ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিনেশ মাহাতো

দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা

প্রত্যেকটা মানুষ সমান ভাগ্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। কেউ জন্মগ্রহণ করে সোনার চামচ মুখে নিয়ে, কেউবা জন্মে দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, অনেক মানুষ নিজ পরিশ্রমে তার ভাগ্যকে পরিবর্তন করে ফেলেন। যদিও এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম আমাদের সমাজে। তার পরেও বর্তমানে অনেক নারী নিজ চেষ্টায় বিভিন্নক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। ছেলেদের তুলনায় নারীদের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা অনেক বেশি। তার পরে যদি সে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়, তাহলে তো তার জীবন আরও কঠিন। শুধু আপন ইচ্ছাশক্তির জোরেই এগিয়ে যাওয়া চার নারী শিক্ষার্থীর সংগ্রামমুখর জীবনের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো। এরা হলেনÑ শম্পা পোদ্দার, দিপা প্রামাণিক, দীপ্তি রানী ও প্রীতিলতা ঘোষ বৃষ্টি। চারজনই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। সফল হওয়ার জন্য পরিশ্রম, অনুশীলন আর সংগ্রামের মাধ্যমে এক ধাপ করে এগোনোটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাস করি অদ্ভুত এক জগতে, যেখানে সব সময় প্রতিযোগিতা লেগেই রয়েছে। তাই যারা কখনই নিজের সংকল্প থেকে সরে আসবে না তারাই সফল হবে। শম্পা পোদ্দার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। ছাত্রী হিসেবে তিনি বরাবরই মেধাবী ছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসি- দুটিতেই জিপিএ-৫ পান কোন ধরনের প্রাইভেট কোচিং ছাড়াই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে তিনি নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ চালান। শুধু তাই নয়, তার একমাত্র ভাইকে তিনি ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। তার খরচ, চলার ও পড়ার দিকনির্দেশনাও দেন তিনি। এককথায় ভাইয়ের সবকিছু তিনি দেখাশোনা করে থাকেন। সকালবেলা বিশ্বাবিদ্যালয়ে ক্লাস করে এসে বিকেলে বেরিয়ে পড়তে হয় প্রাইভেট পড়াতে। সন্ধ্যায় ফেরার সময় বাজার করা এবং রাতে নিজের পড়াশোনা। এভাবেই কাটে শম্পা পোদ্দারের প্রতিটি দিন। তিনি যখন অষ্টম বা নবম শ্রেণীতে পড়তেন তখন থেকে তার পরিবারের ইচ্ছা ছিল তাকে বিয়ে দিয়ে দেবে। কেননা পড়ানোর মতো সামর্থ্য তাদের ছিল না। কিন্তু শম্পার স্বপ্ন যে অনেক বড়। তিনি নিজের সংকল্প থেকে কখনও সরে আসেননি। তিনি জানতেন বিয়ে হয়ে গেলে তার স্বপ্নের সমাধি ঘটবে। যেখানে এ রকম দুটি ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ চালাতে একটি সচ্ছল পরিবারের হিমশিম খাওয়ার কথা, সেখানে শম্পা নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ভাইকে নটর ডেম কলেজে পড়াচ্ছেন। শম্পা পোদ্দার শুধু নিজেকে গড়ছেন না, সঙ্গে সঙ্গে একমাত্র ভাইকেও নিজ প্রচেষ্টায় গড়ে তুলছেন। শম্পা যে স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তার সে ইচ্ছা পূরণ হোক আমরা সে প্রত্যাশাই করি। দীপ্তি রানীর জীবনের গল্পটি একটু অন্য রকম। খুব অল্প বয়সে বাবা মারা যান। তারপর তার মা তাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তিল তিল করে গড়ে তোলেন দীপ্তিকে। মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য চালিয়ে যান আপ্রাণ চেষ্টা। দীপ্তিও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের দুঃখ-কষ্ট অনুধাবন করতে পারেন এবং পড়াশোনায় অধিক মনোযোগী হন। তিনি এসএসসিতে জয়পুরহাট সরকারী গার্লস হাই স্কুল থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান এবং এইচএসসিতে জয়পুরহাট সরকারী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পান বাণিজ্য বিভাগ থেকে। এখন তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞানে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনা শেষ করে দীপ্তি রানী তার মায়ের ইচ্ছা পূরণ করুন এবং তার নিজের জীবনেও দীপ্তি ছড়ান এ কামনা করি। শম্পা ও দীপ্তির চেয়ে দীপা প্রামাণিকের জীবনের গল্পটি একটু অন্য রকম। দীপার পরিবারে আর্থিক অভাব ছিল না বা নেই। কিন্তু দীপার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটি যে কারও জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার। তিনিও ছাত্রী হিসেবে খারাপ ছিলেন না। রাজশাহী নিউ ডিগ্রী গবর্নমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তারপর অনার্সে ভর্তি হন রাজশাহী মহিলা কলেজে অর্থনীতি নিয়ে। তার ইচ্ছা ছিল ডিপার্টমেন্টে প্রথম কয়েকজনের মধ্যে থাকা। কিন্তু প্রথম বর্ষের রেজাল্ট বের হলে দেখা যায় দীপা শুধু নিজ ডিপার্টমেন্টেই প্রথম হননি, সারাদেশের প্রথম কয়েকজনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছেন (অর্থাৎ ৪ পয়েন্টের মধ্যে ৩.৬৩ পান, আবার দ্বিতীয় বর্ষেও ৩.৪৫)। এখন তিনি অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরিক্ষার্থী। তৃতীয় বর্ষেও তিনি ভাল ফলপ্রত্যাশী। প্রীতিলতা ঘোষ বৃষ্টি আরেকজন মেধাবী ছাত্রী। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করে ভর্তি হন ফার্মেসিতে। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান তিনি। প্রীতিলতার বাবা-মাও তাকে বিভিন্ন সময় বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার ইচ্ছা পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হওয়া। শম্পার মতোই তার জীবনটাও অনেক সংগ্রামময়।
×