ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীদের সামাজিক অবস্থা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

জঙ্গীদের সামাজিক অবস্থা

দেশ থেকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতা নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতা ও দক্ষতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। নিরন্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা তাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। র‌্যাবের একটি দল উত্তরা ও কলাবাগানে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে আটক করে ১০ সন্দেহভাজন জঙ্গীকে, যাদের মধ্যে রয়েছে একজন নারী। তারা সবাই নব্য জেএমবি গ্রুপের সদস্য। এদের মধ্যে কয়েকজন উত্তরায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষক। কেউ কেউ মালামাল বিক্রেতা, আবার কেউবা হোম ডেলিভারির ব্যবসা করত। এরা সবাই জঙ্গী কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত ও সম্পৃক্ত ছিল না বলে বলা হচ্ছে। তবে অনেকেই শিশু শিক্ষার্থী এবং বিশেষ করে অভিভাবকদের জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করত। তাদের পরিচালিত শিক্ষালয়গুলোতে নিয়মিত হালাকা বা ধর্মীয় পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হতো। দাওয়াতের মাধ্যমে জেএমবির সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করত তারা। ধৃত নারী জঙ্গী স্কুলটির একটি অংশে হজ গমনেচ্ছু নারীদের ক্লাস নিত। নব্য জেএমবির নিহত ও ধৃত নেতাদের সঙ্গে এদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং কারও কারও আত্মীয়তা পর্যন্ত রয়েছে। কেউ কেউ এখনও পলাতক এবং পুলিশ তাদের খুঁজছে। শিশুদের স্কুল ঘিরে জঙ্গী তৎপরতা ও কার্যক্রমের অভিযোগ নতুন নয়। এমনকি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ নর্থ সাউথ, ড্যাফোডিল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরেও জঙ্গী তৎপরতার অভিযোগ আছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ অপেক্ষাকৃত ধনী ও সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরাও জড়িয়ে পড়েছে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে। গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলায় নিহত, ধৃত ও জড়িতদের প্রায় সবাই এর অন্তর্ভুক্ত। নারী ও শিশুরাও জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গী কার্যক্রমে এবং কেউ কেউ হচ্ছে আত্মঘাতী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক একাধিক নারী জঙ্গীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানা যায়, তারা পরিবার বিশেষ করে স্বামী কর্তৃক উদ্বুদ্ধ হয়েছেন জঙ্গীবাদ ও কার্যক্রমে। এ থেকে সহজেই যা বোধগম্য তা হলো, দেশে যে বা যারা ধর্মীয় জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস ছড়ানোর ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত, তারা এক একটি পরিবারকে টার্গেট করে অগ্রসর হচ্ছে। নিজেই শুধু জঙ্গী হচ্ছে না। স্ত্রী ও সন্তানকেও উদ্বুদ্ধ করছে। অনুরূপ চেষ্টা চলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রলুব্ধ করার জন্য। এতে তারা সফলও হচ্ছে। বলা যায়, এটি একটি দীর্ঘকালীন পথ পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া। ধর্মীয় উপাসনালয়ের বাইরে উগ্রপন্থা তথা জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তবে সংগঠন ও কার্যক্রম চালাতে চাই অর্থ ও অস্ত্র। ব্যাপক অনুসন্ধানে এতদিনে প্রমাণিত হয়েছে যে, এ দেশে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদসহ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে একাত্তরে পরাজিত শক্তি পাক বাহিনীর দোসর জামায়াত-শিবির ও আইএসআই। অর্থ ও অস্ত্রের নিরন্তর জোগান দিয়ে চলেছে তারা। একের পর এক বিনিয়োগ করেছে ব্যাংক-বীমা, শিল্পকারখানা, পরিবহন খাত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ওষুধ শিল্প, প্রকাশনা ইত্যাদি খাতে। দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক অর্থ ও অস্ত্রের উৎসও অজানা নয়। এরই একটি অংশ ব্যয়িত হয়েছে ও হচ্ছে গুলশান-শোলাকিয়াসহ বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, জঙ্গী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণেই আছে। যে বা যারা ধরা পড়েনি, তারা রয়েছে নজরদারিতে। তবে জঙ্গীদের অর্থ ও অস্ত্রের উৎস একেবারে নির্মূল করা না গেলে, সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখা শেষ পর্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে বিদেশী সহযোগিতাও নেয়া আবশ্যক।
×