ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নীলুফার বেগম

বাংলাদেশের পরম বন্ধু অঁদ্রে মালরো

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশের পরম বন্ধু অঁদ্রে মালরো

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশ কিছু বিশ্ববরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ফরাসী তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী অঁদ্রে মালরোর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। তিনি বিশ্বজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। এক সময় তিনি স্পেন ও ফ্রান্সের বিপ্লবী মানুষের পক্ষে যুদ্ধও করেছিলেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধ নিয়ে তিনি ‘লেসপোয়ার’ শীর্ষক বিখ্যাত উপন্যাস লিখেছিলেন। ১৯৭১ সালে ৭০ বছর বয়সে অসীম সাহসিকতায় আমাদের দেশের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে অঁদ্রে মালরো মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে তার অংশ নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশের পক্ষে যারা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন তিনি তাদের একজন। ১৯৭৩ সালের ২১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে তিন দিনের সফরে আসেন। ঢাকার বাইরে মালরো যান রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কাপ্তাইয়ে। সেই সফরে তার ঘনিষ্ঠ সাহচর্য পেয়েছিলেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মাহমুদ শাহ কোরেশী। ঢাকায় এসে তিনি শ্রদ্ধা জানান নির্মীয়মাণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে। দেখা করেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এসেছিলেন। যেখানে তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছাত্রদের উদ্দেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ, আজ আমি প্রথমবারের মতো কথা বলছি পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দের সামনে, যাদের শহীদের সংখ্যা অনেক বেশি জীবিতের চেয়ে। ২১ এপ্রিল ১৯৭৩ তার ওই উদ্ধৃতি মালরো বাগানের উদ্বোধনী ফলকে লেখা আছে তার ছবির পাশে ফরাসী ও বাংলা ভাষায়। তার ওই উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে তার দরদী মনের শক্তিশালী সমর্থন কতটা ছিল। তিনি ইহজগতে নেই। ১৯৭৬ সালে মারা যান। কিন্তু বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের পাশ ঘেঁষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চত্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অঁদ্রে মালরো গার্ডেন। ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল ওই গার্ডেন উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সি মাইকেল ট্রিনকুইয়ার, আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের পরিচালক মি. অলিভার লিটভিন। ফ্রান্সের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব মি. বার্নাড হেনরী লেভিও উপস্থিত ছিলেন। এদের নাম ওই ফলকে লেখা আছে অঁদ্রে মালরোর প্রতিকৃতি আঁকিয়ে চিত্রশিল্পীর নামসহ। উল্লেখ্য, ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্র সমালোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের প্যারিসে অবস্থানরত ছোটবোনের ছেলে উপরে উল্লিখিত আলিয়ঁস ফ্রঁসেস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশের চিত্রশিল্পী জলিলুর রাব্বি তামিমকে দিয়ে অঁদ্রে মালরোর প্রতিকৃতি আঁকিয়ে গার্ডেনের স্মৃতিফলকে সন্নিবেশিত করেছেন এর উদ্বোধনী উপলক্ষে। গত ২৩ নবেম্বর ছিল অঁদ্রে মালরোর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ফ্রান্স দূতাবাস, শিল্পকলা একাডেমি ও ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেস আয়োজন করে তিন দিনব্যাপী তার ওপর নানা স্মরণসভা ও অনুষ্ঠান। বিলম্বে হলেও ফ্রান্সের বিশ্বজোড়া খ্যাতিমান ব্যক্তি অঁদ্রে মালরোকে অতি আপন ভেবে অন্তরের অন্তস্তল থেকে কৃতজ্ঞতাসহ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। লেখক : সাবেক যুগ্ম সচিব
×