ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি লিটন হত্যা

জামায়াত ও বিএনপির দুই নেতাসহ গ্রেফতার ৫

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

জামায়াত ও বিএনপির দুই নেতাসহ গ্রেফতার ৫

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ১৩ জানুয়ারি ॥ সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ জামায়াত-বিএনপির দুই নেতাসহ আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। এরা হলোÑ সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মোজাম্মেল হক ভুটটু ও বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জহুরুল ইসলাম। তাদের সঙ্গে আরও পাঁচজন জামায়াত-শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সুত্রে দুজনের নাম জানা গেলেও বাকি তিনজনের নাম জানাতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে গ্রেফতারকৃতরা এমপি লিটন হত্যার সঙ্গে নানাভাবে সক্রিয় ছিল বলে পুলিশের সূত্র থেকে জানা গেছে। এদিকে, ঢাকা থেকে গ্রেফতারকৃত জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডার সুন্দরগঞ্জ থানা জামায়াতের আমির হাজী ইউনুস আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডার জহুরুল ইসলামকে ঢাকা থেকে সুন্দরগঞ্জ থানায় এনে শুক্রবার আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ তাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করবে বলেও জানা গেছে। সেই সঙ্গে নলডাঙ্গার প্রতাপ গ্রাম থেকে গ্রেফতারকৃত শিবিরের অপর প্রশিক্ষিত ক্যাডার মনিরুল ইসলাম রতনেরও রিমান্ডেরও আবেদন করা হবে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এদিকে সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় লিটন হত্যাকা-ে ব্যবহৃত আশরাফুল ইসলামের সেই কালো রংয়ের পালসার মোটরসাইকেলটি হন্যে হয়ে খুঁজেছে পুলিশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত মোটরসাইকেলটির কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, জামায়াতের আমির হাজী ইউনুস আলীর ছেলে আশরাফুল ও তার সহযোগী জহুরুল দুজনই প্রশিক্ষিত ক্যাডার। আশরাফুল ঢাকার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাভারের আশুলিয়া ক্যাম্পাসে বিবিএতে পড়াশোনা করত। তার সহযোগী জহুরুল ইসলামও ঢাকাতেই অবস্থান করছিল বলে জানা গেছে। পুলিশ অবগত হয়েছে, এমপি লিটন হত্যার আগের দিন তারা সুন্দরগঞ্জে কালো রংয়ের মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল। লিটন নিহত হওয়ার পর থেকে তারা সুন্দরগঞ্জ থেকে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব বৃহস্পতিবার ঢাকার বাড্ডা থেকে তাদের গ্রেফতার করে সুন্দরগঞ্জ পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। জামায়াত নেতা ঘোড়ামারা আজিজের বার্না এন্টারপ্রাইজ তালাবদ্ধ ॥ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মানববতাবিরোধী মামলার আসামি সুন্দরগঞ্জের জামায়াতের সাবেক এমপি ঘোড়ামারা আজিজ প্রতিষ্ঠিত বামনডাঙ্গার বার্না এন্টারপ্রাইজে এখন তালা ঝুলছে। বার্না এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জামায়াত নেতা নজরুল ইসলাম, পরিচালক হারুন অর রশিদ, প্রভাষক আমির উদ্দিন, প্রভাষক আজাদুল ইসলাম এমপি লিটন হত্যার দিন থেকেই বামনডাঙ্গা থেকে গা-ঢাকা দিয়েছে। ঘোড়ামারা আজিজসহ এ পরিচালকরা মিলে জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রমে অর্থের যোগান দিতেই এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করে। এমপি থাকাকালীন আব্দুল আজিজ তার নিজস্ব তহবিল থেকে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে প্রায় ১০ লাখ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করে। সুন্দরগঞ্জ এলাকায় ইটভাঁটি, ঠিকাদারি এবং বেসরকারী ট্রেন পরিচালনার ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে এবং তা জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রমে যোগান দিয়ে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টরসহ তিন পরিচালকই ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরগঞ্জে জামায়াতের তা-ব, সহিংসতা, নাশকতা এবং চার পুলিশ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এমপি লিটন নিহত হওয়ার রাত থেকেই তারা সকলেই প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে এলাকা থেকে উধাও হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ফলে পুলিশ এখন তাদের খুঁজছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পিআইওর অফিসে তালা ঝুলছে ॥ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী প্রামাণিক ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থে ১৩টি ব্রিজ নির্মাণ না করে সমুদয় অর্থ আত্মসাত করলে এমপি লিটন তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়ে অভিযোগ করেন। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পার্শ্ববর্তী রংপুরের পীরগঞ্জে বাড়ি হওয়ার সুবাদে ওই পিআইও নুরুন্নবীর জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এসব কারণে এমপি লিটনের সঙ্গে পিআইও রীতিমতো বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিল। তাকেও এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ ইতোপূর্বে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সম্প্রতি সে অফিসে তালা ঝুলিয়ে সুন্দরগঞ্জ থেকে উধাও হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
×