ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রামেক হাসপাতাল ;###;ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা

ওয়ার্ড বাড়লেও সঙ্কট জনবলের

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

ওয়ার্ড বাড়লেও সঙ্কট জনবলের

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ জনবল সঙ্কটে ধুঁকছে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। ক্রমান্বয়ে অবকাঠামো, শয্যা ও ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়ানো হলেও বাড়েনি জনবল। জনবল সঙ্কটের কারণে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বেশি রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। এইজন্য সেবার মানও ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রায় রোগীর স্বজনদের সঙ্গে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি জনবল সঙ্কট থাকলেও নতুন নিয়োগ বিধি বাস্তবায়ন না করায় নিয়োগ হচ্ছে না। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৫৫০ শয্যা থেকে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২০০। ৩০টি ওয়ার্ড থেকে বেড়ে বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ার্ড সংখ্যা হয়েছে ৫৭টি। শয্যা ও ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়ানো হলেও সেই অনুপাতে বাড়ানো হয়নি জনবল। ৫৫০ শয্যার অনুমোদিত জনবল দিয়েই চলছে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যেও রয়েছে শূন্যপদও। বর্তমানে ওই হাসপাতালে সরকার অনুমোদিত ১৭৬টি পদ শূন্য রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার (চিকিৎসক) পদ রয়েছে ২৩৩টি। এর মধ্যে ৩০টি পদ শূন্য রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর ৩৬০টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে তিনটি, তৃতীয় শ্রেণীর ১১৮টি পদের মধ্যে ১৭টি ও চতুর্থ শ্রেণীর ৪৩৩টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছেন ১২৬টি। এইসব পদ ছাড়াও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন ১১১ জন শ্রমিক। এর মধ্যে দুই দফায় এমএলএসএসসহ বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগ দেয়া হলেও বাড়ানো হয়নি অন্যান্য পদের সংখ্যা। তারপরও ওয়ার্ড বাড়ানোর পর যে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারমধ্যে বেশিরভাগই বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ফলে আগের ৫৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে ১২০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি। জানা যায়, ২০০৮ সালে সরকারীভাবে রাজস্ব খাতে বিভিন্ন পদে ১৩০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। অথচ নিয়োগ পাওয়ার পরই এক মাসের ব্যবধানে যে যার মতো বদলি নিয়ে চলে গেছেন অন্যত্র। বর্তমানে ১৩০ জনের মধ্যে হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন ৩০ জন কর্মচারী। সূত্র জানায়, রামেক হাসপাতালে বর্তমানে ওয়ার্ড রয়েছে ৫৭টি। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে দুটি অপারেশন থিয়েটার, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি), আইসিইউ, এইচবিইউ, রন্ধনশালা, ব্লাড ব্যাংক, এক্স- রে বিভাগ ও বহিঃবিভাগ। এসব গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডে প্রতি শিফটে কর্মরত রয়েছেন এক থেকে দুজন করে। বিশেষ করে অপারেশন থিয়েটারের মত জায়গায় এমএলএসএস পদে দুইজন করেও পাওয়া যায় না। ওয়ার্ড মাস্টার অফিসের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি ওয়ার্ডে তারা প্রতি শিফটে একজনের বেশি লোক নিয়োগ দিতে পারছেন না। কারণ অনেকেই থাকেন ছুটিতে। এতে প্রতিদিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে লোকবল দিতে হিমশিম খেতে হয় ওয়ার্ড মাস্টারদের। রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, জনবল সঙ্কটের কারণে অতিরিক্ত রোগীর চাপে বেহালদশা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। কাগজ-কলমে ১২০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও হাসপাতালে সবসময় রোগী ভর্তি থাকে ১৮০০ থেকে ২ হাজারের মতো। অনেকসময় রোগীর চাপ সামাল দিতে না পেরে ওয়ার্ডে থাকা কর্মচারীরা রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। প্রায় রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে বাকবিত-া ও হাতাহাতি লেগেই আছে। রোগীর অনুপাতে চিকিৎসক সঙ্কট থাকায় চিকিৎসার জন্য নির্ভর করতে হয় শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ওপর। অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সময় বিরক্তবোধ করেন। অনেক সময় ইন্টার্নি চিকিৎসকরা বিরক্ত হয়ে তাদের জন্য নির্ধারিত রুমের দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন। তবে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে ৬৯৬ জন সিনিয়র নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সিনিয়র নার্স নিয়োগ দেয়ায় চিকিৎসকের ঘাটতি তারাই মেটাচ্ছেন। বেশিরভাগ সময়ই হাসপাতালে প্রফেসরদের নির্দেশনা মেনে ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেন এই নার্সরা। সম্প্রতি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী রয়েছে হাসপাতালে। বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই বেডে আসন না পাওয়ায় রোগীরা হাসপাতালের মেঝেতে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি বেডের চেয়ে সব সময় দ্বিগুণ কখনও কখনও তিনগুণ রোগী থাকেন হাসপাতালে। বেড না পেয়ে অনেকে বারান্দার মেঝেতেও চিকিৎসা নেন। যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এএফএম রফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে যারা টেকনোলজিস্ট তাদের নিয়োগ দেন স্বাস্থ্য অধিদফতর। বাকিদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন নিয়োগ বিধি প্রণয়নের পরই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা হবে। তারপরেও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
×