সহকারী শিক্ষক, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
মোবাইল নম্বর:০১৭০৪২৪৪০৮৯
আজ ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্প থেকে একটি উদ্দীপক উত্তরসহ ছাপা হলো।
২। ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বানের জলে ভেসে আসা হাতি ‘বঙ্গ বাহাদুর’ জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মারা যায়। কয়রা গ্রামের বাসিন্দা হাজী বরকতুল্লাহ বলেন, ‘বানের পানিতে আমার দুই বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তাতে আমার কষ্ট নেই। কিন্তু হাতিটি মরে যাওয়ায় অনেক কষ্ট পেয়েছি।’
(সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৬ অগাস্ট ২০১৬)
ক. জীবিকার সন্ধানে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কোথায় গমন করেন?
খ. শীর্ণ দেহের মেয়েটিকে দেখে লেখকের কেন দুঃখ হতো?
গ. উদ্দীপকের বরকতুল্লাহর মধ্য দিয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন্ দিকটি প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনার চেয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বিষয়বস্তু আরর ব্যাপক- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :
ক. জীবিকার সন্ধানে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রেঙ্গুন গমন করেন।
খ. মেয়েটি ছিল দুঃখী ও দরিদ্র পরিবারের। লেখক বিকেলে গেটের বাইরে পথের ধারে এসে একা বসতেন। পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া নানা ধরনের রোগীকে দেখতে পেতেন। তখন লেখকের কষ্ট হতো। সবচেয়ে বেশি দুঃখ হতো একটি দরিদ্র ঘরের রোগা মেয়েকে দেখে। শীর্ণ দেহ, পা-ুর মুখ যেন রক্তশূন্য এক মানুষ। আত্মীয়স্বজন ছাড়া সে একা যেত। শুধু তিনটি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। বয়স মাত্র চব্বিশ থেকে পঁচিশ হবে। নিজের দেহটাকে টানার মতো যেন সামর্থ্য নেই, তবুও তার কোলে একটি ছোট ছেলে। দেখে মনে হতো খুব ক্লান্ত। তাই শীর্ণ দেহের দরিদ্র মেয়েটিকে দেখে লেখকের খুব দুঃখ হতো।
গ. উদ্দীপকের বরকতুল্লাহর মধ্য দিয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অবলা প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসা প্রকাশ পেয়েছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক চিকিৎসকের পরামর্শে দেওঘরে এসেছিলেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য। পথ চলতে গিয়ে একদিন লেখকের একটি কুকুরের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তারপর লেখকের পিছনে পিছনে সে বাড়ি পর্যন্ত এসে লেখককে পৌঁছে দেয়। এরপর থেকে প্রতিদিনই লেখকের নিজ বাড়ি ফিরে আসা পর্যন্ত কুকুরটি লেখকের কাছে আসত। লেখকও ভালবাসা দিয়ে কুকুরটিকে কাছে টেনে নেয়। তার খাবারের খোঁজখবর নেন। অনেক ভাব বিনিময়ও করেন। এভাবেই কুকুরটির প্রতি লেখকের মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়। কুকুরটিকে লেখক অতিথির মর্যাদা দিয়েছিলেন। ভালবাসার কারণে লেখকের বিদায় বেলায় কুকুরটি ক্রমাগত ছোটাছুটি করছিল। কুকুরটিকে লেখকের ফেলে আসতে মন সায় দেয়নি। শেষ পর্যন্ত রেখে এলেও প্রাণীটিকে তিনি ভুলতে পারেননি।
উদ্দীপকের বরকতুল্লাহ ‘বীর বাহাদুর’-এর অকাল মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারেননি বলে তার খুব কষ্ট হয়েছে। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে হাতিটির প্রতি বরকতুল্লাহর মমত্ববোধ ও ভালবাসার জন্ম হয়েছিল। হাতিটি অসুস্থ থাকার পর মারা যাওয়ায় বরকতুল্লাহর হৃদয়কে ব্যথিত করেছে। তার দুই বিঘা জমির ফসল বানের জলে নষ্ট হওয়ার মাধ্যমে যে কষ্ট পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে হাতি ‘বীর বাহাদুর’-এর মৃত্যুতে।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বরকতুল্লাহর হাতিটির প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসা প্রকাশের মধ্য দিয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অবলা প্রাণী কুকুরের প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসা ফুটে উঠেছে।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনার চেয়েও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বিষয়বস্তু আরও ব্যাপক।
ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বানের জলে ভেসে আসা হাতি ‘বীর বাহাদুর’ অসুস্থ হওয়ার পর অকাল মৃত্যুতে বরকতুল্লাহ কষ্ট অনুভব করেছে। হৃদয় ব্যথিত হয়েছে। বরকতুল্লাহ দুর থেকে হাতিটিকে দেখে তার প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসার জন্ম হয়েছে। তিনি হাতিটিকে খাবারও দেন নি বা চিকিৎসাও করাননি। ফলে হাতিটির প্রতি বরকতুল্লাহর মমত্ববোধ ও ভালবাসা জন্ম হয়েছে প্রাণীর প্রতি ভালবাসা থেকে। কিন্তু হাতিটির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব বা সখ্য গড়ে ওঠেনি। হাতিটির সঙ্গে ভাব বিনিময়ও করার সুযোগ পাননি। আবার হাতিটি বরকতুল্লাহর ব্যাপারে কোন সাড়াও দেয়নি।
আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক চিকিৎসকের পরামর্শে বায়ু পরিবর্তন করতে এসে রাস্তায় এক কুকুরের সঙ্গে পরিচয় হয়। কুকুরটি লেখকের সঙ্গে ভাব বিনিময় করে। বাড়ি পর্যন্ত আসে। দরজা বন্ধ করে বাড়ির সবাই যখন ঘুমায় অতিথি তখন উঁকি মেরে দেখে। অতিথির তখনও দ্বিধা-সঙ্কোচ কাটেনি বলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার ভরসা পায়নি। অসুস্থতার কারণে লেখক বাইরে বেরোতে না পারলেও তাকে দেখতে আসে। তবে লেখকের সঙ্গে দেখা করতে আসত। মালির বউয়ের হাতে মার খেয়েছে তার পরেও লেখককে ভুলে যায়নি। লেখক যখন বিদায় নিচ্ছেন তখন অতিথি লেখকের জন্য ছোটাছুটি করেছে। সবাই বখশিশ পেয়েছে কিন্তু বখশিশ পায়নি কুকুরটি। ট্রেন যখন ছেড়ে দিয়েছে তখন অতিথিও ট্রেনের পেছন পেছন হাঁটা শুরু করে যা আমাদের গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে। লেখকও কুকুরটিকে ফেলে যেতে চায়নি। ফেলে আসতে বাধ্য হলেও প্রাণীটিকে ভুলতে পারেননি।
সর্বোপরি, লেখক যেমন কষ্ট পেয়েছে তেমনি লেখকের বিদায় বেলায় স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে কুকুরটি লেখকের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা প্রকাশ করেছে। তাই আমরা বলতে পারি যে, উদ্দীপকের ঘটনার চেয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বিষয়বস্তু আরও ব্যাপক।
বহুনির্বচনি প্রশ্ন :
১। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ভারতের কোন রাজ্যে?
ক. পশ্চিমবঙ্গ
খ. ত্রিপুরা
গ. আসাম
ঘ. মণিপুর
২। ‘দেনা-পাওনা’ উপন্যাসটির রচিয়তা কে?
ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খ. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
গ. মোহিতলাল মজুমদার
ঘ. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৩। বাড়তি খাবারের অংশীদার কে ছিল?
ক. চাকর
খ. মালি-বৌ
গ. অতিথি
ঘ. ভিক্ষুক
৪। ‘কি ক্লান্তই না মেয়েটির চোখের চাহনি’- কোন মেয়েটি?
ক. মালিনীর
খ. পান্ডুর রোগীর
গ. বাতব্যাধিগ্রস্তের
ঘ. পা ফোলা রোগীর
৫। কুকুরের চোখ দুটো ভিজে ভিজে মনে হওয়ার কারণ-
র. মালির বউ তাকে কিছু খেতে না দিয়ে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে
রর. চোখে সমস্যার কারণে
ররর. লেখককে দেখে অভিমানে আবেগাপ্লুত হয়ে
নিচের কোন্টি সঠিক?
ক. র
খ. রর
গ. র ও ররর
ঘ. র রর ও ররর
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৬ ও ৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
অবলা প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসা প্রদর্শন করা মানে সৃষ্টিকর্তাকে সেবা করা। তাদের বিনা কারণে কখনও কষ্ট দেয়া উচিত নয়। কারণ প্রত্যেকের জীবন নিজের কাছে খুবই মূল্যবান।
৬। উদ্দীপকে কোন্ ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে?
ক. দুর্বল বলে মানুষ তাদের প্রতি দয়াশীল
খ. মানুষ তাদের ওপর কর্তৃত্বপরায়ণ কিন্তু দয়াশীল
গ. জীবজন্তুর প্রতি দয়া দেখাতে মানুষ বাধ্য
ঘ. জীবজন্তু মানুষের পরম বন্ধু
৭। উদ্দীপকে প্রাণীদের কষ্ট না দেয়া-
র. ধর্মীয় দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত
রর. নৈতিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত
ররর. সামাজিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত
নিচের কোন্টি সঠিক?
ক. র
খ. রর
গ. র ও রর
ঘ. র, রর ও ররর
৮। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বিষয়বস্তু কী?
ক. সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়া করা
খ. মানুষ ও জীবের প্রতি ভালবাসা
গ. জীবের প্রতি অবহেলা
ঘ. অস্বাভাবিক প্রতিকূলতা
৯। অল্প বয়সী মেয়েরা মোজা পরত কেন?
ক. শীতকাল বলে
খ. অভিজাত বলে
গ. সৌন্দর্য ঢাকতে
ঘ. ফোলা পা ঢাকতে
১০। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসটির খ- সংখ্যা কত?
ক. দুই খ. তিন গ. চার ঘ. পাঁচ
উত্তর : ১,ক ২. ঘ ৩. খ ৪. খ ৫. গ ৬. খ ৭. গ ৮. খ ৯. ঘ ১০.গ
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: