী বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট ও এ জঙ্গী হামলার জন্য উত্তরাঞ্চল থেকে সুইসাইড স্কোয়াডের জঙ্গী সরবরাহকারী রাজিব গান্ধী ওরফে সুভাষ গান্ধী ও পুরনো জেএমবির শূরা সদস্য (বর্তমানে নব্য জেএমবির অস্ত্রের যোগানদাতা) মাহফুজ সোহেল ওরফে হাতকাটা সোহেল ওরফে নাসির উদ্দিন ওরফে ভাগিনা সোহেল। তাদের সঙ্গে আরও বেশ কয়েক জঙ্গী রয়েছে, যারা গোপন জঙ্গী আস্তানায় লুকিয়ে আছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, নব্য জেএমবির তামিম আহমেদ চৌধুরী, সারোয়ার জাহান ওরফে আবদুর রহমান, মেজর জাহিদুল ইসলাম, তানভির কাদেরী ও নূরুল ইসলাম মারজানসহ শীর্ষস্থানীয় জঙ্গীরা পুলিশের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তারপরও অন্তত যে চারজন শীর্ষ জঙ্গী নেতা আত্মগোপনে আছে তারা উচ্চশিক্ষিত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। গত তিন বছর ধরে জঙ্গী তৎপরতায় সম্পৃক্ত হয়ে বাড়িঘর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হিজরতে আছে পলাতক শীর্ষপর্যায়ের চার জঙ্গী নেতা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় জড়িতদের মধ্যে সর্বশেষ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে জঙ্গী নুরুল ইসলাম মারজান ও সাদ্দাম। ওই সময় তাদের সঙ্গে থাকা আরও এক জঙ্গী পালিয়ে গেছে বলে পুলিশের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে পলাতক জঙ্গীদের মধ্যে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী রয়ে গেছে, তারা যে কোন সময় বড় ধরনের জঙ্গী হামলার জন্য হুমকি বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের দাবি। পলাতক শীর্ষস্থানীয় জঙ্গীদের মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া, আশকোনার জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া মাঈনুল ওরফে মুসা, আজিমপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট, মাহফুজ সোহেল, রাজিব গান্ধি খুবই দুর্ধর্ষ ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। এ দুর্ধষ শীর্ষস্থানীয় পাঁচ জঙ্গী ছাড়াও সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য আবু ইউসুফ মোহাম্মদ বাঙালী, খোকন, ওয়াসিম আজওয়াদ ওরফে আসিফ আজওয়াদ, আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর, কমান্ডার মানিক, মামুনুর রশিদ লিটন, ইব্রাহিম হাসান খান ও তার ভাই জুনায়েদ হাসান খান, ইকবাল, মামুন, বাদল, সাগর, আজাদুল ওরফে কবিরাজ ও সাকিব ওরফে মাস্টার। তারা সবাই সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। হিজরতে থেকে জঙ্গী তৎপরতায় সম্পৃক্ত তারা। পলাতক থাকায় পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে এসব জঙ্গী। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়া ইতোমধ্যেই অনেক জঙ্গীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামিয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই নিহত ও গ্রেফতার হয়েছে। অনেকেই এখনও পলাতক আছে। এ জঙ্গী নেতা গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে- এমন কথা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তারা। অপর শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতা মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা ভয়ঙ্কর প্রকৃতির জঙ্গী নেতা, যা রাজধানীর আশকোনার সূর্য ভিলা নামক জঙ্গী আস্তানায় অভিযানকালে উদ্ধারকৃত অস্ত্র, বিস্ফোরক, সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধারে প্রমাণিত হয়েছে।
×