ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে যে কোন উইকেটে ৩৫৯ রানের সেরা জুটি

সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড জুটি

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড জুটি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একদিনে ৩৮৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এমন অবিস্মরণীয় কীর্তির পেছনে আছে দু’জনের বিস্ময়কর ব্যাটিং। সাকিব আল হাসান ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন একদিনেই যা বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যানই পারেননি, কারণ দেশের পক্ষে এটি সবেমাত্র তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। আর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম করেছেন ১৫৯ রান। পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের যে জুটি হয়েছে সেটা অনেক রেকর্ডের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে যে কোন উইকেট জুটিতে এটিই সর্বাধিক রান। শুধু নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ সিরিজের ক্ষেত্রে দুই দলের খেলা টেস্টে সেরা জুটিরও রেকর্ড এটি। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি পঞ্চম উইকেটের চতুর্থ সেরা জুটির মর্যাদা দখল করেছে। আর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পঞ্চম উইকেটে এত রানের জুটি গড়ার রেকর্ডও নেই অন্য কোন দলের। কিউইদের বিরুদ্ধে যে কোন উইকেট জুটির দিক থেকেও এটি চার নম্বরে। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে এই কীর্তির জন্ম দিয়েছেন সাকিব-মুশফিক চলমান প্রথম টেস্টের দ্বিতীয়দিন শুক্রবার। মুমিনুল দ্বিতীয়দিনের প্রথমেই সাজঘরে ফেরার পর শঙ্কা মাথাচাড়া দিয়েছিল হয়ত বিপর্যয়টা ঘনীভূত হবে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড বোলারদের ওপর পুরোপুরি ছড়ি ঘুরালেন এরপর সাকিব-মুশফিক। তাদের সাবলীল ও স্বাচ্ছন্দ্য ব্যাটিং বিস্ময়ের জন্ম দিল। দু’জনই হাঁকালেন সেঞ্চুরি। সাকিব তো শতক পেরিয়ে পেয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম আর বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি। তারা পঞ্চম উইকেটে যে ৩৫৯ রানের জুটি হলো সেটাকে ভেঙ্গে ফেলেন পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকা মুশফিক দিনের প্রায় শেষভাগে একমাত্র ভুলটা করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তখনও সাকিব ডাবল থেকে ১৪ রান দূরে। সারাদিনের জুটির সঙ্গী মুশফিককে হারিয়েও বিচলিত হননি সাকিব। পেয়ে গেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। টেস্টের ইতিহাসে ম্যাচের একদিনেই ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর রেকর্ড আছে ৪১ জনের। তার মধ্যে ঠাঁই করে নেন সাকিবও। অনেকটাই ধীরস্থির খেলা মুশফিক ২৬০ বলে ২৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৫৯ রান করেন। আর সাকিব থামেন মাত্র ২৭৬ বলে ৩১ চারে ২১৭ রান করে। আগেরদিন ৫ রানে অপরাজিত থাকা সাকিবের ব্যাট থেকে এদিন আরও ২১২ রান আসে। ৩৫৯ রানের বিশাল জুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পরও তাই বিশাল এক সংগ্রহে পৌঁছে বাংলাদেশ। এমন কীর্তির পেছনে ওই ৩৫৯ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পঞ্চম উইকেটে ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে লাহোরে জাভেদ মিয়াদাদ ও আসিফ ইকবালের ২৮১ ছিল আগের সর্বোচ্চ। পঞ্চম উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের আগের সেরা জুটিতেও ছিলেন মুশফিক। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে তার সঙ্গে ১৪৪ রানের জুটি গড়েছিলেন মেহরাব হোসেন জুনিয়র। তবে এটি বাংলাদেশের পক্ষে যে কোন উইকেটেরই সেরা জুটির রেকর্ড। তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েস ৩১২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেটাকেও টপকে গেছেন দু’জন। আর টেস্ট ইতিহাসে সাকিব-মুশফিকের জুটি পঞ্চম উইকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ। ৪০৫ রান নিয়ে ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর থেকে রেকর্ডটা দখলে রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্র্যাডম্যান ও সিডনি বার্নস। নিউজিল্যান্ডে এটাই বাংলাদেশের সেরা জুটি। এখানে তাদের আগের সেরা ছিল ২০০৮ সালে ডানেডিনে জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে তামিমের ১৬১ রান। ওয়েলিংটনে পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল মাত্র ২৬ রানের। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজেও দুই দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন সাকিব-মুশফিক। পেছনে ফেলেন মার্টিন গাপটিল ও ব্রেন্ডন ম্যাককুলামকে। নিউজিল্যান্ডের এ দুই ব্যাটসম্যান ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েছিলেন ৩৩৯ রানের জুটি। রেকর্ড হয়েছে নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও। পঞ্চম উইকেটে নিউজিল্যান্ডে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল ১৯৯৪ সালে এই মাঠেই ইনজামাম-উল-হক ও সেলিম মালিকের ২৫৮। তারচেয়ে ১০১ রান বেশি করেছেন সাকিব-মুশফিক। যে কোন উইকেটে এটি বাংলাদেশের পক্ষে সেরা জুটি। এর আগে পঞ্চম উইকেটে মুশফিক ও মোহাম্মদ আশরাফুল ২০১৩ সালে গলে করেছিলেন ২৬৭ রান। সেটাই ছিল সেরা। আরেকটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন সাকিব-মুশফিক। তামিম-ইমরুলের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় জুটি হিসেবে টেস্টে দুই হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন সাকিব-মুশফিক জুটি। টেস্টে তিনটি শতক, ১৪টি অর্ধশতকসহ তাদের রান ২ হাজার ১৭। তামিম-ইমরুল জুটির রান ২ হাজার ২২৯।
×