ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গুডবাই ওবামা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

গুডবাই ওবামা

দু’দফায় টানা আট বছর বিশ্বের একমাত্র শক্তিধর দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আর ক’দিন পর তিনি হস্তান্তর করবেন দায়িত্ব। বিদায় নেবেন হোয়াইট হাউস থেকে। রবীন্দ্রনাথকে জানা থাকলে হয়ত তিনি বলতেনও, ‘যাবার দিনে এই কথাটি বলে যেন যাই/যা দেখেছি, যা পেয়েছি তুলনা তার নাই।’ অবশ্যই ছিলেন তিনি অতুলনীয়। মাত্র সাতচল্লিশ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর এখন পঞ্চান্ন বছর বয়সে বিদায়ের বাণী পাঠ করে মার্কিনীদের উদ্দেশে জানালেন, ‘গুডবাই’। আট বছর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা পারি।’ আট বছর শেষে এসে বললেন, ‘হ্যাঁ আমরা পেরেছি। আমরা পারব।’ তার আট বছরের শাসনকালে নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী বারাক হোসেন ওবামা। পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন দেশবাসীকে। রাজনীতি ও বর্ণভিত্তিক বিভাজন অতিক্রম করে অবিভক্ত ও অনেক কম বৈষম্যমূলক এক যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিদায় নেবার আগে স্বীকার করতে বাধ্য হলেন, সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রাখতে পারেননি। দেশ এখনও আগের মতো বিভক্ত। যে বিভক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সম্ভাবনা হুমকির সম্মুখীন। বৈরী কংগ্রেসের বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী বাস্তবায়নের যে দৃঢ়তা ওবামা দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তা বিরল। নিকট ইতিহাস বলছে, পরপর দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্টরা মেয়াদের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে তুলনামূলক শান্ত সময় অতিবাহিত করেন। এ ক্ষেত্রে ওবামা নিরবচ্ছিন্ন স্বস্তি পেয়েছেন, বলা যায় না। দুই মেয়াদে যেসব ইস্যু তাকে ব্যস্ত রেখেছে তার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা, আফগানিস্তান ও ইরাক ইস্যু, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব, মার্কিন-পাকিস্তান-চীননীতি, কিউবার সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি এবং আইএস জঙ্গী ইস্যু। এর বাইরেও লাদেন হত্যাসহ জঙ্গী দমন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পদক্ষেপ, জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় সময়োপযোগী উদ্যোগ, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বাইরের শক্তির হামলা প্রতিরোধসহ বিভিন্ন সাফল্য তার ঝুলিতে রয়েছে। তবে শেষের দিকে ওবামা নতুন কোন রাজনৈতিক বিতর্কে না গিয়ে তার নির্বাচনী ইশতেহারের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ রাখেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কথাটি উচ্চারিত হলেই চোখে ভেসে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিমান এক শাসকের ভাবচ্ছবি। যে শাসক তার ব্যক্তিত্ব, প্রভাব ও কর্মযজ্ঞের কারণে সারাবিশ্বে সবসময় ‘আলোচিত মানুষ’। কখনও কখনও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার ভূমিকা তাকে বিতর্কিত এবং ঘৃণিতও করে তোলে। সেদিক থেকে বলা যায়, ওবামা খুব স্বচ্ছন্দেই, কোন প্রকার ঝাঁজালো বিতর্কের আবর্তে নিজেকে না জড়িয়ে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিতে চলেছেন। খুব কমসংখ্যক প্রেসিডেন্ট এ ধরনের কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের চুয়াল্লিশতম প্রেসিডেন্ট ওবামাকে গুডবাই জানাবে বিশ্ব আর ছ’দিন পর ২০ জানুয়ারি। বিদায়ের আগে তার রাজনৈতিক উত্থানের কেন্দ্রভূমি শিকাগোতে কুড়ি হাজার দশর্কের সামনে আবেগমথিত কণ্ঠে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে রূপান্তরশীল ভিন্ন জাতের রাজনীতিক ওবামা একান্ন মিনিটের ভাষণে বলেছেন, সকলের সমানাধিকার নিশ্চিত করলেই তবেই মার্কিন গণতন্ত্রের অগ্রগতি হবে। মার্কিন মূল্যবোধের ক্ষয়িষ্ণুতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা দেয়ার পাশাপাশি বহির্বিশ্বের আগ্রাসন থেকে সজাগ হয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় আমজনতাকে সচেতন থাকার আবেদন জানিয়ে বলেছেন, এগিয়ে যেতে হলে সকলকে সব রকম বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সতর্ক না হলে গণতন্ত্র সঙ্কটে পড়তে পারে বলে বিদায়বেলায় যে আশঙ্কা উচ্চারিত হয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ। ওবামার উত্তরসূরি ট্রাম্প শপথ নেয়ার পর অবস্থা কি দাঁড়াবে তা নিয়ে বিশ্ববাসীও শঙ্কিত। ওবামা প্রেসিডেনট পদ ছেড়ে গেলেও রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার যে ঘোষণা দেন তা বিশ্ববাসীকে আশ্বস্ত করছে।
×