ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন নিয়ে বাণিজ্য কেন

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

জীবন নিয়ে বাণিজ্য কেন

প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসাকে একটি মহৎ সেবামূলক পেশা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সময়ের আবর্তনে বর্তমানে পেশাটি নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন এখন উঠছে। ডাক্তার যথাযথ নির্দেশনার মাধ্যমে রোগীর শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতাকে কাটিয়ে তুলতে সহায়তা করবেন- সেটাই মানুষের প্রত্যাশা। বাস্তবে আজকাল যা হচ্ছে তা সত্যিই অত্যন্ত দুঃখজনক। এই মহান পেশাটিকে নিয়ে একটি কু-চক্রী মহল গড়ে তুলেছে চিকিৎসা বাণিজ্য যার ভুক্তভোগী সচরাচর জনসাধারণ। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোকে ঘিরে যে ব্যাঙের ছাতার মতো ক্লিনিক কিংবা প্যাথলজিক্যাল ল্যাবগুলো গড়ে উঠেছে এবং তাদের অনেকটা পরোক্ষ চাঁদাবাজির মতো কর্মকা- দেখলে সত্যি গা শিউরে ওঠে। আমাদের দেশের অধিকাংশ রোগীর সঙ্গত কারণেই সরকারী হাসপাতালগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। সুলভ মূল্যে চিকিৎসা, রোগীর স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া আর কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হওয়া- এসবই সাধারণত একজন রোগীর প্রত্যাশা। কিন্তু বর্তমান অবস্থা সম্পূর্ণ এর বিপরীত। সরকারী হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন দিয়ে পাঠিয়ে দেন তাদের চুক্তি করা ক্লিনিকে। আর তাতেই সর্বনাশ। রোগীকে পদে পদে হতে হয় প্রত্যক্ষ হয়রানির শিকার। কারণ সরকারী হাসপাতালে যে টেস্ট করাতে লাগে মাত্র ৫০-১০০ টাকা, প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোয় সেখানে লাগে ৯০০-১০০০ টাকা। এখানেই হয়রানির যাত্রাটা শুরু আর শেষটা হয় প্রেসক্রিপশনে প্রদত্ত নির্দিষ্ট ওষুধ কোম্পানি, প্রাইভেট টেস্ট ল্যাব আর নির্দিষ্ট কুচক্রী মহলের হাতে ধরনার মধ্য দিয়ে। আমাদের দেশের অনেক মানুষ আজকাল নানা রোগে আক্রান্ত। ডাক্তার থেকে সঠিক নির্দেশনা নিয়ে তারা সুস্থ, স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসবেন সেই প্রত্যাশায় মুলত হাসপাতালগুলোতে শরণাপন্ন হন। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে যেমন তিল পরিমাণ জায়গা থাকে না তেমনি ডাক্তারদের হাতেও যেন মুহূর্ত সময় থাকে না। পাছে আবার অন্য একজন রোগী হাতছাড়া হয়ে যায়। আজকাল ডাক্তাররা রোগী কিংবা ক্লায়েন্টদের কাছে এতটাই ব্যস্ততা দেখান যে রোগী তার সমস্যা বলতে শুরু করতে না করতেই ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লেখা শেষ করে ফেলেন। অনেক সময় দেখা যায় এতে করে সমস্যার সমাধান তো হয়ই না উল্টো দুর্ভোগটা বেড়ে যায়। আমাদের দেশের ওষুধের বাজারে নানা রকম বাণিজ্যের মাধ্যমে দুর্নীতি হয়। কোন কোন ওষুধের মান ভাল আবার কোনটির খারাপ। এক্ষেত্রে ডাক্তাররা যদি নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভেজাল কিংবা মানহীন কোন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন তাহলে রোগীদের এর চরম মূল্য দিতে হবে। এমনকি একজন রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং প্রাইভেট ক্লিনিক, প্যাথলজি কিংবা ল্যাবগুলোতে আজকের যে রমরমা বাণিজ্য সেটি বন্ধ করতে হলে কিংবা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হলে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় চিকিৎসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, সেবার মান কমে যাবে, আর রোগীদের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে যাবে। তবে ঘোড়া এখনও লাগাম ছাড়া হয়নি। কাজেই যথাযথ সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনসাধারণের সর্বোপরি রোগীদের আবারও এই মহান পেশার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা হোক- সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। মোঃ রিদওয়ানুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
×