ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ দূতের সফরের বিষয়ে মিয়ানমারের মূল্যায়ন

শুধু রোহিঙ্গা ইস্যু নয় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন লক্ষ্য ছিল

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

শুধু রোহিঙ্গা ইস্যু নয় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন লক্ষ্য ছিল

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গা নাগরিকদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করে সুবিধাজনক সময়ে ফিরিয়ে নিতে চায় মিয়ানমার। আর শুধু রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সফরে আসেননি, দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের বিশেষ দূত বাংলাদেশে এসেছিলেন। মিয়ানমারের বিশেষ দূত ও দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউ কিউ তিন-এর সফরকে এভাবেই মূল্যায়ন করছে দেশটি। শুক্রবার মিয়ানমার টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। মিয়ানমারের বিশেষ দূত ইউ কিউ তিনের ঢাকা সফর নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডো আই আই সোয়ে বলেছেন, মিয়ানমারের বিশেষ দূত হিসেবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউ কিউ তিন ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে সেখানে আলোচনা করেছেন। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিশেষ দূতের ঢাকা সফরের সময় অন্য একটি আলোচনা ছিল সম্প্রতি বাংলাদেশে যাওয়া শরণার্থী। আমরা বলেছি, মিয়ানমার থেকে যদি কোন নাগরিক সেখানে গিয়ে থাকে যাচাই-বাছাই করে সুবিধামতো সময়ে ফেরত নিয়ে আসব। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইউ কোয়া জিয়া জানিয়েছেন, শুধু রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের বিশেষ দূত বাংলাদেশ সফর করেননি। একজন বিশেষ দূত হিসেবে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য। শুধু একটি বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি সেখানে যাননি। মিয়ানমার টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্তে ইসলামিক জঙ্গী গোষ্ঠী দমনে মিয়ানমার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার ফলে মিয়ানমার সরকার পাহাড়সম আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেই মিয়ানমারের বিশেষ দূত বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ মিয়ানমারকে জানিয়েছে, গত অক্টোবর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক প্রবেশ করেছে। এছাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে ৩০ হাজারসহ আরও তিন লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এসব নাগরিককে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া মিয়ানমারের বিশেষ দূতের ঢাকা সফরের সময় নিরাপত্তা সংলাপ ও সহযোগিতা এবং বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস স্থাপনে দুটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিশেষ দূতের ঢাকা সফরের সময় রোহিঙ্গা নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারের নিকট একটি কর্মকৌশল নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। এছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। গত অক্টোবরে মিয়ানমারে তিনটি সীমান্ত পোস্টে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার পর সামরিক অভিযান শুরু হলে বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে শরণার্থীদের ঢল নামে। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেয়া হয় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা স্রোত নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউন সান সুচির বিশেষ দূত হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকা আসেন দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউ কিউ তিন। বুধবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
×