ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাণক্য বাড়ৈ

কবিতাই নামিয়ে দেয় বুকের ভার

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

কবিতাই নামিয়ে দেয় বুকের ভার

পরম স্থিতি বলে কিছু নেই। ঘুমিয়ে পড়ি, তা-ও ছুটন্ত ট্রেনের পেছনে দৌড়াই। বাসের রেলিং ধরে ঝুলি, তা-ও বাল্যবন্ধুর সঙ্গে ঘুরে আসি আড়ং। ক্লাসে কিউবিজম বোঝার ফাঁকে দেখে আসি মাকে- তিনি উঠোনে ধান নাড়ছেন। মনের এই সতত বিচরণশীলতাই আমাকে কবিতার মুখাপেক্ষী করে। কবিতা হলো অসীম ও সার্বভৌম এক ভুবন, যেখানে বিচরণের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। পুঁজিতন্ত্রের এই যুগে প্রথম প্রশ্ন হতে পারে, কবিতার উপযোগিতা কী- কবিতা অর্থকরী না স্বাস্থ্যকর? আমি বলব, কবিতা কৈশোরের ‘বৌ-চিঁ’ খেলার আনন্দের মতো নির্মল। কেননা, খেলাধুলায় রক্তসঞ্চালন বাড়ে। আর তাতে শরীর হয় হয় সুঠাম। পাশাপাশি অন্য কোন উপকরণের প্রয়োজন পড়ে না বলে টাকাও খরচ হয় না- এ কথা জেনে বা বুঝে কিশোররা বৌ-চিঁ খেলে না, তেমনি আমিও প্রতিদান বিবেচনায় এনে কবিতা লিখি না। তবু কবিতাই আমাকে দেয় সবচেয়ে বড় প্রতিদান। কবিতাই নামিয়ে দেয় বুকের ভার; হাল্কা হই। আর তখনই উড়ন্ত চিলের শরীর থেকে খসে পড়া পালকের মতো বিচরণ করতে থাকি আরাধ্য আকাশে। কী লিখি কবিতায়? মনে করার চেষ্টা করি কলেজ-জীবনের প্রথম দিনটির কথা। সকাল ১০টা থেকে বেলা দুটা পর্যন্ত কতই তো হলো, কিছুই মনে করতে পারি না। এটুকু মনে পড়ে- হঠাৎ সদ্য চেনা এক সতীর্থ এসে বলল, ‘চলো, ছিনেমা দেহি। নতুন অ্যাট্টা ভিলেন আইছে!’ নিত্যদিনের চলায় বলায় এমন কিছু ঘটনা যা মনে দাগ কাটে, তা-ই ভাষা পায় কবিতায়। হ্যাঁ, এমন কিছু থাকে, যা আপাত অর্থে অবাস্তব। তাই তো শুরুতেই মনের ‘বিচরণশীলতা’র কথা বলেছি। কবিতাকে বিচিত্রগামী করার চেষ্টা করি। মনে করি, নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে, আছে প্রপঞ্চের; তবে দুর্বোধ্যতার নয়। প্রথম কবে কবিতায় আক্রান্ত হয়েছিলাম, তা মনে নেই। অনির্ণীত সেই মাহেন্দ্র-মুহূর্ত থেকে বয়ে বেড়াচ্ছি এই দুরারোগ্য অথচ আরামদায়ক ব্যাধি!
×