ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

শীতে যেভাবে রক্ষা পায় সবচেয়ে ছোট পাখি

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

শীতে যেভাবে রক্ষা পায় সবচেয়ে ছোট পাখি

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি, হামিংবার্ড। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও সচরাচর এদের দেখা যায় না। তবে শীতকালে ওইসব অঞ্চল অপেক্ষাকৃত বেশি ঠাণ্ডা হওয়ায়, পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চলে যাওয়া শুরু করে। মূলত শীত থেকে রক্ষা পেতে। অরেগন স্টেটের গবেষক এডাম হার্ডলীর প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা গেছে, শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে হামিংবার্ড তার শরীরে এক ধরনের শক্তি সংরক্ষণ করে। যার নাম ‘টরপর’। এর মাধ্যমে হামিংবার্ড তার শরীর উষ্ণ রাখে। গবেষণায় জানা যায়, ‘টরপরে’ থাকা অবস্থায় হামিংবার্ডের শরীরের তাপমাত্রা প্রায় ১০৭ ডিগ্রীর মতো হয়ে থাকে। তবে এটি অতিতাপ। প্রতি সেকেন্ডে অন্তত সত্তরবার ডানা ঝাপটায় হামিংবার্ড। স্বাভাবিকভাবেই এত দ্রুত গতির কারণে অতি তাপে উত্তপ্ত হয়ে যাবার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে না। একটি থার্মাল ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও চিত্রের মাধ্যমেই আবিষ্কৃত হয়েছে হামিংবার্ডের অতিমাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে না যাবার কারণ। হামিংবার্ডের শরীরে উত্তাপ বের করে দেয়ার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এসব রয়েছে তার চোখের পাশে, কাঁধের সংযোগস্থলে, পায়ের এবং পায়ের পাতায়। যখন পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলে শীতের তাপমাত্রা হিমাংকের নিচে থাকে। এ সময় চলে হামিংবার্ডের অঞ্চল ছাড়ার প্রস্তুতি। কেননা, এই ‘টরপরে’ থাকা অবস্থায় তাদের হার্ডবিট ধীর গতিতে চলতে থাকে। তবে শীতে তাদের টিকে থাকার আরও বড় কারণ গবেষণায় জানানো হয়েছে, তা হচ্ছে খাবার। ফুলের মধু হামিংবার্ডের প্রধান খাদ্য। এরা ফুলের সামনে হাওয়ায় ভেসে থেকে ঠোঁট ঢুকিয়ে মধু খায়। তাই শীতে এদের টিকে থাকা সহজ হয়। লম্বা ঠোঁট ফুলের মধ্যে থেকে মধু খেতে সাহায্য করে। তবে মাঝে-মধ্যে ছোট পোকা বা মাকড়সাও খায় এরা। হামিংবার্ডদের খাবার হজম করার ক্ষমতা অবিশ্বাস্যরকম। সারাদিন এরা নিজের শরীরের ওজনের সমান খাবার খায়। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট হামিংবার্ড সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কিউবায়। এদের ওজন দুই গ্রামেরও কম। লম্বায় আড়াই ইঞ্চির বেশি নয়। এদের ডিমের আকৃতি মটর ডালের দানার মতো। হামিংবার্ডের ডিম শুধু এদের চেহারাই নয়, বিজ্ঞানীদেরও অবাক করে দিয়েছে এদের অনেক বৈশিষ্ট্যও। হামিংবার্ড-ই একমাত্র পাখি যারা পেছন দিকেও উড়তে পারে। শীত সহ্য করতে পারে না বলে এদের কিছু প্রজাতি হাজার হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় গরমের দেশে। আবার শীত ফুরোনোর পর ফিরে আসে। হামিংবার্ডের পালকের রং হয় নানা রঙের। সূর্যের আলোয় চকচক করে এদের পালক। আকৃতিতে ছোট হলে কী হবে, এরা খুব সাহসী পাখি। নিজেদের এলাকা দখলে রাখার জন্য এরা বড় বড় পাখিদেরও তাড়া করতে ভয় পায় না। বিপদ দখলে এক রকমের তীক্ষè আওয়াজ করে শত্রুকে ভয় না দেখিয়ে ছাড়ে না। ইতিহাস থেকে জানা যায়, নাবিক কলম্বাস যখন জাহাজে চেপে আমেরিকার উপকূলবর্তী দ্বীপে পৌঁছেছিলেন, তখন এই নতুন দেশের ছোট্ট পাখি দেখে বোকা বনেছিলেন। ফুলের সামনে উড়ে বেড়ানো এ পাখিটিকে দেখে তার সঙ্গীদের অনেকেই অজানা পোকা ভেবে ভুল করেছিলেন। সারা ইউরোপে হামিংবার্ড নামের ছোট্ট এ পাখিটির খবর ছড়িয়ে পড়তে এরপর আর বেশি সময় লাগেনি। হার্মিংবার্ডের রঙিন পালকের লোভে মানুষ এদের শিকার করতে শুরু করে। আর তাই বেশকিছু প্রজাতির হামিংবার্ড পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে আশার কথা একটাই, উত্তরে আলাঙ্কা থেকে দক্ষিণে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত এখনও প্রায় ৩০০’রও বেশি প্রজাতির হামিংবার্ড রয়েছে। সূত্র : বিবিসি
×