ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীতে বাহারি রঙের গাঁদা

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

শীতে বাহারি রঙের গাঁদা

ফুল শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে নিগূঢ় ভালবাসা। সৃষ্টির শুরু থেকে ফুলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা অন্য এক অনুভূতির রসদ জোগাচ্ছে। কালে কালে ফুল হয়ে উঠেছে সব আচার-আচরণ আর অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ। মানুষ হয়ে উঠেছে ফুলের পূজারী। ফুলের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সুন্দরের অপার রহস্য। মানুষ ফুলের সৌন্দর্যের কাছে নিজেকে হারিয়ে দিতে চায়। মানুষ শুধু ফুলের সৌন্দর্যেই নিজেকে হারাতে চায় না, সৌরভেও নিজেকে বিলীন করে দেয়। এই আকর্ষণে যুগে যুগে ফুলের বাগান কিংবা উদ্যান গড়ে উঠেছে। হালে ব্যাপক প্রচলন হওয়ায় বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে ফুল। ফুলের ব্যবহারের কারণে চাষ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এর বেচাকেনাও। এখন ফুল ছাড়া কোনো অনুষ্ঠান শূন্য দায়সারা মনে হয়। রাজশাহী নগরেও বেড়েছে ফুলের ব্যবসা। নগরীতে অন্তত অর্ধশত ফুলের দোকান বসেছে গত কয়েক বছরে। বেচাকেনা চলে বছরজুড়ে। একসময় রাজশাহীর ফুল ব্যবসায়ীরা যশোর ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুল এনে ব্যবসা করতেন। তবে হালে রাজশাহী অঞ্চলেও বেড়েছে ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ। এরই মধ্যে ফুল চাষ করে অনেকে হয়েছে স্বাবলম্বী। নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে বেশকিছু ফুলের দোকান গড়ে উঠেছে। দুই তিন বছর আগেও মাত্র দুই একজন ফুলের ব্যবসা করলেও এখন সেখানে গড়ে উঠেছে ফুলের বাজার। সারাদিন তরুণ-তরুণীদের জটলা চোখে পড়ে এসব ফুলের দোকান ঘিরে। কেউ প্রিয়জনকে ফুল উপহার দেয়ার জন্য, কেউ অনুষ্ঠান সাজাতে। এছাড়া বিয়ে, জন্মদিন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্যও ফুলের বাণিজ্য জমজমাট। চাষিরা জানান, ফুলের ব্যবসা খুবই নাজুক। ফুল বেশিদিন রাখা যায় না। তারপরেও ব্যবসা মন্দ হয় না। আগের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন ফুলের কদর বেড়েছে সবখানে। বিয়ের গাড়ি সাজানো থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানের মঞ্চ সাজানো সবকিছুই হচ্ছে টাটকা সুরভিত ফুল দিয়ে। আর প্রতিদিন এমন অনুষ্ঠান লেগেই আছে। তাই ফুলের ব্যবসাও ভাল। এ অঞ্চলে এখন ডালিয়া, জিনিয়া, জিনিয়া গাঁদা, চায়না গাঁদা, ক্যাম্বেলুনা, সিলভিয়া, মোরগজটা, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, গোলাপ ছাড়াও গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ হচ্ছে। আর গাঁদা ফুলের চাষ তো রয়েছেই। রাজশাহীতে জমে উঠেছে শীতকালীন ফুলের কারবার। পুরো মৌসুম জুড়ে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্যের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শীতের প্রকৃতিতে চাষির বাগানেও উঁকি দিচ্ছে গাঁদা ফুল। হলুদ গাঁদা। কমলা গাঁদা। সোনালী গাঁদা। বেগুনি গাঁদা। গাঢ় লাল রঙের গাঁদা। গ্রামে বাড়ির উঠানে, এমনকি শহরে বাড়ির ছাদে বা বারান্দার টবে- এমন বাহারি রঙের গাঁদা চোখে পড়ছে। শীতে প্রকৃতির সৌদর্য বিকাশে নতুন মাত্রা দিয়েছে নানা রঙের গাঁদা। তবে বাণিজ্যিকভাবে গাঁদা চাষে নেমেছেন পবা উপজেলার দামকুড়ার হরিষার ডাইং এলাকার জাফর ইকবাল। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে একবিঘা জমিতে হলুদ গাঁদার চারা রোপন করেছেন। বাগান থেকে ফুল বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। এবারের বিজয় দিবসে ফুল ব্যবসায়ীরা তাঁর বাগান থেকে ৬০ হাজার টাকার ফুল কেনার অর্ডার দিয়েছিল। এক বিঘা জমিতে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদন ভাল হলে লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছি। তাঁর ফুল চাষে প্রথমে অনেকে হাসাহাসি করেছে। কিন্তু এখন তারাই ফুলচাষের জন্য তাঁর কাছে পরামর্শ নিচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, শীতকালীন ফুলের মধ্যে গাঁদা অন্যতম। সাধারণত এটি শীতকালীন ফুল হলেও বর্তমানে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালেও চাষাবাদ হয়ে থাকে। গাঁদা ফুলের আছে নানান রকম ওষধী গুণ। নার্সারি মালিক সমিতির হিসেবে, রাজশাহীতে ফুলের চাষ ও চারা বিক্রি হয় এমন নার্সারি রয়েছে ৩৮টি। এর মধ্যে ১৫টি বড়। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে এসব নার্সারিতে শুরু হয়েছে শীতকালীন চারা ও ফুলের কেনাবেচা। প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার চারা বিক্রি হয় এসব নার্সারি থেকে। এবারো সেই টার্গেটে এগুচ্ছে তারা। নার্সারী মালিকদের হিসেবে, একেকটি বড় নার্সারি মৌসুমে শুধু চারা বিক্রি করে অন্তত ১০ লাখ টাকার। -মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
×