ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দালালের প্রতারণায় তুরস্কের কারাগারে রাজশাহীর যুবক

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

দালালের প্রতারণায় তুরস্কের কারাগারে রাজশাহীর যুবক

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ দালালের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলার গৌর চন্দ্র শীল তিনি এখন তুরস্কের কারাগারে বন্দী আছেন। গৌরের গোদাগাড়ীর পাকড়ি ইউনিয়নের জাওইপাড়া গ্রামের নরেন্দ্রনাথ শীলের ছেলে। গৌরের বিষয়ে সম্প্রতি তুরস্ক থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি এসেছে। সে প্রেক্ষিতে গৌরের গোয়েন্দা সংস্থা তার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। গত বুধবার গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা গৌরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপরই পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারে। গৌরের এমন বিপদের কথা শুনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা। গোয়েন্দা সংস্থাটি জানায়, দালালের প্রতারণার কারণে গৌরের এমন বিপদ ঘটেছে। সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন। এরপর গৌরকে দেশে ফেরত আনতে সরকার উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে দালালের বিরুদ্ধেও। গৌররে বাবা নরেন্দ্রনাথ শীল জানান, তার ছেলে পেশায় নাপিত। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে গৌর দালালের মাধ্যমে ইরাক যান। নানা প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় দালাল হযরত আলী চার লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে বিদেশে পাঠান। ছেলের বিদেশ যাওয়াতে তিনি দুই লাখ টাকায় নিজের এক বিঘা জমি বিক্রি করেন। বাকি টাকা বেসরকারী সংস্থা ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নেন। তিনি জানান, মাসে ৩৫ হাজার টাকা বেতনে ইরাকে গৌরকে অফিস পরিচ্ছন্নকর্মীর কাজ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাকে সড়ক পরিষ্কারের কাজ দেয়া হয়। প্রচ- গরমে কষ্ট করে গৌর এ কাজ করছিলেন। কিন্তু বেতনও তেমন একটা দেয়া হতো না। এরই মধ্যে মাত্র এক বছরের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে মাত্র এক লাখ টাকা দেশে পাঠাতে পারেন গৌর। গৌরের স্ত্রী রুমা রানী জানান, ইরাকে বেতন দেয়া হতো খুবই সামান্য। বেতন মিলতো দুই-তিন মাস পরপর। কাজ করতে হতো প্রচ- রোদে। খাওয়ার কষ্টও ছিল মারাত্মক। দালাল তাকে মাত্র এক বছরের ভিসায় ইরাক পাঠিয়েছে, বিষয়টি তারা আগে জানতেনও না। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তার স্বামী বিনা ভিসায় তুরস্কে প্রবেশ করেন। প্রায় একমাস আগে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। রুমা রানী জানান, গৌর বিদেশ যাওয়ার পর থেকে দারুণ আর্থিক অনটনে পড়েছেন তিনি। এক ছেলে ও এক মেয়েসহ নিজের খাবার জোগাড়ই তার কাছে খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এর উপরে আছে আত্মীয়-স্বজনদের ঋণ। দালাল হযরত পূর্ব পরিচিত হওয়ায় একবার তার কাছে তিন হাজার টাকা ধার চেয়েছিলেন। কিন্তু তাও সে দেয়নি। তার স্বামীর ভাল কাজেরও ব্যবস্থা করেনি। এখন তাদের কোন খোঁজও নেয় না ওই দালাল। রুমা রানী তার স্বামীকে দেশে ফেরত আনার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তিনি দালাল হযরত আলীর শাস্তি দাবি করেন। হযরত আলীর বাড়ি উপজেলার মাটিকাটা গ্রামে। মাটিকাটা দাখিল মাদ্রাসার সুপারও তিনি। বাহরাইন ও কাতারসহ বিভিন্ন দেশে তিনি লোক পাঠান বলে নিজেই স্বীকার করেছেন। গৌর চন্দ্র শীলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে এক বছরের ভিসায় ইরাক পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার চার লাখ টাকা তুলতে না পেরে ভিসা শেষে তিনি তুরস্ক প্রবেশ করেন। কিন্তু এটা অবৈধ। তাই তাকে গ্রেফতার করেছে তুরস্কের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক্ষেত্রে তার কোন দোষ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
×