ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফুল আনোয়ারের জীবনে এনেছে ফুল-ফল

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

ফুল আনোয়ারের জীবনে এনেছে ফুল-ফল

ভালবাসার প্রতীক ফুল। প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রথম পরিচয় ফুল ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। প্রেম নিবেদন ছাড়াও ফুলের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। ফুল পছন্দ করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এখন ক্লাস পার্টি কিংবা ছোটখাটো অনুষ্ঠানও ফুল ছাড়া বেমানান। দৈনন্দিন জীবনে ঘর সাজানো, গায়ে হলুদ, বিয়ের স্টেজ, বরের গাড়ি, কনের গাড়ি, বাসরঘর, বৌভাত, জন্মদিন, সেমিনার, সমাবেশ কিংবা রাষ্ট্রীয় বিশেষ দিনে ফুলের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এখন শোক দিবসের অনুষ্ঠানেও ফুলের কদর বেড়েছে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার। তাই সারা বছরই বাজারে ফুল পাওয়া যায়। তবে নবেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিশেষ রঙের ফুল আসে বাজারে। তাই এই সময়কে ফুলের ঋতুও বলা হয়। এ সময় গাঁদা, কসমস, সূর্যমুখী, রজনীগন্ধা, বেলি, বকুল, সাদা গোলাপ, লাল গোলাপ, লিলি, অষ্টার, অর্কিড, জুঁই, কাটবেলিসহ আরও অনেক রকম ফুল বাজারে পাওয়া যায়। যত দিন যাচ্ছে ফুলের ব্যবহার ও চাহিদা বাড়ছে। ফুলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে অসংখ্য মানুষের কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কেউ ফুল উৎপাদনকারী, কেউ ফুল ব্যবসায়ী। ফুল যে জীবিকা নির্বাহের উৎস হতে পারে তা নিকট অতীতে রংপুরের মতো মফস্বল শহরের মানুষ ভাবতেই পারেনি। এখন দিন পাল্টেছে। ফুল চাষ এবং ফুলের ব্যবসাকে অনেকেই জীবিকা হিসেবে নিয়েছে। অনেকে স্বাবলম্বীও হয়েছে। রংপুর মহানগরের পুলিশ লাইন্স স্কুলের সামনে থেকে সরকারী বালিকা স্কুলের সামনের রাস্তা পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি ফুলের দোকান নানা জাতের বিচিত্র রঙের ফুলের পশরা সাজিয়ে বসে আছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত ফুল বিক্রি চলে। নগরীর অন্যান্য এলাকাতেও গড়ে উঠেছে ফুলের দোকান। নগরীর বাইরে থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে ফুল নিয়ে আসে। এখান থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্রেতার হাতে চলে যায়। ফুল ব্যবসায়ী রশীদ জানালেন, ফুলের দোকানের বেচা-বিক্রি দোকান আর ফুলের ধরণের ওপর নির্ভর করে। তবে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়াও দোকানগুলোতে দৈনিক ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ফুল বিক্রি হয়। তিনি জানালেন, তার ছোট দোকান থেকে দৈনিক সব খরচ বাদ দিয়ে চার পাঁচজনের সংসার চলে। ফুলের দোকানে কাজ করা যত সহজ, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কিভাবে ফুলের যতœ নিতে হয়, ফুল দিয়ে কিভাবে মালা, জুড়ি বা ডালা বানাতে হয়। তাই মৌসুমী কিংবা খ-কালীন দোকান দেয়ার আগে অবশ্যই ফুল সম্পর্কে জানতে হয়। রংপুর মহানগরে বাণিজ্যিকভাবে ফুল বিক্রি ও চাষ শুরু হয়েছে আনোয়ারুল ইসলামের হাত ধরে। তার দেখানো পথে রংপুর শহরে এখন ৫০ জনের বেশি বেকার ফুলের ব্যবসা করছে। রংপুরে ৪০ একর জমির ২০টি নার্সারি থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকার ফুল উৎপাদিত হয়। ১৯৮৭ সালের দিকে রংপুর শহরের মাহীগঞ্জের রথবাড়ী এলাকার দরিদ্র যুবক আনোয়ার নিজের বুদ্ধিতেই ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করা শুরু করেন। তখনও রংপুরে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ শুরু হয়নি। তাই তিনি প্রথমে শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে বাড়ির বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করে জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের সিঁড়ির পাশে ছোট জায়গায় ফুল বিক্রি শুরু করেন। সেই থেকেই শুরু, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ফুলের চাহিদাও বাড়তে থাকে। সেই সময় সিও বাজার এলাকায় বড় বাগান গড়ে ওঠে। ওই বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করতেন তিনি। তার দেখাদেখি আরও কিছু বেকার ফুল ব্যবসায়ে নেমে পড়ে। তৈরি হয় নতুন নতুন নার্সারি। ১৯৯৩ সালে পলিটেকনিক স্কুল ও কলেজের সামনের ফুটপাথ এবং জেলা পরিষদ ভবনের সামনের ফুটপাথে ফুল বিক্রির জায়গা করে নেন আনোয়ার। বাগান থেকে সংগ্রহ ফুলে চাহিদা মেটাতে না পেরে আড়াই একর জমি বর্গা নিয়ে লাল গোলাপ চাষ করেন। পরম যতেœ গড়ে তুললেন ফুলের বাগান। কঠোর পরিশ্রম তাকে সাফল্য এনে দেয়। দুই যুগ ধরে ফুলের ব্যবসা করছেন আনোয়ার। -আব্দুর রউফ সরকার রংপুর থেকে
×