ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাঠের সীমানায় থাকছে না কোন স্থাপনা

গোলাপবাগ মাঠ খেলার উপযোগী হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

গোলাপবাগ মাঠ খেলার উপযোগী হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ দীর্ঘ বছর পর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহার উপযোগী করে খেলাধুলার জন্য গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্যান্য মাঠের ন্যায় এ মাঠটিতে বা এর আশপাশে কিংবা মাঠের সীমানায় কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করতে দেবে না ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ, যা ডিএসসিসির ইতিহাসে প্রথম। এ মাঠের চারপাশে স্থানীয়দের সকাল-বিকেল হাঁটাহাঁটি ও শুধুমাত্র খেলার জন্যই মাঠটিকে নতুন রূপে তৈরি করা হবে। ২০১৭ সালের মধ্যেই মাঠটিকে সম্পূর্ণ আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন শিশুদের জন্য খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করা হবে ও একই সঙ্গে সংস্থাটির সীমানায় থাকা ৩১টি পার্ক ও মাঠের আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে এ মাঠটি পুনঃসংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) খান মোহাম্মদ বিলাল। ৪ দশমিক ৫২ একর আয়তনের এ গোলাপবাগ মাঠটিই এলাকাবাসীর শিশু-কিশোর ও যুবকদের জন্য একমাত্র খেলার স্থান। এছাড়া এ ওয়ার্ডসহ আশপাশের চারটি ওয়ার্ডে কোন উন্মুক্ত খেলার মাঠ নেই। সূত্র জানায়, নতুন মাঠটিকে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ব্যবহার উপযোগী করার ঘোষণা দেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মাঠে থাকা সকল স্থাপনার ভাঙ্গা সামগ্রী পুরোপুরি সরানোর কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রকল্প অনুযায়ী ব্যবহার উপযোগী করতে কয়েকদিনের মধ্যেই মাঠের মধ্যে কী কী খেলার ব্যবস্থা থাকবে, কত অংশ সবুজায়ন ও কতটুকু অংশ খেলাধুলার জন্য রাখা হবে তার নক্সার কাজ শেষ হবে। এরপরই নক্সা অনুযায়ী কাজ শুরু করতে টেন্ডার আহ্বান করবে ডিএসসিসি। এর পরই মূল কাজ শুরু করা হবে। এজন্য প্রায় এক বছর পর্যন্ত এলাকাবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, মাঠটিকে সম্পূর্ণ সবুজায়নের আওতায় আনা হবে। দখলমুক্ত রাখতে মাঠের চারদিকে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করারও পরিকল্পনা রয়েছে। মাঠের চারদিক সবুজ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ লাগানো হবে। এলাকাবাসীর সকাল-বিকেল হাঁটার জন্য মাঠের চারদিকে ‘ওয়াকওয়ে’ তৈরি করা হবে। বর্তমানে মাঠটির কোথাও কোন সবুজের দেখা না মিললেও মাঠের সব স্থানে ঘাস লাগানো হবে। ফুটবল-ক্রিকেটসহ সব ধরনের খেলার উপযোগী করে এ মাঠটিকে গড়ে তোলা হবে। জানা গেছে, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার তৈরির জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ২০০৬ সালে ডিএসসিসি থেকে তাদের নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি রাখার জন্য ইজারা নেয়। এ কারণে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর বন্ধ থাকার পর ফ্লাইওভারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাঠটি থেকে তাদের সব মালামাল সরিয়ে নেয়া শুরু করেছে। ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ফ্লাইওভারের একাংশের উদ্বোধনের পর তা দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় নির্মাণসামগ্রী পুরোপুরি সরানো সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। এজন্য মাঠ ব্যবহারের সময় বাড়াতে ডিএসসিসির কাছে কয়েক দফা আবেদন করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজন বিবেচনা করে সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয় ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। এর পরই তারা তাদের ব্যবহৃত অফিস ও নির্মাণসামগ্রী সরানো শুরু করে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মাঠটি সম্পূর্ণ খালি করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সরেজমিন গোলাপবাগ মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে ব্যবহার করা বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যেই সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ক্রেন দিয়ে ভারি যন্ত্রাংশ ট্রাকে তোলা হচ্ছে। ফ্লাইওভার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাইট অফিস, কর্মচারীদের থাকার জায়গা বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, মাঠটি ব্যবহার উপযোগী করতে সময় লাগলেও প্রাথমিকভাবে সকল গর্ত ভরাট করে সম্পূর্ণ সমান করে দেয়া হোক। এলিট নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রাথমিকভাবে মাঠটিতে থাকা বড় বড় গর্ত ভরাট করে দিলে এলাকার শিশু-কিশোররা এখনই খেলাধুলার সুযোগ পাবে। তাছাড়া পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের উন্নয়নকাজ চালু রাখতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) খান মোহাম্মদ বিলাল জনকণ্ঠকে বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের চাহিদার প্রেক্ষিতে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ মেয়র সাঈদ খোকনের নির্দেশে গোলাপবাগ মাঠটিকে উক্ত এলাকায় বসবাসরত শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য খুলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সামগ্রী রাখার কারণে দীর্ঘবছর মাঠটির ব্যবহার বন্ধ ছিল। মূলত ডিএসসিসির সীমানায় থাকা ৩১টি পার্ক ও মাঠের আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে মাঠটি পুনঃসংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্যান্য মাঠের ন্যায় এ মাঠটিতে বা এর আশপাশে বা সীমানায় কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করা হবে না। মাঠটিকে সম্পূর্ণ সবুজায়নের আওতায় আনা হবে। দখলমুক্ত রাখতে মাঠের চারদিকে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করারও পরিকল্পনা রয়েছে। মাঠের চারিদিক সবুজ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ লাগানো হবে। এলাকাবাসীর সকাল-বিকেল হাঁটার জন্য মাঠের চারদিকে ‘ওয়াকওয়ে’ তৈরি করা হবে। বর্তমানে মাঠটির কোথাও কোন সবুজের দেখা না মিললেও মাঠের সব স্থানে ঘাস লাগানো হবে। ফুটবল-ক্রিকেটসহ সব ধরনের খেলার উপযোগী করে মাঠটিকে গড়ে তোলা হবে। মাঠটি শুধুমাত্র খেলার জন্যই নতুন রূপে তৈরি করা হবে। ২০১৭ সালের মধ্যেই মাঠটিকে সম্পূর্ণ আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন শিশুদের জন্য খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই মাঠের মধ্যে কী কী খেলার ব্যবস্থা থাকবে, কত অংশ সবুজায়ন ও কতটুকু অংশ খেলাধুলার জন্য রাখা হবে তার নক্সার কাজ শেষ হবে। এর পরই নক্সা অনুযায়ী কাজ শুরু করতে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এর পরই মূল কাজ শুরু করা হবে। এর সুফল পেতে প্রায় এক বছর পর্যন্ত এলাকাবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে।
×